খাবার যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তেমনি দুর্বলও করে দিতে পারে। চা, কফি, মিল্ক শেইক অথবা গরমে ঠাণ্ডা-পানীয় খেতে সবাই পছন্দ করেন। তবে এসবে থাকা চিনি সারাদিনের শক্তি যোগালেও, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে ফেলে।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন সাময়িকীতে প্রকাশিত ইন্দোনেশিয়ার ‘ইউনিভার্সিটাস পাজাজারান’য়ের গবেষকদের করা সমীক্ষা অনুযায়ী- চিনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে ফেলে। কারণ চিনি প্রভাবে শ্বেত রক্ত কণিকা খারাপ ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়াকে মোকাবেলা করতে পারে না।
যেসব খাবার দুর্বল করে দিতে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
হেল্থ শটস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নয়া দিল্লির সালিমার বাগের ‘ফোর্টিস’ হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিভাগের পরামর্শক ডা. পবন কুমার গয়াল বলেন, “চিনি ছাড়াও আরও কিছু খাবার আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে।”
এরকম খাবারের মধ্যে আছে-
চিনি: অতিরিক্ত চিনি খাওয়া শ্বেত রক্ত কণিকাকে ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার: উচ্চ প্রক্রিয়াজাত খাবারে সোডিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে। এছাড়াও এতে অস্বাস্থ্যকর চর্বি এবং কৃত্রিম সংরক্ষক ব্যবহার করা হয়, যা দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে।
অ্যালকোহল: প্রতিদিন অ্যালকোহল গ্রহণ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে হ্রাস করে সংক্রমণ বাড়ায়। ফলে দেহের সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়।
ভাজা খাবার: অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাওয়ার ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে অক্সিডেটিভ চাপ বাড়ে এবং দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ দেখা দেয়।
ট্রান্স ফ্যাট: ফাস্ট ফুড বা বেইক করা খাবার উচ্চ ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করার জন্য দায়ী।
উচ্চ সোডিয়াম বা লবণ সমৃদ্ধ খাবার: উচ্চ সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দেহের রক্ত চাপ বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে।
অতি প্রক্রিয়াজাত শস্য: প্রক্রিয়াজাত শস্যের পুষ্টির মাত্রা ও আঁশের পরিমাণ কম যা অন্ত্রের ‘মাইক্রোবিয়া’তে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষ্মতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন: অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ ঘুম চক্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যে কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়
ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে। এছাড়াও আরও কিছু উপায় মেনে চলার পরামর্শ দেন ডা. গয়াল।
পুষ্টিকর সুষম খাবার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে সচল রাখে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি, ফল, খনিজ উপাদান, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া আবশ্যক।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হালকা মাত্রায় হলেও নিয়মিত শরীরচর্চা করা জরুরি।
দৈনিক সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সংক্রমণ কমাতে সহায়তা করে।
উচ্চ মাত্রায় মানসিক চাপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য ঝুঁকিকর। চাপ কমায় এমন কাজ যেমন- ব্যায়াম ও নিঃশ্বাসের অনুশীলন করা উপকারী।
সুষম খাবার গ্রহণ ও শরীরচর্চা দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখে, স্থূলতার ঝুঁকি কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
ঠিকানা/এসআর