বাণিজ্য সংগঠন আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে ২০২২ সালে। আইনটি বাস্তবায়নের জন্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খসড়া বিধি করেছে। চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়নের আগে মতামতের জন্যে এটি পাঠানো হয় এফবিসিসিআইর কাছে। এফবিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টরা বড় বড় অ্যাসোসিয়েসন বা চেম্বারের প্রতিনিধিত্ব করেন। ওই বিধিতে শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দুটি চাহিদা বা আকাঙ্খা পূরণ হয়েছে। ১. নমিনেটেড ডাইরেক্টর সিস্টেম উঠিয়ে দেয়া এবং ২. একটানা দু’বার পরিচালক হবার পর একবারের জন্য বিরতি দেয়া। আইনটি তৈরির পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন শাখা মতামতের জন্য এফবিসিসিআই এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে মতামতের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রদর্শন করেছে। তখন খারাপ লাগেনি? বা মালুম হয়নি ছোটদের?
কয়েকটি অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বার কিছু কিছু ধারার ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিল। কিন্তু, হালে পানি পায়নি। বেশি আপত্তি ছিল নির্বাচন পদ্ধতির চাতুরি নিয়ে। এফবিসিসিআইর পরিচালক নির্বাচিত হন সাধারণ সদস্যদের ভোটে। আর চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোর নির্বাচন সেক্টর বা ক্লাস্টারভিত্তিতে। বৃহৎ শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের সাথে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের একত্র করে কথিত সেক্টরাল গ্রুপ বা ক্লাস্টার। মোট কথা রাঘব-বোয়ালদের সাথে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নির্বাচন। ফলাফল? ফলাফল যা হবার তাই। অসম এ নির্বাচনে বৃহৎদের সাথে লড়াই করে জেতা ক্ষুদ্রদের জিতে আসার কোনো বাস্তবতাই নেই। প্রাণের মালিকের সাথে জিতবে ছোট বেকারি বা প্লাস্টিক শিল্প মালিক? এস আলম বা বিএসআরএমের সাথে লড়ে বংশালের লোহা-লক্কড়ের ব্যবসায়ী? তা সিনেমায় হয়, বাস্তবে নয়। শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইতে ঢাকা চেম্বার-মেট্রোপলিটান চেম্বারের মত বড়দের প্রতিনিধি আছে, মফস্বলের ক্ষুদ্র চেম্বারগুলোও আছে। ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পব্যবসার অ্যাসোসিয়েসনও আছে। চিকন বুদ্ধিতে তাদেরকে ক্লাস্টারে ফেলা হয়েছে। এতে মনের দুঃখে ছোটরা ফুঁসছে। তারা ফুঁসতেই থাকবে?
বিধিটি সংশোধন করে নির্বাচনের এন্তেজাম আশা করেন ছোট ব্যবসায়ীরা। তাদের কেউ কেউ চাচ্ছেন, নইলে অ্যাসোসিয়েশনের জন্য আলাদা ফেডারেশনও হতে পারে। তাহলে বড়দের হাটে ছোটরা একটু-আধটু পাত্তা পেতেও পারেন। এক্সপোর্টার্স, ম্যানুফ্যাকচারার্স, ইম্পোটার্স, ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলিয়ে চেম্বার গ্রুপ থেকে ২০ জন, অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৩০ জন নিয়ে তাদের একটি সিন্ডিকেট চিন্তাও কাজ করছে। এর বিপরীতেও মত আছে। এই মতাবলম্বীরা দুই মেয়াদ পরপর বিরতি এবং অটো ডিরেক্টর প্রথা রহিতকরণে পঞ্চমুখ। এর বেশি আর কী চাই ছোটদের?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।



মোস্তফা কামাল


