Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

নেতৃত্বের মননশীলতা

নেতৃত্বের মননশীলতা
নেতৃত্ব নিয়ে কিছু কথা বলতেই পারি। সঠিক নেতৃত্বের প্রভাবে একটি পরিবার, প্রতিষ্ঠান, দেশ এমনকি বিশ্বও বদলে যেতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাস আসলে নেতৃত্বের ইতিহাস। একজন যোগ্য নেতা ও তার নেতৃত্বের হাত ধরে একটি নতুন সভ্যতার জন্ম হতে পারে, শুরু হতে পারে নতুন যুগের সূচনা।
মানুষের মাঝে যদি সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলি থাকে, তাহলে তার জীবন খুব সহজেই বদলে যেতে পারে। সঠিক নেতৃত্বের ফলে একটি পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দেশ এমনকি সারা বিশ্ব বদলে যেতে পারে। দেশের উন্নতি তখনই হয়, যখন একজন যোগ্য নেতা নেতৃত্ব দেন। একজন যোগ্য নেতা সব সময় সঠিক নেতৃত্বই দেবেন। নেতৃত্ব নিয়ে অনেকেই অনলাইনে উক্তি স্ট্যাটাস ও কবিতা অনুসন্ধান করেন। আজকের এই পোস্ট থেকে নেতৃত্ব নিয়ে উক্তি স্ট্যাটাস ও কবিতা জানতে পারবেন।
জীবনে সঠিক নেতৃত্ব পাওয়াটা অনেক প্রয়োজন। কেননা সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলি যদি একজন ব্যক্তির মাঝে থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তি সব সময় উন্নতির দিকেই এগিয়ে যাবে। আর যদি একজন ব্যক্তির মাঝে সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলি না থাকে, তাহলে সে জীবনে ভালো কিছু অর্জন করতে পারবে না।
শিক্ষা হলো নেতৃত্বের জননী। নেতৃত্ব হলো প্রভাব বিস্তার করা। যেখানে নেতৃত্ব নেই, সেখানে মানুষ ধ্বংস হয়। নেতৃত্ব ও শিক্ষা একে অপরের জন্য অপরিহার্য। নেতৃত্ব হলো গড়পড়তার চেয়ে বেশি কিছু হওয়ার চ্যালেঞ্জ। নেতৃত্ব হলো দৃষ্টিকোণকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার ক্ষমতা। নেতৃত্ব হলো দায়িত্ব নেওয়া, অজুহাত তৈরি করা নয়।
আপনি জিনিসগুলো পরিচালনা করেন, অর্থাৎ আপনি মানুষকে নেতৃত্ব দেন। নেতৃত্ব হলো অন্য কাউকে দিয়ে এমন কিছু করানো, যা আপনি করতে চান। আমাকে নেতৃত্ব দিন, আমাকে অনুসরণ করুন বা আমার পথ থেকে সরে যান।
যে কখনোই আনুগত্য করতে শেখেনি, সে কখনো ভালো নেতৃত্ব দিতে পারে না। নেতৃত্বের চর্চা হয় যতটা না কথায়, তার চেয়ে বেশি আচরণে ও কাজে। নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য হলো তিনি পথ জানেন, পথে যান এবং পথ দেখান। ব্যবস্থাপনা হলো সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার দক্ষতা; নেতৃত্ব নির্ধারণ করে যে মইটি দেয়ালের সঙ্গে ঠিকভাবে হেলেছে কি না। সকল সফল প্রচেষ্টার ৯০ শতাংশের চাবিকাঠি হলো নেতৃত্ব। আমার কাছে নেতৃত্ব মানে কর্তব্য, সম্মান, দেশ। এর অর্থ চরিত্র এবং সময়ের সঙ্গে খেয়াল রাখা।
নেতৃত্ব হলো একজন ব্যক্তির দৃষ্টিকে উচ্চ দর্শনে নিয়ে যাওয়া, একজন ব্যক্তির কর্মক্ষমতাকে উচ্চতর মানের দিকে উন্নীত করা, তার স্বাভাবিক সীমাবদ্ধতার বাইরে একজন ব্যক্তিত্বের নির্মাণ করা।
