দেখতে দেখতে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলস ৫০ বছর পূর্তি করল। নানা চড়াই-উতরাই পার করেই এ পর্যন্ত এসেছে তারা। অনেক জনপ্রিয় শিল্পীরা একসময় সোলসের ছিলেন। তারা নিজেদের ব্যক্তিগত কারণে সোলস ছেড়েছেন কেউবা হয়েছেন প্রবাসী। কিন্তু সোলস তার মহিমায় আজও উজ্জ্বল। প্রতাপের সঙ্গে তারা এখনো আধিপত্য বজায় রেখেছে। সোলসের পক্ষ থেকে দর্শক-শ্রোতাকে উপহার দেওয়া হয়েছে একের পর এক জনপ্রিয় গান। ফলে দর্শক-শ্রোতার ভালোবাসা একদিনের জন্যও হারাতে হয়নি। বরং জনপ্রিয়তা অটুট রেখেই তা বাড়িয়ে তুলেছে। এখন সোলসের ভোকাল হিসেবে গাইছেন পার্থ বড়ুয়া। তিনি ব্যান্ডটির ঐক্য ধরে রেখেছেন এবং গান গেয়ে চলেছেন। তার নেতৃত্বে সোলস এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন গানও উপহার দিচ্ছে।
সোলসের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তারা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কনসার্টে অংশ নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে তারা এখন যুক্তরাষ্ট্র সফর করছে। বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছে। ২ জুন জ্যামাইকার দ্য সেন্ট লুইস মেরি একাডেমির হলে সোলসের ‘লাইভ ইন কনসার্ট’ অনুষ্ঠিত হয়। কনসার্টে সোলসের একক সংগীত পরিবেশনা ছিল। সেই সঙ্গে ছিল সোলসের একসময়ের ভোকালিস্ট তাজুল ইমামের গান। তিনিও মঞ্চে একটি সংগীত পরিবেশন করেছেন। পাশাপাশি পার্থ বড়ুয়ার সঙ্গে ডুয়েট করেছেন। বাকি সব গান একাই করেছেন পার্থ বড়ুয়া। তিনি যখন মঞ্চে একের পর এক সংগীত পরিবেশন করতে থাকেন, তখন দর্শকেরা তার সঙ্গে সঙ্গে গান করতে থাকেন। ‘কেন এই নিঃসঙ্গতা’, ‘কেন এই মৌনতা’, ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, ‘মেলায় যাইরে’, ‘ঘুমভাঙা শহরে’, ‘এই মুখরিত জীবনের’, ‘রিমঝিম বৃষ্টি ঝরে’, ‘ব্যস্ততা আমাকে দেয় না অবসর’ গানগুলো দর্শক-শ্রোতাকে নিয়ে যায় পুরোনো দিনগুলোতে। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে সোলসের ভোকাল গীতিকার তাজুল ইমামকে মঞ্চে ডেকে নেন পার্থ।  তাজুল ইমাম সোলস ও পার্থ বড়ুয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাকে গান করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি তিনি পার্থর গানের স্বতঃস্ফূর্ততা, ধৈর্য এবং অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীলভাবে একের পর কোনো ক্লান্তি ছাড়া গান পরিবেশন করায় প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি পার্থ একের পর এক গান করে যাচ্ছেন। আর দর্শকেরা তার সঙ্গে গাইছেন। একজন শিল্পীকে ও একটি ব্যান্ডকে মানুষ কতটা ভালোবাসলে এমনটা হতে পারে। সোলসের জনপ্রিয়তা অটুট দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। সোলসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পার্থকে ধন্যবাদ। তিনি পার্থকে বুকে আগলে ধরেন। আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তিনি সোলসের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
