বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সম্প্রতি গঠিত নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সোসাইটির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি, ট্রাস্টি বোর্ডও নির্বাচন করার জন্য কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনির নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন পরিকল্পনা করছেন কীভাবে নির্বাচন করবে এবং কত তারিখে করবে। বাংলাদেশ সোসাইটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনটি অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এদিকে ভোট করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভোটার তালিকা। এখন ভোটার তালিকা তৈরির জন্য ভোটার নিবন্ধনের কাজ চলছে। গতবার বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন নিয়ে নানা জটিলতার কারণে ও বারবার নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। ফলে গত নির্বাচনে সাড়ে সাতাশ হাজার ভোটার থাকার পরও ভোটার উপস্থিতি তেমন ছিল না। এবারও অনেকেই আগের বারের মতো সমস্যা ও জটিলতা হয় কি না, সেই শঙ্কায় আছেন। ফলে এখনো অনেকেই ভোটার হননি। বাংলাদেশ সোসাইটির নেতারা জানিয়েছেন, কমিউনিটির বিভিন্ন মানুষ যারা বাংলাদেশি কিন্তু আমেরিকান সিটিজেন, তারাই এই নির্বাচনে ভোটার হতে পারবেন। চলতি মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে ভোটার হওয়া যাবে। সাধারণ সদস্য হলে ২০ ডলার ফি দিতে হবে। আর আজীবন সদস্য হতে হলে আজীবন সদস্য ফি দিয়ে ভোটার হতে পারবেন। ভোটার সংগ্রহ অভিযান অব্যাহত রেখেছেন বাংলাদেশ সোসাইটির নেতারা। বিভিন্ন বরোতে ভোটার নিবন্ধন অনুষ্ঠানও করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সোসাইটির নেতারা আশা করছেন, এখনো যে সময় আছে, তাতে আরও মানুষ ভোটার হবে।
বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়ার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোটার সংগ্রহ অভিযান চলছে। আমরা সাড়া পাচ্ছি। তবে এখনো অনেকেই ভোটার হননি। যারা ভোটার হননি তাদেরকে বলব, ৩০ জুনের আগেই আপনারা ভোটার হোন।
সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী বলেন, আমরা ভোটার সংগ্রহ করছি। ভোটার হওয়ার সুযোগ থাকবে ৩০ জুন পর্যন্ত। আমরা এখনো হিসাব করে দেখিনি এ পর্যন্ত কতজন ভোটার হয়েছেন। এ কারণে এই মুহূর্তে সঠিক সংখ্যা বলতে পারছি না। তবে এখনো সময় আছে ভোটার হওয়ার। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আশা করা যায় ভোটার হতে আগ্রহীরা ভোটার হবেন।
সোসাইটির প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ বলেন, ভোটার তৈরির কাজ চলছে। আমরা আশা করছি, এখনো যারা ভোটার হননি, তারা ভোটার হবেন। গত বছর ভোটার ছিল সাড়ে সাতাশ হাজারের বেশি। এবারও টার্গেট আছে সেই রকম সংখ্যক কিংবা এর বেশি ভোটার হবে। আমরা অপেক্ষা করছি। তবে আরও কয়েক দিন গেলে বোঝা যাবে কেমন সংখ্যক ভোটার হচ্ছেন।
এদিকে একদিকে ভোটার করার প্রক্রিয়া চলছে, অন্যদিকে নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন তাদের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে। কে কার প্যানেলে থাকবেন, সেটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। প্রার্থী করার ক্ষেত্রে নির্বাচনের পেছনে যারা কলকাঠি নাড়েন কিংবা যারা মনে করেন সোসাইটির নেতৃত্ব তাদের কাছের ও নিকটজনের কাছে থাকবে, তারা সব সময়ই নির্বাচনে সক্রিয় থাকেন। এবারও তারা ইতিমধ্যে সক্রিয় হয়েছেন। আর কুশীলবরা নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে করে নির্বাচনে তাদের প্রার্থীরা জয়ী হতে পারেন। সময় গেলে তারা আরও সক্রিয় হয়ে উঠবেন বলে জানান সোসাইটির একজন নেতা। তিনি বলেন, কুশীলবরা নির্বাচন এলেই সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এবারও নানা হিসাব-নিকাশ করছেন।
