ইউএস বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ইউএসবিসিসিআই) রিয়েল এস্টেট এক্সপো ১৮ মে শনিবার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন আয়োজক সংস্থার পরিচালক শেখ ফরহাদ। রিয়েল এস্টেট এক্সপোটি ৫০ জন প্রদর্শনকারী (এক্সিবিটর) এবং ১০০০ জনের বেশি অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতিতে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ও সফলভাবে উদযাপিত হয়। নিউইয়র্কে যারা বাড়ি কিনতে চান, লোন নিতে চান, কীভাবে ট্যাক্স ফাইল করবেন- এ রকম বিষয়ে আগ্রহীদের জন্যই মূলত এই আয়োজন করে ইউএসবিসিসিআই। এই এক্সপোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ যোগ দেন। সেখানে তারা অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন। আয়োজকেরা মনে করছেন, এই তথ্য আগামী দিনে তাদের বাড়ি কেনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। সংশ্লিষ্ট অঙ্গনের বিশেষজ্ঞরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ইউএসবিসিসিআইর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মো. লিটন আহমেদ। তিনি বলেন, ইউএসবিসিসিআই রিয়েল এস্টেট এক্সপো আয়োজন করতে পেরে আমি সম্মানিত ও আনন্দিত। নিউইয়র্ক লাগোর্ডিয়া বিমানবন্দর ম্যারিয়টে এই আয়োজনকে সফল করতে যারা পরিশ্রম করেছেন, তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি অতিথি, প্রদর্শক ও স্পনসরদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ধরনের মেগা ইভেন্ট শুধু ব্যবসার সুবিধাই বৃদ্ধি করে না, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রেও অবদান রাখে। তিনি এক্সপো ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক তৈরি, জ্ঞান আদান-প্রদান এবং সফল ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সবাইকে উৎসাহিত করেন। তিনি আরও বলেন, এই ইভেন্ট রিয়েল এস্টেট শিল্পের উদ্ভাবন, সহযোগিতা এবং সাফল্যের এক নতুন মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন কুইন্স চেম্বার চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও সিইও টমাস জে গ্রেচ, সিটির মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কমকর্তা মো. মীর বাশার ও নিউইয়র্ক সিটির ভবন বিভাগের সহকারী কমিশনার জেমেল ইসিডোর এসকিউ। বিশেষজ্ঞরা রিয়েল এস্টেট সংক্রান্ত নানা বিষয়ে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন, যা দর্শকদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষামূলক ছিল।
প্রথম প্যানেল সেশনে আলোচনা হয় এআই ব্যবহারের ভবিষ্যৎ পরিপ্রেক্ষিত, যা ছিল ছোট ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য কৌশল। প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন এসজে ইনোভেশন এলএলসির সিইও এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাহেদ ইসলাম, ক্লাউডক্যাম্প বাংলাদেশের প্রাক্তন অডঝ এবং প্রাক্তন ডেল প্রতিষ্ঠাতা ও টেকনোলজি লিডার মোহাম্মদ জামান, ইউনাইটেড জাতিসমূহের স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের (ডেটা) লিড মফিজুল ইসলাম এবং প্রকৌশলী সরফ তালুকদার। ওই সেশনে প্যানেলিস্টরা আলোচনা করেন কীভাবে এআই ব্যবহার ছোট ব্যবসার বিকাশে সাহায্য করতে পারে এবং তারা কীভাবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবসা-প্রক্রিয়াকে সহজ এবং কার্যকর করতে পারেন। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন ব্যবসা সেক্টরে এআই ব্যবহারের প্রায়োগিক ব্যবস্থার প্রস্তুতি ও ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করেন।
দ্বিতীয় প্যানেল সেশনে আলোচনা হয় বাণিজ্যিক ল্যান্ডস্কেপ : প্রবণতা, সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ। এই সেশনের মডারেটর ছিলেন ইসমাইল আহমেদ। প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন এলিট সিনার্জি রিয়েলটি ব্রোকার সাব্বির আহমেদ, ফ্লাশিং ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহিন খান, এলএলসি ন্যাকমিয়াস ল’ ফার্মের প্রধান অ্যাটর্নি মাইকেল ন্যাকমিস এবং হাবিব আমেরিকান ব্যাংকের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট মোয়াজম আলী। এই সেশনে তারা বাণিজ্যিক ল্যান্ডস্কেপের বর্তমান প্রবণতা, নতুন সুযোগ এবং সেক্টরে বিদ্যমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন। প্যানেলিস্টরা তাদের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান শেয়ার করেন কীভাবে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে উন্নতি করা যায় এবং কীভাবে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা যায়।
তৃতীয় প্যানেল সেশনে আলোচনা হয় ‘ইসলামিক ফাইন্যান্সিং বাড়ি ক্রেতাদের জন্য একটি নির্দেশিকা’। এই সেশনের মডারেটর ছিলেন সামি কবির। প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন ইসলামিক স্কলার মুফতি আ. মালেক, এলএলসির গাইডেন্স আবাসিক অ্যাকাউন্ট এক্সিকিউটিভ নাসের নাহশাল, রিয়েলটি প্রিমিয়াম রিয়েল এস্টেট এজেন্ট ডিরেক্টর অব সেলস এমরান ভূঁইয়া এবং পিএলএল সরদার এম আসাদুল্লাহর অ্যাটর্নি সরদার এম আসাদুল্লাহ। এই সেশনে তারা ইসলামিক ফাইন্যান্সিংয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন, যা বাড়ি ক্রেতাদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। তারা ইসলামিক ফাইন্যান্সিংয়ের মূলনীতি, সুবিধা এবং চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেন। এ ছাড়া বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ইসলামিক ফাইন্যান্সিংয়ের প্রয়োগ এবং এর উপকারিতা নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
চতুর্থ প্যানেল সেশনে আলোচনা হয় ‘এনআরএ কমিশন পরিবর্তন এবং বর্তমান বাজারের জন্য আইনি, কর এবং বিমা কৌশল’। এই সেশনের মডারেটর ছিলেন আহাদ আলী সিপিএ। প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন টেকবাইটস ইন্স্যুরেন্সের প্রেসিডেন্ট কেভিন ব্রায়ান শাকিল, এইচ ব্রুসর অফিস ফিশার পিসির আমিনা রাশাদ ও এলএমএম ব্রঙ্কস অফিসের প্রধান অ্যাটর্নি আমিনা রাশাদ এবং এভিএস রিয়েলটির ডিরেক্টর সেলস অ্যান্ড মার্কেটিংয়ের গ্রিন রিয়েলটর মোহাম্মদ মজুমদার। এই সেশনে তারা এনআরএ কমিশন পরিবর্তন এবং বর্তমান বাজারের আইনি কর ও বিমা কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। প্যানেলিস্টরা তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান শেয়ার করেন, কীভাবে এই পরিবর্তনগুলো ব্যবসায়িক পরিবেশকে প্রভাবিত করছে এবং কীভাবে এর সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়। তারা বিভিন্ন কর ও বিমা-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান উপস্থাপন করেন, যা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উভয়ের জন্য উপকারী।
পঞ্চম প্যানেল সেশনে আলোচনা হয় ‘প্রথমবার বাড়ির ক্রেতা আপনার প্রথম ক্রয় নেভিগেট করা’। এই সেশনের মডারেটর ছিলেন তারিক বেলী। প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন কেলার উইলিয়ামস ল্যান্ডমার্কেও লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিয়েল এস্টেট (বিক্রয়) জাহেদ হোসেন, পিএলএলসির আইন অফিসের অ্যাটর্নি মোহাম্মদ হক (এমরান) এবং ক্রেডিট বস সিনিয়র ক্রেডিট কনসালট্যান্ট অ্যাঞ্জেলা কিম। এই সেশনে তারা প্রথমবার বাড়ি ক্রয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন। প্যানেলিস্টরা বাড়ি খোঁজা থেকে শুরু করে ক্রয়ের প্রতিটি ধাপ, হোম ইন্সপেকশন, আইনি প্রক্রিয়া এবং ক্রেডিট ব্যবস্থাপনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং পরামর্শ প্রদান করেন। তারা নতুন ক্রেতাদের জন্য নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন, যা প্রথমবার বাড়ি ক্রয়কে সহজ এবং সফল করতে সাহায্য করে।
ষষ্ঠ প্যানেল সেশনে আলোচনা হয় ‘কোনো নথি এবং কোনো ট্যাক্স রিটার্ন লোন ছাড়াই আবাসিক বিনিয়োগ’। এই সেশনের মডারেটর ছিলেন আহাদ আলী সিপিএ। প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন ক্রস কান্ট্রি বন্ধকের সিনিয়র লোন অফিসার ফাহিম হোসেন, ইস্টার্ন ইনভেস্ট ইনকের প্রেসিডেন্ট ও সিইও নুরুল আজিম, এমএল গ্রুপ এলএলপির আইন অ্যাটর্নি উসমান মালিক ইএসকিউ, মেডোব্রুকের ভিপি ও শাখা ব্যবস্থাপক ভিক্টর অ্যান্ড্রেড এবং উলভস ডেন রিয়েলটির ব্রোকার/সিইও নাফিজ রহমান। এই সেশনে তারা আলোচনা করেন কীভাবে কোনো নথি বা ট্যাক্স রিটার্ন ছাড়াই আবাসিক বিনিয়োগ করা যায়। প্যানেলিস্টরা এ ধরনের লোনের সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। তারা বিনিয়োগকারীদের জন্য কৌশল এবং বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন, যাতে এ ধরনের লোন প্রক্রিয়ায় সহজে সফল হওয়া যায়। এ ছাড়া তারা বিনিয়োগকারীদের জন্য আইনি ও কর সংক্রান্ত বিষয়ও তুলে ধরেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ইউএস বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক সিপিএ আহাদ আলী, মর্টগেজ ডিপোর শাখা ব্যবস্থাপক তারিক বেইলি, ইস্টার্ন ইনভেস্টর ইনকের সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল আজিম, এলএলসির ক্রসকান্ট্রি মর্টগেজ সিনিয়র লোন অফিসার ফাহিম হোসেন এবং ইউএসবিসিসিআইর ভাইস প্রেসিডেন্ট বখত রুম্মান বির্তিজ। শীর্ষ ১০০ বাংলাদেশি আমেরিকান রিয়েলটর স্বীকৃতি প্রোগ্রামে প্রাথমিক ১১ স্বীকৃতিপ্রাপ্তের নাম ঘোষণা করেন ইউএসবিসিসিআই রিয়েল এস্টেট এক্সপো ২০২৪-এর চেয়ার ইসমাইল আহমেদ। স্বীকৃতিপ্রাপ্তরা হলেন রিয়েলটি প্রাইমের ব্রোকার জামান মজুমদার, এলএলসির ইয়র্ক হোল্ডিং রিয়েলটির রিয়েলটর মর্তোজা কে সিদ্দিকী, কেলার উইলিয়ামস রিয়েলটি ল্যান্ডমার্ক ওওর রিয়েল এস্টেট বিক্রয় ও বিনিয়োগ জাহেদ হোসেন, ব্রো রিয়েল এস্টেটের এজেন্ট নাজনীন মির্জা, এলিট সিনার্জি রিয়েলটির রিয়েল এস্টেট ব্রোকার সাব্বির আহমেদ, এক্সিট রিয়েলটি প্রিমিয়ামের ডিরেক্টর অব সেলস অ্যান্ড রিয়েলটর এমরান ভূঁইয়া, রিয়েলটি প্রাইমের লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিয়েল এস্টেট সেলসপারসন আদান ইসলাম, ফ্রিহোল্ড রিয়েলটির রিয়েল এস্টেট সেলসপারসন রেজ্জী চৌধুরী, ওলভেসডেন রিয়েলটির ব্রোকার/সিইও নাফিজ রহমান, এবি রিয়েলটির লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিয়েল এস্টেট সেলসপারসন দেলোয়ার খান এবং কাফকোস রিয়েলটির রিয়েলটর নাদির এ খান। এই স্বীকৃতি প্রোগ্রামটি ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এবং অংশগ্রহণকারীদের অনুপ্রেরণা জাগানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসমাইল আহমেদ প্রত্যেক স্বীকৃতিপ্রাপ্তকে তাদের অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জানান।
সমাপনী অনুষ্ঠানে ইসমাইল আহমেদ বলেন, ভবিষ্যতে এ রকমের আরও অনুষ্ঠান আমাদের পেশাগত উন্নয়ন এবং সংযোগ তৈরির জন্য অত্যন্ত জরুরি। ইউএসবিসিসিআই রিয়েল এস্টেট এক্সপো সফলভাবে শেষ করার জন্য তিনি সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ২০২৫ সালের ঐতিহাসিক আয়োজনে আবার মিলিত হওয়ার অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএসবিসিসিআইর পরিচালক মিলি ভূইয়া, রফিক খান, বদরুদ্দোজা সাগরসহ মিডিয়া প্রতিনিধিবৃন্দ এবং কমিউনিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।