পার্থ বড়ুয়া সন্ধ্যা আটটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত সামান্য বিরতি নিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন। তাকে দেখার জন্য ও তার গান শোনার জন্য নিউইয়র্কের সোলসপ্রেমী ও সংগীতপ্রেমীরা যেন একত্রিত হয়েছিলেন। ছেলে, বুড়ো, নারী, পুরুষ, কিশোর, তরুণ সব বয়সী দর্শক ছিলেন। এ ধরনের দর্শক খুব কম অনুষ্ঠানেই দেখা যায়। এত দর্শক দেখে মুগ্ধ হন সোলসের পার্থসহ অন্য সদস্যরা। পার্থ এ জন্য দর্শকদের ধন্যবাদ দেন। তিনি যখন গানের একটি লাইন গাইছিলেন, তার পরের লাইনটি দর্শকেরা গেয়েছেন। একসময় সোলসের গানের সময় যখন শেষ হয়ে আসছিল, তখন আর দর্শকদের নিজ নিজ আসনে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। বেশির ভাগ দর্শক মঞ্চের সামনে চলে যান। তারা সেখানে সোলসের সঙ্গে গান করেছেন, নেচেছেন। অনেকেই মোবাইল ফোনে ভিডিও করেছেন। কেউ কেউ লাইভ করেছেন। পার্থ বড়ুয়া নিজেও তার পরিবেশনা শেষে দর্শকদের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন নিজের মোবাইল ফোনে। অনেক দর্শকের সঙ্গে মঞ্চ থেকে হাত মিলিয়েছেন। ‘মেলায় যাইরে’ গানটি দিয়ে তিনি ঘড়ির কাঁটায় সময় যখন এগারোটা ছুঁই, তখন তার পরিবেশনা শেষ করেন।
সোলসের কনসার্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার প্রেজেন্ট, পাওয়ার্ড বাই রিভারটেল, গ্র্যান্ড স্পন্সর উৎসব.কম, সেভ দ্য স্মাইল। গ্র্যান্ড স্পন্সর ছিল নুরুল আজম, মোহাম্মদ বি হোসেন বেলাল। অনুষ্ঠানের টিকিট ছিল ৫০, ১০০ ও ২০০ ডলার। দ্য মেরি লুইস একাডেমির অডিটরিয়ামে ছয় শতাধিক মানুষের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে সব আসন রাত নয়টার পর কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। অনেক দর্শক মঞ্চের সামনের শেষে এবং দুই দিকে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে দেশি মিউজিক অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট এনওয়াই ইনক এবং গ্যালাক্সি মিডিয়া। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল সাপ্তাহিক ঠিকানা, আজকাল, প্রিন্ট পার্টনার ছিল আই হপ। তাদের সবার সম্মিলিত আয়োজনে অনুষ্ঠানটি সফল হয়। মঞ্চসজ্জা, আলোকসজ্জা, সাউন্ড সবকিছু ছিল এককথায় চমৎকার। সোলসের ব্র্যান্ডের অন্য সহযোগীদের বাদ্যযন্ত্রের মূর্ছনায় অনুষ্ঠানটি আরও সফল ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। পার্থ পড়ুয়া সবার সঙ্গে তার সহকর্মীদের পরিচয় করিয়ে দেন এবং তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কে নিযুক্ত বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা। তিনি সবার হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অন্য সময়ে আয়োজকদের পক্ষ থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়, এবার ব্যতিক্রম, সোলসের পক্ষ থেকে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে আয়োজকদের। সোলসের পার্থ বড়ুয়া বলেন, সব সময় আমাদেরকে পুরস্কার দেওয়া হয়, এবার আমরা আয়োজকদের পুরস্কার দিচ্ছি, এটা ব্যতিক্রম। পার্থ বড়ুয়া ও মো. নাজমুল হুদা পুরস্কার তুলে দেন তাজুল ইমাম, রায়হান জামান, নুরুল আজিম, শাহনেওয়াজ, রিভারটেলের সিইও রুহিন হোসেন ও গ্যালাক্সি মিডিয়ার বদরুদ্দোজা সাগরের হাতে।
অনুষ্ঠানে কমিউনিটির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে যান। সোলসের কনসার্টকে ঘিরে মেলারও আয়োজন করা হয়েছিল। মেলায় বিভিন্ন স্টল অংশ নেয়। এতে ভালো বেচাকেনাও হয়েছে। মেলায় আসার পাশাপাশি দর্শকেরা গান উপভোগ করেছেন। সব মিলিয়ে এটি ছিল অনন্য এক আয়োজন। দর্শকেরা রাত এগারোটার দিকে একরাশ হাসি আর আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
                           
                           
                            
                       
     
  
 

 ঠিকানা রিপোর্ট
 ঠিকানা রিপোর্ট  
                                
 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                
