Thikana News
০৬ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪
গবেষণায় তথ্য

আড়াই হাজার বছর আগে শক্তিশালী ভূমিকম্প পাল্টে দেয় গঙ্গার গতিপথ

আড়াই হাজার বছর আগে শক্তিশালী ভূমিকম্প পাল্টে দেয় গঙ্গার গতিপথ
নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে আড়াই হাজার বছর আগে বড় মাত্রার এক ভূমিকম্প গঙ্গা নদীর গতিপথ পাল্টে দিয়েছে। ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৫ বা ৮। এর ফলে যে তীব্র ঝাঁকুনি সৃষ্টি হয় তাতে আকস্মিকভাবে পাল্টে যায় গঙ্গার চলার পথ। ন্যাচার কমিউনিকেশন জার্নালে সোমবার প্রকাশিত এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন লাইভ সায়েন্স। এতে বলা হয়, গঙ্গার মূল প্রবাহ ভূমিকম্পের উৎস থেকে ১১০ মাইলের বেশি দূরে থাকলেও তা বিচ্যুত হয়। আকস্মিক কোনো নদীর গতি পরিবর্তনকে বিচ্যুতি বা অ্যাভালশন বলে। এর আগে গবেষকরা প্রামাণ্য আকারে দেখিয়েছেন যে, সিসমিক কারণে বা ভূমির কম্পনে এই ঘটনা ঘটে। নিউইয়র্কে কলাম্বিয়া ক্লাইমেট স্কুলের ল্যামন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজার্ভেটরির ভূ-পদার্থবিদ ও গবেষক, প্রফেসর মাইকেল স্টেকলার এই গবেষণার সহ-লেখক। তিনি বলেছেন, আমি মনে করি না যে, এত বড় বিচ্যুতি আর আগে আমরা কখনও দেখেছি।
    
বিশ্বে সবচেয়ে বড় নদীগুলোর অন্যতম গঙ্গা। এই নদী প্রবাহিত হয়েছে প্রায় ১৬০০ মাইল। এর সূত্রপাত হিমালয়ে ভারত ও চীন সীমান্তের মধ্যবর্তী স্থানে। তারপর তা পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা সহ কতগুলো বড় বড় নদীর সঙ্গে সে মিশে গেছে। পানির এই সম্মিলিত ধারা বিশ্বে সবচেয়ে বড় ব-দ্বীপ সৃষ্টি করেছে। তারপর তা বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পতিত হয়েছে। অন্য বড় বড় ব-দ্বীপের মতো এই বঙ্গেয় ব-দ্বীপ সৃষ্টি করে গঙ্গাও তার গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। এক্ষেত্রে অনেক সময় ভূমিকম্পের সহায়তা ছাড়াও তা করতে পারে। কারণ, নদীর তলদেশে আস্তে আস্তে পলিমাটি জমা পড়ে নদীর গতিপথ পাল্টে দিতে পারে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো একটি স্থানে এতটাই পলি জমে যে তা আশপাশের ভূমির চেয়ে বেশি দীর্ঘ হয়ে থাকে। এ অবস্থায় নদী ভাগ হয়ে যায় এবং তার নতুন পথে নিজেকে ধাবিত করে। যখন এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে অনেক বছর বা কয়েক দশক লেগে যেতে পারে, তখন ভূমিকম্প একটি নদীকে তাৎক্ষণিকভাবে বা তার আগে পরে গতিপথ পরিবর্তন করে দিতে পারে বলে মনে করেন স্টেকলার। নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিঙ্গেন ইউনিভার্সিটির জিও-ক্রোনোলজিস্ট এবং সহযোগী প্রফেসর এবং এই গবেষণার প্রধান লেখক লিজ চেম্বারলেইন বলেন, এর আগে এটা নিশ্চিত ছিল না যে, ভূমিকম্প ব-দ্বীপে নদীর গতি পরিবর্তন করে দিতে পারে, বিশেষ করে গঙ্গার মতো তীব্র গতিসম্পন্ন নদী।
স্যাটেলাইটে পাওয়া ছবিতে বিজ্ঞানীরা প্রথমে ক্লু পেয়েছেন যে, অতীতে খুবই ভয়ঙ্করভাবে গঙ্গা তার গতিপথ পাল্টে ফেলেছে। চেম্বারলেইন এবং তার সহকর্মীরা দেখতে পেয়েছেন যে, একটি পুরনো নদী ঢাকার দক্ষিণে প্রায় ৬২ মাইল গঙ্গার সঙ্গে সমান্তরালভাবে প্রবাহিত হয়েছে। এরপরই তারা এ অঞ্চলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন বিষয়ে আরও তথ্য তালাশে লেগে যান। বিভিন্ন স্থানে মাটির গভীরে বালুর বিভিন্ন স্তর দেখতে পান। এসব স্তরকে তারা সিসমাইটস হিসেবে শনাক্ত করেন। এটি হলো উল্লম্ব বরাবর বালুর স্তর,যা পানির স্তরকে ভূমিকম্পের সময় সৃষ্টি হয়। তা সৃষ্টি হয় একটি একক ইভেন্টে। একক ইভেন্টে সৃষ্ট বালু এবং মাটি নিয়ে রাসায়নিক বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাতে তারা তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন যে, ওই ইভেন্ট সৃষ্টি হয়েছিল ২৫০০ বছর আগে। তা ছিল একটি প্রকাণ্ড ভূমিকম্প। গবেষণায় বলা হয়েছে, দুটি আলাদা ম্যাকানিজম এই ভূমিকম্প সৃষ্টি করে থাকতে পারে। প্রথমটি হলো ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শিলং ম্যাসিফ সিসমিক্যালি একটিভ জোন। দ্বিতীয়টি হলো বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিচ দিয়ে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূতলে অবস্থিত প্লেটের পাশাপাশি ও উপর নিচ সঞ্চালন। এই গবেষণায় বলা হয়, এর কারণে ৭.৫ বা ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে গঙ্গা তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে। ২০১৬ সালে স্টেকলারের নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে শিলং মাসিফ এবং ইন্দো-বার্মান সাবডাকশন জোন আবারও একই মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে। এমন ভূমিকম্প হলে তাতে প্রায় ১৪ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স