এবার সোসাইটির নির্বাচনে একাধিক প্যানেলে হবে, এটা নিশ্চিত। এর মধ্যে একটি প্যানেল হচ্ছে বর্তমান সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়ার নেতৃত্বে। তার সঙ্গে রুহুল আমিন সিদ্দিকী এখন সেক্রেটারি হিসেবে রয়েছেন। কিন্তু আগামী নির্বাচনে তিনি সেক্রেটারি পদে প্রার্থী হতে পারছেন না। তাই তিনি সহসভাপতি পদে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। কারণ সোসাইটির নিয়ম হচ্ছে একজন সভাপতি ও সেক্রেটারি দুই মেয়াদের বেশি একই পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। ফলে রুহুল আমিন সিদ্দিকী সেক্রেটারি পদে প্রার্থী হতে পারছেন না। এ কারণে এটাই এখন বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে, কে হচ্ছেন আব্দুর রব মিয়ার প্যানেলের জেনারেল সেক্রেটারি প্রার্থী। তার প্যানেলের কোষাধ্যক্ষ নওশেদ হোসেন প্রার্থী হতে পারেন এমন সম্ভাবনার কথা শোনা গেলেও এটি চূড়ান্ত নয়। সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ আলীকে সেক্রেটারি হিসেবে প্রার্থী করা হতে পারে আব্দুর রব মিয়া প্যানেল থেকে, এটাও শোনা গিয়েছিল। কিন্তু এখন এটি অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে আব্দুর রব মিয়া বলেন, আমাদের প্যানেলে সেক্রেটারি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আলোচনা চলছে। আর কিছুদিন গেলে এটা বোঝা যাবে। বিশেষ করে আগামী মাসের শুরুতে। তবে আমরা সেক্রেটারি প্রার্থীর ক্ষেত্রে চমক দেখাতে পারব বলে আশা করছি।
মোহাম্মদ আলীর বিষয়ে রব মিয়া প্যানেলের দুজন নেতা একই কথা বলেন। তারা বলেন, মোহাম্মদ আলী গতবারের নির্বাচনে আমাদের প্রতিপক্ষ প্যানেলে ছিলেন। আমরা তার ও তার প্যানেলের বিপক্ষে কথা বলেছি। এখন তাকে প্যানেলে নিলে বিষয়টি কেমন দেখাবে। এই বিবেচনায় তাকে নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে মোহাম্মদ আলীর আশা পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়নি। তিনি না হলেও নতুন এমন প্রার্থী দেওয়া হবে, যাকে সবাই চেনেন এবং গ্রহণযোগ্যতা আছে সবার কাছে। চমক থাকবে সবার জন্য। আরেকজন নেতা বলেন, রব মিয়া প্যানেলের সেক্রেটারি পদ থেকে মোহাম্মদ আলীর নাম পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়নি। তাকে আনার চেষ্টা হতে পারে। কারণ তার অনেক ভোটার আছেন। গতবারের নির্বাচনে তার সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটার ছিল। এবারও থাকবে। যদিও কেউ কেউ সমালোচনা করছেন, তিনি গতবার বিরোধী প্যানেলে ছিলেন। আসলে এটা বড় কোনো ফ্যাক্টর নয়।
ইতিমধ্যে রব মিয়া প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি প্যানেল হচ্ছে। এতে সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিম। তার প্যানেলে সেক্রেটারি করা হচ্ছে মোহাম্মদ আলীকে। সেলিম ও আলী পরিষদ হিসেবে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তাদেরকে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণাও চলছে।
আতাউর রহমান সেলিমের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছি। আমার প্যানেলে মোহাম্মদ আলী জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে থাকছেন। আমরা পুরো প্যানেলের পরিকল্পনা করছি। আশা করছি বাংলাদেশ সোসাইটিকে এগিয়ে নিতে এবং এর কর্মকাণ্ডের পরিধি আরও বাড়াতে যা যা করা দরকার ও যে ধরনের নেতৃত্বের প্রয়োজন, তা আমরা করতে পারব।
আগামী নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। আশা করছি, ভোটাররা আমাদের পাশে থাকবেন। আমরা চাই একটি স্বচ্ছ, সুষ্ঠু এবং পক্ষপাতহীন নির্বাচন। গতবার নির্বাচনে অনেক ভুলভ্রান্তি ছিল, অনেক সমস্যা ছিল, সেগুলোর যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, আশা করি সেটি কমিশন খেয়াল রাখবেন এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ ও ত্রুটিমুক্ত একটি নির্বাচন উপহার দেবেন।
এদিকে কুশীলবদের একটি অংশ আতাউর রহমান সেলিম ও আলী প্যানেল যাতে জয়ী হতে না পারে, সে জন্য সিলেট বিভাগের ভোট ভাগ করার চেষ্টা করছে। সিলেটের সন্তান আতাউর রহমান সেলিমের বিরুদ্ধে যাতে ওই গ্রুপ ভোট দেয়, সেই চেষ্টাও শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে আতাউর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, নির্বাচনে অনেকেই অনেক কিছু করতে পারেন। তবে সোসাইটির ভোটারদের কাছে আমার অনুরোধ, তারা যেন নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক নেতা নির্বাচন করেন। নিজের ভোটটি একজন যোগ্য প্রার্থীকেই দেন। কারও কথায় যেন নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করেন। আমরা সবার সঙ্গে ঐক্য ধরে রাখতে চাই। আমরা বাংলাদেশিরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে থাকব। সম্মিলিতভাবে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে। গ্রুপিং আগেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু আমি বলব, আমাদের কমিউনিটিতে যারা গ্রুপিং করছেন, বিভেদ সৃষ্টি করছেন, সেগুলো না করে সবাই যাতে সম্মিলিতভাবে কাজ করে কমিউনিটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সেটিই লক্ষ্য হতে হবে।