নেতৃত্ব মানুষকে সেখানে নিয়ে যায়, যেখানে সে যেতে চায়। আর একজন মহান নেতা মানুষকে এমন জায়গায় নিয়ে যান, যেখানে তারা যেতে চায় না কিন্তু যাওয়া উচিত। নেতৃত্ব হলো একটি রাখাল বালকের মতো, সে পালের পেছনে থাকে, সবচেয়ে চতুর লোককে এগিয়ে যেতে দেয়, অন্যরা অনুসরণ করে, বুঝতে পারে না যে তারা পেছন থেকে নির্দেশিত হচ্ছে। কোনো ভোটে এমনকি নির্বাচনের ফলাফলেও নেতৃত্ব পরিমাপ করা যায় না। এটি শুধু সময়ের সুবিধার সঙ্গে সত্যিই দেখা যায়। ২০ বছরের দৃষ্টিকোণ আর ২০ দিনের দৃষ্টিকোণ এক নয়।
একজন মানুষের মাঝে যদি সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলি থাকে, তবে একদল অযোগ্য লোককেও তিনি অনেক বড় অর্জনের দিকে নিয়ে যেতে পারেন। নেতৃত্বের উক্তি দুর্বলের বুকে সাহস জোগায়, অবিশ্বাসীর মনে বিশ্বাসের জন্ম দেয়। মানুষ একা কিছু করতে পারে না। একজন মানুষের স্বপ্ন যত বড়, তার দলকেও তত বড় হতে হয়। একজন সত্যিকার নেতা তার নিজের স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে পারেন বহু মানুষের মাঝে। নেতাকে অনুসরণ করে তারা নিজের শ্রম, ঘামÑএমনকি রক্ত দিতেও দ্বিধা করে না।
আপনি জীবনের যে ক্ষেত্রেই বড় হতে চান না কেন, নেতৃত্বের গুণাবলি আপনার মাঝে থাকা আবশ্যক। বিখ্যাত নেতা, লেখক, উদ্যোক্তা, দার্শনিক ও গুণীজনেরা যুগে যুগে যেসব নেতৃত্বের বাণী দিয়ে গেছেন; তার মাঝে লুকিয়ে আছে নেতার গুণাবলি অর্জন করার অনেক পরামর্শ। নেতৃত্ব নিয়ে বলা সেই সব উক্তি থেকে যেন আপনিও নেতা হওয়ার অনুপ্রেরণা ও উপায় খুঁজে পান, সে কারণেই আজ আমরা আপনার সামনে নেতৃত্বের পরামর্শ নিয়ে হাজির হয়েছি।
নেতারা নিরপেক্ষতা ও সততা দিয়ে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন। শ্রেষ্ঠ নেতা সে-ই, যার অধীনে কোনো কিছু অর্জিত হলে তার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক মানুষই ভাবে যে তারা সবাই মিলে কাজটি করেছে। নেতৃত্ব মানে তোমার উপস্থিতিতে অন্যরা উন্নতি করবে এবং তোমার অনুপস্থিতিতেও সেই উন্নতি বজায় থাকবে। যোগ্য ও শক্তিমান নেতা সবাইকে একেক আদর্শে নিয়ে আসে।
জাহাজ বানাতে চাইলে তোমার লোকদের কাজ ভাগ করে দিয়ে নির্দেশ দিতে থাকার বদলে তাদের সমুদ্রের অপার সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাও। নেতাদের উচিত তার লোকদের জ্ঞান ও চিন্তাশক্তি বাড়ানোর জন্য দিকনির্দেশনা দেওয়া। সব সিদ্ধান্ত নেতাদের একার নেওয়া উচিত নয়। একজন নেতা হিসেবে আমি নিজে অতিরিক্ত কষ্ট করি, যাতে অন্যরাও তা দেখে নিজের সেরাটা দিতে উৎসাহিত হয়।
নেতা হওয়ার চ্যালেঞ্জ হলো শক্তিমান কিন্তু অতি কাঠখোট্টা না হওয়া, দুর্বল না হয়েও দয়াশীল হওয়া, কঠোর হয়েও অত্যাচারী না হওয়া, চিন্তাশীল হয়েও অলস না হওয়া, বিনীত হয়েও নরম না হওয়া, গর্বিত হয়েও অহংকার না করা এবং হাসিখুশি হয়েও হাসির পাত্র না হওয়া। যদি তোমার কাজ অন্যদের স্বপ্ন দেখতে, শিখতে এবং বড় কিছু হতে উৎসাহিত করে, তবে তুমি দারুণ একজন নেতা। মানুষ সাহসীদের নেতা বানায়। তুমি যদি সাহস করে মানুষের অধিকারের কথা বলো, তাদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করো, তারা নিজেরাই তোমাকে তাদের নেতা বানাবে।
নেতারা জন্মায় না, কঠোর চেষ্টা ও ত্যাগের মাধ্যমে একজন মানুষ নেতায় পরিণত হয়। জীবনে যেকোনো বড় অর্জনের জন্যই এগুলো প্রয়োজন। নেতৃত্ব মানে বলপ্রয়োগ ছাড়াই অন্যদের একটি নির্দিষ্ট পথে চালিত করার ক্ষমতা। যদি কেউ সবকিছু নিজে করতে চায় এবং সব কৃতিত্ব নিজে চায়, সে কখনো বড় নেতা হতে পারবে না। নেতৃত্ব কোনো টাইটেল বা পদ নয়, নেতৃত্ব হলো একজন মানুষের অন্যদের প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা। নেতৃত্ব মানে কঠিন সময়েও তোমার টিমকে তাদের সেরা কাজটি দিয়ে কিছু অর্জন করার জন্য অনুপ্রাণিত রাখতে পারা। সত্যিকার নেতা হওয়া মানে অন্যদের সফল হওয়ার পথ করে দেওয়া এবং তাদের সফল হতে দেখা। নেতা মানে যে অন্যদের মনে আশা জাগিয়ে রাখতে পারে। নেতৃত্ব মানে অন্যদের জীবনকে সুন্দর করার সুবর্ণ সুযোগ। এটা নিজের লালসা পূর্ণ করার সুযোগ নয়। একজন নেতার সাফল্যের ৯০% নির্ভর করে তার অনুসারীরা কী চায়। যেদিন তোমার লোকেরা তাদের সমস্যা নিয়ে তোমার কাছে আসা বন্ধ করে দেবে, সেদিনই বুঝবে তুমি নেতৃত্ব হারিয়েছ। বেশির ভাগ সময়েই সবচেয়ে জোরালো গলার লোকটি সবচেয়ে বাজে নেতা হয়, নিজের নেতৃত্বের ব্যর্থতা ঢাকতেই সে চড়া গলায় কথা বলে।
ঘৃণার কারণে মন অন্ধকার হয়ে যায়, স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি কাজ করে না। নেতা হতে হলে ঘৃণা করা যাবে না। ক্ষমতাবান সে-ই, যাকে অন্যরা ক্ষমতাবান বলে বিশ্বাস করে। এটা একটা বিভ্রম, দেয়ালের গায়ে ছায়ার মতো। আর একজন অতি ক্ষুদ্র মানুষের ছায়াও বিশাল হতে পারে। সত্যিকার নেতা আদর্শ খোঁজে না, সে আদর্শের জন্ম দেয়। যারা জন্মভূমির সঙ্গে প্রতারণা করেছে, আমি তাদের অনুসরণ করি না। পাহাড়চূড়া নেতাদের অনুপ্রাণিত করে, কিন্তু সমতলেই তারা নেতায় পরিণত হয়।
একজন সত্যিকারের নেতাকে কথায় বিনয়ী কিন্তু কাজকর্মে অনেক সাহসী হতে হয়। একজন নেতা যদি সৎ হয়, তবে তার অনুসারীরা অসৎ হওয়ার সাহস পায় না। একজন নেতা সব সময় মানুষের ভালোবাসা পায়, একজন বসকে তার অধীনরা ভয় পায়। আমার কাছে নেতার সংজ্ঞা হলো তার অবশ্যই একটি দর্শন থাকতে হবে এবং কোনো সমস্যাতেই সে ভয় পাবে না। তার বদলে সে তা সমাধানের জন্য কাজ করবে। আর সবচেয়ে জরুরি বিষয় হ হলো তাকে সৎ হতে হবে।
তাহলে সত্যিকারের নেতা কীভাবে হওয়া যায় এবং সত্যিকার নেতৃত্ব কী ও কেমন হওয়া উচিত, তার একটা ধারণা আমাদের থাকা দরকার।
লেখক : গবেষক ও সমাজসেবক
 

কমেন্ট বক্স