অবশেষে ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমোরিকা (ফোবানা) সম্মেলনের ‘ট্রেডমার্ক বা লোগো’ সমস্যার অবসান হতে যাচ্ছে। গত পাঁচ বছর ধরে লোগো ব্যবহারে ফোবানার দু’গ্রুপের মধ্যে যে জটিলতা দেখা দিয়েছিল তার সমাধানের পথ খুঁজে পেয়েছে সংশ্লিষ্টরা। উভয় দু’গ্রুপের নেতৃবৃন্দের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চলতি বছর অনুষ্ঠিতব্য ফোবানার পৃথক দু’টি সম্মেলনের এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি আবীর আলমগীর ও কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম।
তারা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, ফোবানার ট্রেডমার্ক বা লোগো অবৈধ ব্যবহার বন্ধ ও ট্রেডমার্কটি নিবন্ধিত করার জন্য ২০১৯ সালে ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমোরিকা (ফোবানা) বাদী হয়ে একটি মামলা রুজু করেন। বিবাদী মোহাম্মদ হোসেন খান ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা ইনক। উক্ত মামলার আপডেট জানাতে তারা এ যৌথভাবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
১৯৮৭ সালে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি এবং গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসির কয়েকটি সংগঠনের অংশগ্রহনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্মেলন আয়োজনের মধ্যদিয়েই মুলত ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা(ফোবানা) পথচলা শুরু করে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে পুরো নর্থ আমেরিকার সংগঠনগুলো ফোবানার সাথে যুক্ত হতে থাকে এবং একটা সময় ‘বাংলাদেশ সম্মেলন’ নাম পরিবর্তন করে ফোবানা নাম ধারণ করে সম্মেলনের আয়োজন শুরু হয়। ফোবানা সেন্ট্রাল কমিটি গঠন করে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে থাকেন।
কয়েক বছর পর কিছু সদস্য সংগঠনের কর্মকর্তাদের মধ্যে মতপার্থক্য শুরু হলে কিছু সংগঠন বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা ভাবে সম্মেলনের আয়োজন করতে থাকেন। বিচ্ছিন্ন সংগঠনগুলোকে একত্রিত করে শুধুমাত্র একটি সম্মেলন করার জন্য বছরের পর বছর আলোচনা অব্যাহত থাকলেও দীর্ঘদিন সমঝোতায় পৌছানো সম্ভব হয়নি। অতঃপর ২০১৩ সালে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে হিউস্টন একোর্ড নামে একটি সমঝোতা হয় এবং বেশীরভাগ সংগঠনই একটি প্ল্যাটফর্মে একত্রীভূত হয়, কিন্তু তারপরও একটি অংশ আলাদাই রয়ে যায় এবং সম্মেলন চালিয়ে যেতে থাকেন।
প্রতি বছরই দেখা যায় বিভিন্ন গ্রুপ ‘ফোবানা’ নাম ও লোগো ব্যবহার করে সম্মেলন করছেন। এতে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এই বিভ্রান্তি দুর করতেই ফোবানার ‘ট্রেডমার্ক’ লোগোটির অবৈধ ব্যবহার বন্ধ ও লোগোটি নিবন্ধনকৃত করার জন্য বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেডমার্ক ট্রায়াল, আপিল বোর্ডে আর্জি পেশ করেন। যেখানে মোহাম্মদ হোসেন খান ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা ইঙ্ককে ফোবানার ‘ট্রেডমার্ক’ লোগোটি ব্যবহার বন্ধ করতে বলা হয়। পরবর্তিতে মোহাম্মদ হোসেন খান ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা ইঙ্ক ফোবানার লোগো ব্যবহারের একক অনুমতি ও একক নিবন্ধন যে কোন সংগঠনকে এককভাবে না দেয়ার জন্য আদালতে দরখাস্ত দাখিল করেন। গত কয়েক বছর ধরে মামলাটি চলমান আছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে দুই পক্ষের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। আলোচনায় বারবার উত্তর আমেরিকার বাংলাদেশি সমাজের স্বার্থ সংলিপ্ত বিষয় ও ফোবানার মূল লক্ষ্য, বাংলাদেশের কৃষ্টি, সংষ্কৃতির শেকড় এদেশের মাটিতে প্রথিত করা ও পরবর্তী প্রজন্মের নিকট পৌঁছে দেওয়ার বিষয়াদী উঠে আসে। আলোচনায় উভয় পক্ষই অনুধাবন করতে পারে নিজেদের সময় শক্তি ও অর্থ, মামলা পরিচালনায় ব্যায় না করে কমিউনিটির বৃহত্তর স্বার্থে বিনিয়োগ করা উচিত সেই অনুযায়ী সম্প্রতি সমঝোতার ভিত্তিতে মামলাটি নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্ত হয় এবং দুই পক্ষ আলোচনার ভিত্তিতে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তে পৌছান।
১. বর্তমানে মোহাম্মদ আলমগীর এবং আবীর আলমগীরের নেতৃতাধীন ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা, ফোবানার নিবন্ধনকৃত ‘ট্রেডমার্ক সম্বলিত’ লোগোটিই ব্যবহার করবেন এবং ট্রেডমার্ক এর মালিক থাকবেন।
২. মোহাম্মদ হোসেন খান, ফেডারেশন অফ বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা ইঙ্ক আদালতে দাখিলকৃত তাদের দরখাস্ত আগামী পনের (১৫) দিনের মধ্যে তুলে নিবেন।
৩. বর্তমানে শাহ নাওয়াজ ও কাজী আজমের নেতৃতাধীন ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইঙ্ক নর্থ আমেরিকা ইনন ‘ফোবানা’ নাম ব্যাবহার করতে পারবেন এবং তাদের নিজস্ব পৃথক লোগো ব্যাবহার করবেন।
৪. অন্য যে কোন সংগঠন, গোষ্ঠী অথবা সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য বহিষ্কৃত ব্যাক্তিবর্গ ‘ফোবানা’ নাম বা লোগো ব্যাবহার করতে পারবেন না। প্রয়োজনে উভয় পক্ষই যৌথভাবে যেকোনো অবৈধ কর্মকান্ডের মোকাবিলায় কাজ করবেন।
ফোবানা সম্মেলন যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে শুরু হয়েছিল সেভাবে আবারো সহসাই ঐক্যবদ্ধ একটি প্লাটফর্মে ফিরে আসবে এবং বহিঃবিশ্বে সর্ববৃহৎ প্রবাসী বাংলাদেশি সংগঠন হিসেবে, উত্তর আমেরিকার বাংলাদেশি সমাজের কল্যাণে একযোগে কাজ করবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।