Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

মুখে দুর্গন্ধ তৈরি করে যেসব খাবার  

মুখে দুর্গন্ধ তৈরি করে যেসব খাবার  
কিছু খাবার মুখের ভেতরের মাক্রোবায়োমে অসামাঞ্জস্য ঘটিয়ে দুর্গন্ধ তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিওসিএ অর্থডেন্টিক+হোয়াইটেনিং স্টুডিও’র প্রতিষ্ঠাতা ও দন্ত-অস্থি চিকিৎসক এরিন ফ্রনডর্ফ ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “মুখে গন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে বিশাল প্রভাব রাখে কী খাওয়া হচ্ছে।”

খাবার যেভাবে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ তৈরি করে
মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার নানান কারণের মধ্যে একটি হল খাবার। যা ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধিতে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।

ডা. ফ্রনডর্ফ ব্যাখ্যা করেন, “খাওয়ার পর খাবারের ক্ষুদ্রাংশ মুখের ভেতর নানান জায়গায়, যেমন- দাঁত, জিহ্বা, মাড়িতে লেগে থাকে। যা ব্যাক্টেরিয়ার খাবারে পরিণত হয়।”

আর এসব খাবার খেয়ে ব্যাক্টেরিয়া থেকে উৎপন্ন অ্যাসিড মুখে গন্ধ তৈরি করে।

এই ব্যাপারে নিউ ইয়র্ক’য়ের দন্ত-চিকিৎসক মিশেল ওয়েই আরও বলেন, “বিশেষ করে মিষ্টি খাবার এই পরিস্থিতি আরও খারাপ করে।”

শুধু তাই নয়, কিছু খাবার রক্ত প্রবাহে মিশেও মুখে দুর্গন্ধ তৈরি করতে পারে। যে কারণে শ্বাস ফেলার সময় গন্ধ অনুভূত হয়। এমন খাবারের মধ্যে রয়েছে- রসুন, পেঁয়াজ এবং বিশেষ করে সালফার সমৃদ্ধ কয়েক ধরনের মসলা থেকে নিঃশ্বাসে বাজে দুর্গন্ধ হয়- ব্যাখ্যা করেন ডা. ফ্রনডর্ফ।

যেসব খাবার ও পানীয় দু্র্গন্ধ তৈরিতে ভূমিকা রাখে
মিষ্টি ও উচ্চমা্ত্রায় কার্বোহাইড্রেইট সমৃদ্ধ খাবার মুখে বাজে গন্ধ তৈরি করতে ভূমিকা রাখে। এগুলো দাঁতে ‘প্লাক’ সৃষ্টি করে”- ব্যাখ্যা করেন ডা. ফ্রনডর্ফ।
মুখের লালা উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে ক্যাফেইন ও কফি। যে কারণে ব্যাক্টেরিয়া থেকে তৈরি হওয়া দুর্গন্ধ আরও বেড়ে যায়।
রসুন ও পেঁয়াজে সালফার যৌগ থাকে, যা শুধু মুখেই গন্ধ তৈরি করে না বরং খাওয়ার পর রক্তের সাথে মেশে। ফলে প্রতিবার নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় সেই গন্ধ বাজে ভাবে বের হয়।
অ্যালকোহল মুখে গন্ধ তৈরি করে। কারণ কফির মতো এই পানীয় মুখ শুষ্ক করে ব্যাক্টেরিয়ার বিস্তার বাড়িয়ে দেয়।
ডা. ওয়েই’য়ের মতে, দুগ্ধজাত খাবার যেমন- দুধ ও পনির মুখে দেওয়ার পর ব্যাক্টেরিয়ার সংস্পর্শে এসে বাজে গন্ধ তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
“ঝাল ও মসলাদার খাবার হজমে প্রচণ্ড প্রভাব ফেলে। যে কারণে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। এই ধরনের খাবার পেটে গ্যাস তৈরি করে, যা ওপরের দিকে উঠে মুখে বাজে গন্ধ তৈরি করে। বিশেষ করে ঝালের উপাদান ‘ক্যাপসাইসিন’ গ্যাস্ট্রিকের কার্যকারিতা বাড়ায়”- ব্যাখ্যা করেন ডা. ওয়েই।
যদি ঠিক মতো হজম না হয় তবে মাছের প্রোটিন নিঃশ্বাসে বাজে গন্ধ তৈরিতে ভূমিকা রাখে। ‘আমেরিকান সোসাইটি অফ নিউট্রিশন’য়ের তথ্যানুসারে মাছে থাকা ‘ট্রাইমথাইলামিন’ রাসায়নিক এই কাণ্ড ঘটায়।

যেসব খাবার মুখে ভালো গন্ধ তৈরি করতে পারে
মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখা ছাড়াও কিছু খাবার ও পানীয় নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূরে রাখতে সাহায্য করে।

মচমচে ফল ও সবজি: ডা. ওয়েই’য়ের মতে- আপেল, গাজরসহ এই ধরনের কচকচে সবজি ও ফল মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে পারে।

তিনি বলেন, “এসব খাবার মুখে লালার পরিমাণ বাড়ায় যা ব্যাক্টেরিয়া থেকে সৃষ্ট অ্যাসিড ও খাবারের কণা দূর করতে অপরিহার্য। এছাড়া লালাতে থাকা খনিজ দাঁতের এনামেল রক্ষা করে।

স্ট্রবেরি, তরমুজ ও আপেল খাওয়ার প্রতি জোর দেন ডা. ফ্রনডর্ফ।

তার কথায়, এসবে থাকা ম্যালিক অ্যাসিড দাঁতের দাগ দূরে রেখে উজ্জ্বল করে ও লালার উৎপাদন বাড়ায়। এছাড়া পত্রল সবজিও মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “গাঢ় পত্রল শাকে থাকা ক্যালসিয়াম ক্ষতিকর অ্যাসিড দূর আর প্রয়োজনীয় ফলিক অ্যাসিড প্রদান করে যা মাড়ির কোষ তৈরিতে প্রয়োজন।”

ভিটামিন সি যুক্ত খাবার, যেমন- বেরি, লাল মরিচ, ব্রকলি, ফুটি, কমলা ইত্যাদি মুখে ব্যাক্টেরিয়া রোধী পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

আদা: ব্যাক্টেরিয়ার কারণে হওয়া কিছু দুর্গন্ধ দূর করতে পারে এই মসলা- মন্তব্য করেন ডা. ফ্রনডর্ফ। এতে থাকা ছয়টি জিঞ্জেরল’ উপাদান এঞ্জাইমের উৎপাদন বাড়িয়ে প্রাকৃতিকভাবে দুর্গন্ধ তৈরিকারী ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করতে পারে।

প্রো-বায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার: যেমন- দই মুখের স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে পারে ও ভালো ব্যাক্টেরিয়া তৈরিতে ভূমিকা রাখে।

নানান ধরনের মসলা: পার্সলে’তে থাকা ক্লোরোফিল বাজে গন্ধ তৈরির ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে- জানান ডা. ফ্রনডর্ফ।

এছাড়া পুদিনা, ধনিয়া, মৌরি, লবঙ্গ এগুলো মুখের সুগন্ধ বজায় রাখতে পারে।

মিষ্টিহীন চুইংগাম: চুইংগাম চাবালে মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার সুযোগ পায় না। তবে সেটা হতে হবে চিনি বিহীন।

খাবার খাওয়ার পর ২০ মিনিট চিনিহীন চুইংগাম চাবানোর পরামর্শ দেন এই দুই চিকিৎসক। এর ফলে মুখে লালা উৎপাদন বাড়ে যা খাবারের কণা পরিষ্কারের পাশাপাশি ব্যাক্টেরিয়ার অ্যাসিড উৎপাদন নিষ্কৃয় করতে পারে।

গ্রিন টি: এই পানীয়তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ‘পলিফেনল্স’ মুখের ব্যাক্টেরিয়ার উৎপাদন কমায়। আর প্রদাহরোধী উপাদান থাকায় মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে- জানান ডা. ওয়েই।

পানি: সাধারণ পানিও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে ভূমিকা রাখে।

ডা. ওয়েই বলেন, “পর্যাপ্ত পানি পানের মাধ্যমে আর্দ্র থাকা যায়। পাশাপাশি পানি মুখের ভেতর লেগে থাকা খাদ্যকণা পরিষ্কার করে। লালার পরিমাণ বাড়ায়। যা স্বাস্থ্যকর মুখের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন।”

মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার প্রধান কারণ
খাবার থেকে মুখে ও নিঃশ্বাসে বাজে গন্ধ হলেও প্রধান কারণ হল মুখের স্বাস্থ্য ঠিক না থাকা।

ডা. ফ্রনডর্ফ বলেন, “নিয়মিত ঠিকভাবে মুখ পরিষ্কার না করার ফলে আঠালো ব্যাক্টেরিয়া জন্মাতে থাকে দাঁতের ফাঁকে- যাকে বলা হয় প্লাক। এছাড়া জিহ্বা ও টনসিল’য়ে খাবারের কণা আটকিয়ে বাজে দুর্গন্ধ তৈরি করে।”

মুখ শুকানোর সমস্যা থাকলেও দুর্গন্ধ হয়।

এই চিকিৎসক বলেন, “খাদ্যকণা দূর করে লালা মুখের স্ব-পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। তাই লালা উৎপাদন কমে গেলে মুখ শুষ্ক হয়ে যায় আর খাবারের সাথে ব্যাক্টেরিয়ার বিক্রিয়াতে মুখে দুর্গন্ধ হওয়া শুরু করে।”

তাই রাতে মুখ ভালো মতো পরিষ্কার না করলে সকালে ঘুম থেকে উঠে বাজে গন্ধ বেশি হয়। এছাড়াও নানান দীর্ঘমেয়াদী রোগের কারণেও মুখে ও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে।

কমেন্ট বক্স