ছোট্ট আবীর। বয়স ৭/৮ বছর। গান শুনতো পছন্দ করে। আমরা সব সময় গান শুনি। ‘আমার এক নয়ণ তো দেখে না যে আরেক নয়ণ রে, তবু দুই নয়নে খোঁজে আমার প্রাণের স্বজনরে। বন্ধুরে, দেখা দাও না কথা কওনা রইলা কোন দূরে।’ জানতে চাই- বাবা এ গান কোত্থেকে শিখলে? টিভি দেখে। দাদুও সুন্দর গায়। বুঝতে পারলাম গান শেখার উৎস। ছোটবেলা থেকেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করে ভিন্ন কিছু করবে।
আবীর ধীরে ধীরে বড় হলো, এক সময় কলেজে প্রবেশ করলো। মায়ের কাছে বায়না ধরলো বিড়াল পুষবে। মায়ের প্রচণ্ড অনীহা। কাজের লোক পাওয়া যায় না। মায়ের কষ্ট বাড়বে। আবীরের সুপ্ত ইচ্ছে কখনোই মরে যায়নি। সুযোগ পেলেই আবার সেই একই আবদার চলতো।
বাবা মসজিত থেকে বাড়ি ফিরলেন। বৃষ্টির দিন। আবীরকে বলেন- একটি ছোট বিড়াল দেখতে পেলাম। বৃষ্টিতে ভিজছে। আবীর বেরিয়ে পড়লো। খুঁজে নিয়ে আসলো সেই ছোট্ট বিড়াল।
নাম দেয়া হলো টুিন। টুনির সেবা শুশ্রুষা-পরিচর্যা চললো। নিয়মিত চেক-আপও চলতো। আবীর খুশিতে ভাসছে। বন্ধুকে নিয়ে মহাব্যস্ত। প্রিয় বন্ধুর জন্য ভালো ফল, পছন্দনীয় মাছ- এগুলো আর ভাবনায় প্রভাব ফেলে। আবীরের কল্পনা বাস্তবায়িত হলো।
টুনি খুব বাধ্য। মনিবের জন্য সারাদিন বসে থাকে। অপেক্ষার আনন্দ বোