বাংলাদেশী আমেরিকান ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি অব ইউএসএ ইনক এর উদ্যোগে ব্রুকলিন মেলা অনুষ্ঠিত। মেলায় ছিল উপচে মানুষের ভিড়। সামারের শুরুতে ১৯ মে অনুষ্ঠিত মেলায় বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ ও শিশুরা আসেন। মেলায় ছিল রকমারী বিভিন্ন পণ্যের ও পোশাকের স্টল। ছিল খাবারের স্টল। সেই সাথে বাচ্চাদের জন্য ছিল খেলাধূলার ব্যবস্থা। মেলায় আগতরা অনেকেই ঘুরে ঘুরে দেখেছেন ও কিনেছেন বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্য। মেলায় জনসাধারণের ও দশনার্থীদের প্রবেশ ফ্রি ছিল। এছাড়াও প্রতিবছর এই মেলাটি অত্যন্ত সফলভাবে আয়োজন করা হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ফলে মেলায় মানুষের উপস্থিতি আয়োজকদের উৎসাহ আরো বাড়িয়ে তোলে। ব্রুকলিনের বাসিন্দারা ছাড়াও নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষেরা মেলায় আসেন। ব্রুকলিনের চার্চ এভিনিউ (ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউ ও চার্চ এর মাঝখানের স্থানে) মেলা শুরু হয় বেলা দুইটায় আর মেলা শেষ হয় রাত আটটায়। মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলা সিডিপ্যাপ এর কর্নধার আবু জাফর মাহমুদ।
মেলায় অতিথি হিসাবে নিউ ইয়র্কের কিংস কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এরিক গঞ্জালেজ উপস্থিত ছিলেন। কাউন্সিল ওমেন শাহানা হানিফ, তার বাবা চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ।
ব্রুকলিন মেলায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কাউন্সিল মেম্বার শাহানা হানিফ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন থাউজেন্টস শেডস অফ উইমেন এর প্রেসিডেন্ট ডিওর ফল, অ্যামব্যাসেডর জেরি কবেনা আডিনক্রা, থাউজেন্টস শেডস অফ উইমেন এর ইন্টারন্যাশনাল কো অর্ডিনেটর সেরিঙ্গে বারা নাদিয়ে। মেলায় সম্মাণিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক গঞ্জালেস, ৬৬ প্রিসিঙ্কটের কমান্ডিং অফিসার কেনেথ হ্যারাটে, ক্যাপ্টেন ক্রিস্টোফার জোসেফ, কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স ফাইভ বরো’র ডেপুটি কমান্ডার রিচার্ড টেইলর, কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স ৬৬ প্রিসেন্ট এর সার্জেন্ট উইং চ্যাং, কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স অফিসার জেমস, কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স অল বরো সার্জেন্ট আব্দুল লতিফ, নোয়াখালী সমিতির বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান, চার্চ ম্যাকডোনাল্ড বিজনেস এসোসিয়েশনের সভাপতি রফিক পাটোয়ারি, সেক্রেটারি মোহাম্মদ বাবুল, সাউথ এশিয়ান আছাল এর মোহাম্মদ করিম, সার্জেন্ট তাকি, মাইমুনাটিস হসপিটালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডগলাস জ্যাবলান, । অনুষ্ঠানে মেলা উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ এস এম রেজা, কো চেয়ারম্যান আবছার উদ্দিন, আহ্বায়ক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজ, প্রধান উপদেষ্টা অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, উপদেষ্টা মনির আহমদ কামাল, কামাল হোসেন মিঠু, প্রধান সমন্বয়ক নূরুল আজিম, সমন্বয়ক আহসান হাবিব, সদস্য সচিব ফিরোজ আহমেদ, জাহাঙ্গীর সোহরাওয়ার্দি, সালেহ মানিক, প্রফেসর আজাদ, সার্জেন্ট তাকি, রফিক পাটোয়ারী, মফিজুর রহমান, আলমগীর হোসেন, বাংলাদেশী আমেরিকান ফেন্ড্রশিপ সোসাইটি অব ইউএসএ ইনক এর সভাপতি কাজী সাখওয়াত আজম, সাধারণ সম্পাদক এস এম ফেরদৌসসহ সংগঠনের বিভিন্ন নেত্রীবৃন্দ ও মোহাম্মদ হাসানসহ মেলার সকল পৃষ্ঠপোষক ও আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শতাধিক গণ্যমাণ্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
ব্রুকলিন মেলার অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করে আশারাফুল হাসান বুলবুল, সোনিয়া সিরাজ ও এস এম ফেরদৌস।
মেলায় ৬৫টির বেশি স্টল ছিল। সেখানে বিভিন্ন ধরণের খাবারের ব্যবস্থা ছিল। এছাড়াও রকমারী পণ্য ছিল এই মেলায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ উপস্থিত হন বলে দাবি করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফেরদৌস। তিনি বলেন, এত মানুষ অনুষ্ঠানে এসেছেন। আমরা খুবই খুশী। আর মেলায় দফায় দফায় মানুষ আসছি। কিছু কিছু মানুষ এসেছেন এবং থেকেছেন। মেলায় ছিল সাংস্কৃতিক পর্ব। সেখানে নাচ ছাড়াও ছিল গান পরিবেশনা। প্রবাসের ও দেশের খ্যাতনামা শিল্পীরা অংশ নেন। এরমধ্যে ছিলেন রিজিয়া পারভীন, বাউল কালা মিয়া, দিনাত জাহান মুন্নি, শাহ মাহবুব, রানু নেওয়াজ, তৃনিয়া হাসান অনিক রাজসহ প্রবাসের বিশিষ্ট শিল্পীরা । মেলাটি সফল করার জন্য ও কমিউনিটির মানুষের সেবার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে ৬৬ প্রিসিঙ্কেটের কমান্ডিং অফিসার ক্যাপ্টেন কেনেথ হেরার্টসহ বেশ কয়েকজনকে পুরস্কৃত করা হয়।
আয়োজকরা বলেন, নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের চার্চ এভিনিউতে বাংলাদেশি কমিউনিটির সবচেয়ে বড় মিলনমেলা ব্রুকলিন মেলার আয়োজন করি। এবারও মেলায় সবমিলিয়ে দর্শক উপস্থিত হয়েছিল ২০ হাজারের ওপরে। এবার গ্রীষ্ম মৌসুমের প্রথম মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আবারও বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রে-শীপ সোসাইটি তাদের সাংগঠনিক সাফল্য দেখাতে পেরেছি।
মেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ উদ্বোধনী বক্তৃতায় বলেছেন, এই বর্ণাঢ্য মেলা আমাদের আগামী নেতৃত্বের উজ্জলতা বহন করছে। এটি ব্রুকলিন মেলা হলেও এটি সমগ্র বাংলাদেশি কমিউনিটি তথা দক্ষিণ এশিয়ার মেলা। মেলায় এর বাইরেও পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। গোটা জনগনগোষ্ঠির মধ্যে একতা গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। মেলার সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন আয়োজক সংগঠক বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রে-শীপ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম। মেলার মূল মঞ্চে সঞ্চালক ছিলেন আশরাফুল হাসান বুলবুল ও বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রে-শীপ সোসাইটির সেক্রেটারি, সন্দ্বীপ ইউনাইটেড এর প্রেসিডেন্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদকজয়ী শ্যুটার এস এম ফেরদৌস। মেলায় আবু জাফর মাহমুদের নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক প্লাটফরম পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস এর স্টলে আসেন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির নেতৃত্বাস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। তারা ডেমোক্র্যাট রাজনীতির এই নতুন প্লাটফরমে যুক্ত থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধান অতিথি আবু জাফর মাহমুদ মেলার উচ্ছসিত ২০ হাজারের বেশি দর্শকের উদ্দেশ্যে বলেন, হাজারো মানুষের এই উত্তাল জনস্রােত, লক্ষ স্বপ্নের জন্ম দিতে পারে। আমি জন্মগতভাবে যোদ্ধা। বিশাল সমাবেশে আমার জাতির মাঝে অন্তত. একটি বার্তা আমি পৌঁছে দিতে চাই। আমাদের সন্তানদের ব্যাপারে কতটা সতর্ক। সন্তানেরা স্কুলে কাদের সঙ্গে মেলামেলা করছে, আমাদের পরিবার বহুজাতিক সমাজে কাদের সঙ্গে মিশছে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকাও আমাদের যুদ্ধ। মানুষ হিসেবে সব মানুষের প্রতিই আমাদের ভালোবাসা আছে। কিন্তু এই যুদ্ধের কথাটি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তিনি নতুন সংগঠন পিপল আপ এর পথচলা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এই সংগঠন গড়ে তুলেছি, এর মাধ্যমে দুজন স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বারকে এনডোর্স করেছি। ধাপে ধাপে আমরা নিউইয়র্কের সকল জাতিগোষ্ঠির মাঝে আমাদের স্বকীয়তা নিয়েই মূলধারায় নেতৃত্ব করার আশা রাখি।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, বঙ্গোপসাগরের পাড়ে জন্মেছি। আজ আটলান্টিকের পাড়ে এসে আমরা মাথা তুলেছি। আমরা এই নিউইয়র্কের সকল ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্যের সাক্ষর রেখেছি। নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ বিভাগে, ব্যবসায়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতসহ সকল ক্ষেত্রেই আমরা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছি এটি আমাদের গর্বের বিষয়।
ব্রুকলিন মেলায় বিশেষ আকর্ষণ ছিল প্রবাসের সবচেয়ে বড় সংগঠন সন্দ্বীপ সোসাইটির আয়োজনে মেলায় উপস্থিত কয়েক হাজার দর্শকদের জন্য সাস্বাদু খাবার, পানীয় ও চা পরিবেশন। তারা মেলার শৃঙ্খলা রক্ষা ও অতিথি আপ্যায়ণের ক্ষেত্রে অসাধারণ এক দৃষ্টান্ত গড়েছেন।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, সন্দ্বীপ সোসাইটি ও সন্দ্বীপ ইউনাইটেড এর সকল নেতাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা তাদের তৎপরতা দিয়ে প্রমাণ করেছে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য সদা প্রস্তুত। তিনি বাংলা সিডিপ্যাপ, অ্যালগ্রা হোম কেয়ারসহ জয় বাংলাদেশ, জেবিটিভি ও দ্য বে ওয়েভ এর সকল র্কর্মী সার্বক্ষণিক মেলায় উপস্থিত থেকে আন্তরিকতার প্রমাণ রেখেছেন, এটি আমার গৌরবের অংশ। তিনি সকল সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক ও সাংবাদিকরা উপস্থিত থেকে মেলার অংশ হওয়ার জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান।