সবাই এখন আওয়ামী লীগ করতে চায়। কিন্তু আমাদেরকে হিসাব করে নৌকায় যাত্রী উঠাতে হবে। কারণ বেশি যাত্রী উঠলে নৌকা ডুবে যেতে পারে- এটাও স্মরণ রাখতে হবে। গত ৩০ মে সন্ধ্যায় গুলশান টেরেসে নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রবাসীদেরও সহযোগিতার প্রয়োজন। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আজ ৩০ মে বিএনপি দেশ-বিদেশে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুদিবস পালন করছেন। জিয়ার মৃত্যুতে তার পরিবারই বেশি লাভবান হয়েছেন। তা না হলে সোয়া দুই বছর ক্ষমতায় থেকেও তারা জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচার করলেন না কেন। নিশ্চয় ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’।
জিয়া হত্যাকাণ্ডে তার কাছের ও পরিবারের কারো হাত ছিল কি না সে প্রশ্নও তুলে এই হত্যাকাণ্ডের প্রথম প্রতিবাদ আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাই জানিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, জিয়া হত্যায় তার পরিবার যেভাবে লাভবান হয়েছিল, তা নজিরবিহীন। বেগম জিয়া পেয়েছিলেন ৭ একর জমির ওপর বাড়ি ও বিপুল ব্যাংক সুবিধা আর জাতিকে দেখানো জিয়াউর রহমানের ছেঁড়া গেঞ্জি আর ভাঙা সুটকেস থেকে পরে বেরিয়ে এসেছিল বহু জাহাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্য।
তিনি আরো বলেন, গত নির্বাচনের পর বিশ্ব সম্প্রদায় নতুন সরকারকে কী বলে বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে ছিল। এ পর্যন্ত ৮০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এটা দেখে বিএনপি আর কোন কথা বলেন না।
তিনি বলেন আমার ঠিকানা সরকার না, আমার ঠিকানা হলো দল। আর বিএনপির বিএনপির ঠিকানা কই? তাদের ঠিকানা নয়া পল্টন, আর রাতে বিভিন্ন অ্যাম্বেসি। দেশের মানুষের সাথে তাদের কোনো দেন-দরবার নেই। ক্ষমতার মালিক কোনো বিদেশি রাষ্ট্র নয়, কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা নয়। দেশের জনগণই ক্ষমতার মালিক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশে বসে বিএনপি-জামাতের এজেন্টরা দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে অব্যাহত ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন। তদের এসব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। এসব ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর, স্টেট সিনেটরসহ আইন প্রণেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। প্রয়োজনে পাল্টা এজেন্ট নিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের কাছে শেখ হাসিনার সরকারের ১৫ বছরের কর্মকান্ডসহ দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরারও আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, বিএনপির নেতারা ঢাকা ফ্লাইওভার আর পদ্মা সেতু দিয়ে পার হয়ে বলেন দেশে কোন উন্নয়ন হয় নাই। তারা দেশের কোন উন্নয়নেই দেখতে পান না। যারা চোখ থাকতে অন্ধ, আর কান থাকতে বধির। তাদের আল্লাহ যেনো হেদায়েত করেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি ঢাকা-নিউইয়র্ক ফের বিমান চলাচল প্রসঙ্গে বলেন, এ বিষয় নিয়ে সরকার কাজ করছে। শিগিগির একটি ভালো খবর জানতে পারবেন। এছাড়াও দূতাবাস কর্মকর্তারা জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। যত দ্রুত সম্ভব দূতাবাস থেকে প্রবাসীদেরকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান মিয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমলের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ, নিজাম চৌধুরী, এম ফজলুর রহমান ও এমদাদ চৌধুরী প্রমুখ।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস মোহাম্মদ ইমরান, নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা, ডেপুটি কনসাল জেনারেল এসএম নাজমুল হাসান, বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন, দূতাবাস, কনস্যুলেটের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কানেকটিকাট, নিউজার্সি, পেনসিনভানিয়া, নিউ ইংল্যান্ড, ওয়াশিংটন মেট্রো স্টেট আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনেই ‘নো মোর সিদ্দিক’ স্লোগান
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সামনে নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বিরোধী স্লোগান দিয়েছে নেতাকর্মীরা।
গত ৩০ মে বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের গুলশান টেরেসের মিলনায়তনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক মতবিনিময় সমাবেশে নো মোর সিদ্দিক স্লোগানের ঝড় তুলেন নেতাকর্মীরা। এর মাধ্যমে নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে।
পূর্ব ঘোষিত এই মতবিনিময় সভায় অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এতে উপস্থিত ছিলেন দেশটিতে বসবাসরত আওয়ামী লীগ কর্মী সমর্থক ও নেতৃবৃন্দ। নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সভায় বক্তব্য রাখতে গেলে নো মোর সিদ্দিক স্লোগান দিতে থাকে কর্মী সমর্থকরা। এতে বিব্রত হন স্বয়ং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। পরবর্তীতে সিদ্দিকুর রহমান দ্রুত বক্তব্য শেষ করে মঞ্চ ত্যাগ করেন।
এদিকে সভায় বক্তব্য প্রদান কালে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে বিভিন্নমুখী কোন্দলের প্রতি ইঙ্গিত করে হাসান মাহমুদ বলেন, নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকাটা স্বাভাবিক। তবে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধে কাজ করতে হবে। সংগঠনের নেতা-কর্মীদের এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগ নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপির সঙ্গে ম্যানহাটনে মিলিনিয়াম হোটেলে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। এর আগে ৩০ মে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্দেশিত শূন্যস্থান পূরণ পদে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেসব নেতাকর্মীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা পোষণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এরই ধারাবাহিকতায় ৩১ মে শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীরা।
এ সময় ড. হাছান মাহমুদ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সুন্দও, সুশৃঙ্খল একটা মিটিং করার জন্য আপনিসহ আপনার নেতাকর্মীদের অনেক ধন্যবাদ। তিনি বলেন, সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের জন্য কাজ করতে হবে এবং দলের পাশাপাশি মূলধারার রাজনীতিতে আমাদের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ করতে হবে। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. মাসুদুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আমিন বাবু, দুরুদ মিয়া (রনেল) ও তারিকুল হায়দার চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুল হামিদ, প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক নাফিকুর রহমান (তুরান), কার্যনির্বাহী সদস্য সাহানারা রহমান, সদস্য বদরুজ্জামান (পান্না) প্রমুখ।