Thikana News
০৬ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪

জ্যামাইকায় বাংলাদেশি পিএইচডি শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু

জ্যামাইকায় বাংলাদেশি পিএইচডি শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু
সাউথ জ্যামাইকায় বাংলাদেশি পিএইচডির ছাত্র মো. মাজিদুল হক ভূঁইয়ার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ২১ মে ভোরে জ্যামাইকায় তার ভাড়া করা বাসায় এ ঘটনা ঘটে। তার মৃত্যুটি  স্বাভাবিক মৃত্যু, নাকি হত্যাকাণ্ড, নাকি আত্মহত্যা- এ নিয়ে নানা রহস্য দেখা দিয়েছে। কারণ ঘটনার দিন তার স্ত্রী ও সন্তান বাসায় ছিলেন না। তারা গিয়েছিলেন সানিসাইডে। ঘটনার আগে একজন ব্যক্তি মাজিদুলের বাসায় প্রবেশ করেছিলেন এবং এক ঘণ্টা ছিলেন। এরপর বেরিয়ে গেছেন। কে সেই ব্যক্তি? কী সম্পর্ক তার সঙ্গে? সব মিলিয়ে পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শেষে রিপোর্ট দেবে। পুলিশ রিপোর্ট দেওয়ার পর তার মৃত্যুর আসল কারণ বের হয়ে আসবে বলে সবাই ধারণা করছেন। 
মো. মাজিদুল হকের বয়স হয়েছিল ৩১ বছর। তিনি বাংলাদেশ থেকে ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। এখানে মিজোরিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার জন্য আসেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন স্ত্রী কামরুন নাহার রাখী ও তাদের ছয় বছরের সন্তানকে। তারা মিজোরিতেই থাকতেন। ৩১ মার্চ সামারের ছুটিতে তারা নিউইয়র্কে আসেন বলে জানান মাজিদুল হকের স্ত্রী কামরুন নাহার রাখী।
কামরুন নাহার রাখী ঠিকানার সঙ্গে কথা বলেন ২৫ মে দুপুরে। তিনি বলেন, আমরা ডিসেম্বরে এ দেশে এসেছিলাম বাংলাদেশ থেকে। স্টুডেন্ট হিসেবে আসেন আমার হাজব্যান্ড। তার সঙ্গে আমরাও আসি। মিজোরিতে তিনি পিএইচডি করছিলেন। যখন সামারের ছুটি হয়, সেই সময় আমরা নিউইয়র্কে আসি। একটি বাসা ভাড়া নিই। সামারের ছুটি শেষে আবার মিজোরিতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে ২১ মে ভোরে। আমি সেদিন তার সঙ্গে ভোর সাড়ে চারটা পর্যন্ত ভিডিও কলে কথা বলেছি। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো। কোনো ঝগড়াও হয়নি। আমি আমার সন্তানকে নিয়ে সানিসাইডে আমার ১০ বছরের পুরোনো বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলাম। রাতে সেখানেই ছিলাম। আমার বান্ধবীর দুটি সন্তান আছে। ওর সন্তানের সঙ্গে আমার সন্তানের ভালো বন্ধুত্ব। তাই মাঝে মাঝে নিয়ে যেতাম। ঘটনার দিন রাতে আমি ও আমার সন্তান ওই বান্ধবীর বাসায় ছিলাম। এখনো ওই বাসাতেই আছি। কারণ এখন আমরা যে বাসায় থাকতাম, সেই বাসাটিতে প্রবেশের সুযোগ নেই। বাসাটি পুলিশ তদন্তের স্বার্থে সিল করে দিয়েছে।
আপনি আপনার স্বামীর মৃত্যুর ঘটনাটি কখন জানতে পারেন, কে জানিয়েছিল- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অনেক লম্বা ঘটনা। এখন মানসিক অবস্থা এমন নেই যে এ ব্যাপারে পুরো ঘটনা বলব। আমি মানসিকভাবে আরেকটু শক্তি অর্জন করি, তারপর সবকিছু বলব।
রাখী বলেন, তার মৃত্যুর খবর জানার পর আমি চার দিন পর লাশ পাই। এর মধ্যে পুলিশ পোস্টমর্টেম করায় এবং আনুষঙ্গিক যা যা করা দরকার সবই করে। আমি লাশ দাফন করার জন্য ইকনাতে ফোন করি। ইকনা কর্তৃপক্ষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে তারা মরদেহ দাফন করার সব ব্যবস্থা করেছে। ব্রুকলিনে ইকনা সেন্টার এ ব্যাপারে সব ব্যবস্থা করেছে। ব্রুকলিনেই নামাজে জানাজা হয়েছে। এরপর লাশ দাফন করা হয়েছে নিউজার্সিতে।
কবে লাশ পেলেন, কত তারিখে দাফন হলো- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সবকিছুু বলতে পারছি না।
তিনি বলেন, আমার স্বামী সুস্থই ছিলেন। তার প্রেশার একটু বেশি ছিল। এ ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা ছিল না। হার্টেরও কোনো প্রবলেম ছিল না। আসলে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না কোথা থেকে কীভাবে কেমন করে কী হলো। পুলিশের তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হবে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে এটা স্পষ্টভাবে জানার জন্য।
তিনি স্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন, নাকি হার্ট অ্যাটাক করেছেন বা কেউ তাকে হত্যা করেছে বলে সন্দেহ করছেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পুলিশ রিপোর্ট না পাওয়ার আগে কিছু বলতে পারছি না। তবে ঘটনার পর পুলিশ আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সবকিছু জানতে চেয়েছে। সেই সঙ্গে আমার ও আমার হাজব্যান্ডের মোবাইল ফোনও চেক করেছে। কল লিস্ট দেখা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সবকিছু তারা দেখেছে। পুলিশকে এটাও বলেছি, ঘটনার দিন ভোর রাত সাড়ে চারটা পর্যন্ত তার সঙ্গে ভিডিওকলে কথা হয়েছে। সেখানে আমরা খুব স্বাভাবিকভাবেই কথাবার্তা বলেছি।
তিনি বলেন, ঘটনার পর পুলিশ বাসার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। ভিডিওতে একজনকে বাসায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। যিনি প্রবেশ করেছেন, তিনি এক ঘণ্টার মতো ছিলেন। তিনি কে আমি চিনি না। পুলিশ ওই ভিডিও দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
রাখী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা অন্য কারও সঙ্গে তার কোনো বিরোধ ছিল বলে আমার জানা নেই। মারা যাওয়ার পর মাজিদুলের প্রফেসর এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি একজন আছেন, তিনিও কল করেছেন। আসলে বলতে পারছি না কী হলো।
তিনি বলেন, অনেকেই আমাকে নিয়ে অনেক কথা বলছেন। মুখরোচক খবর তৈরি করছেন বা চেষ্টা করছেন, আবার কেউ কেউ নিজেদের মতো করেই বলছেন। যারা এগুলো করছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ করব, আমরা মুসলিম। একজন মানুষ মারা গেছেন। আপনারা না জেনেশুনে একজন মানুষকে নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশ করবেন না। আমি এখনো ঘটনাটি নিয়ে স্পষ্ট নই ঠিক কী কারণে এটা হলো, এ কারণে কারও সঙ্গে কথা বলছি না। এ নিয়েও অনেকেই অনেক কথা বলার চেষ্টা করছেন। সেটিও ঠিক নয়। আমি না জানলে কীভাবে বলব। তাই সবার প্রতি অনুরোধ, দয়া করে আপনারা প্রকৃত সত্য ঘটনা জানার জন্য পুলিশ রিপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
রাখী বলেন, তিনি এখনো তার মিজোরির ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এনরোল আছেন। সামারের পর সেখানে ফিরে যেতেন। আমরা গত ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে আসি। আর মার্চ মাসের ৩১ তারিখ নিউইয়র্কে চলে আসি। আমার জীবন ভালোভাবেই কাটছিল।
এ ঘটনায় বাদী হয়ে কোনো মামলা করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আগে মৃত্যুর কারণ জানতে চাইছি। পুলিশ রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এখনো কোনো আইনজীবী নিইনি। কারও সঙ্গে কথাও বলিনি।
রাখীর বাবার বাসা বাংলাদেশের উত্তরায় আর শ্বশুরবাড়ি আরামবাগে। তারা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। তিনি বলেন, আমরা একজন আরেকজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। বেশ ভালোই যাচ্ছিল আমাদের সংসারজীবন। কিন্তু কেন এমন হলো?
এদিকে মাজিদুলের মৃত্যুর পর তার এক বোন কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা দুই বোন বড়। আর ও ছিল আমাদের ছোট ভাই। দুই বোনের একটা ভাই। তা-ও চলে গেল। এটা ফেয়ার হলো না।

কমেন্ট বক্স