ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মরদেহের খণ্ডিত অংশের খোঁজে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় চলছে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান। প্রায় ক্লু লেস এই হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিন পরে ২৮ মে (মঙ্গলবার) নিউটাউনের সঞ্জীভা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে মাংসের দলা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এটি এমপি আনারের মৃতদেহের খণ্ডিত অংশ কিনা, তা ফরেনসিক পরীক্ষার পর চূড়ান্তভাবে জানা যাবে বলে জানিয়েছে দুই দেশের গোয়েন্দা বাহিনী।
২৮ মে (মঙ্গলবার) রাতে কলকাতার নিউটাউনের একটি পাঁচ তারকা হোটেলের সামনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ থেকে আসার পরেই ফ্ল্যাটটি পরিদর্শন করেছি। এরপর আমরা সিআইডিকে রিকোয়েস্ট করি সেখানের স্যুয়ারেজ লাইন দেখার দরকার আছে। সিআইডি খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হওয়া ঘাতকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য দিয়ে আমরা সিআইডিকে সহযোগিতা করছি।
হারুন বলেন, সেপটিক ট্যাংক থেকে বেশ কিছু মাংসের টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে। এই মাংসগুলোকে ফরেনসিকের জন্য রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ডিএনএ টেস্টও করা হবে। তারপরে বলা যাবে এগুলো সংসদ সদ্যের কি না।
তিনি বলেন, আমরা ২৯ মে (বুধবার) সকালে কলকাতা সিআইডি কার্যালয়ে যাব। মরদেহের খণ্ডিতাংশ উদ্ধারের বিষয়টি অফিসিয়ালি নিশ্চিত হতে হবে। সেটা যে সংসদ সদস্য আনারের তা ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভব নয়। আমরা আগে নিশ্চিত হই। তারপর রক্তের সম্পর্কের কাউকে কলকাতায় ডাকা হবে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য।
খালে উদ্ধার অভিযান নিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, উদ্ধার অভিযান চলবে। সব তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করেই আমরা বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করছি। তিনি বলেন, যেহেতু হত্যাকাণ্ডটি এ দেশে সংগঠিত হয়েছে এবং একটা হত্যাকাণ্ডের পরে এবং একটা মামলার তদন্ত কাজের জন্য বিভিন্ন পারিপারর্শিক দিক বিবেচনা করে সব কিছু করতে হয়। ঘাতকরা আমাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে, সে মোতাবেক আমরা বিভিন্ন জায়গায় যাবো।
গত ১৩ মে সঞ্জীভা গার্ডেনের যে ফ্ল্যাটে বাংলাদেশি এমপি আনারকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছিল সেই আবাসিক ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে মাংসের দলা উদ্ধার করা হয়। সেপটিক ট্যাংকের তলায় মাংসের টুকরাগুলো জমা হয়েছিল। সঞ্জীভা গার্ডেনের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাংসগুলো ছোট ছোট করে টুকরা করা। তরল পয়ঃবর্জ্যের মধ্যে থেকে সেগুলো অনেকটা ফ্যাকাশে এবং নরম হয়ে গেছে। ’
এদিকে, এমপি আনার হত্যায় জড়িতদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব, এমন দাবি করেছেন কলকাতায় অবস্থানরত ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ। এমপি আনার যে ফ্ল্যাটে ছিলেন সেখানকার সুয়ারেজ লাইন ভেঙে অভিযান চালানোর কথাও জানান হারুন। অন্যদিকে হত্যার মূলহোতা কসাই জিহাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মরদেহের খণ্ডিত অংশের খোঁজে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন খালে অভিযান চালাচ্ছে কলকাতা সিআইডি।
এসব মাংসের টুকরা এমপির আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহের কিনা তা জানা যাবে ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর। এই বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করেনি বাংলাদেশ কিংবা কলকাতা পুলিশ।
ঠিকানা/এএস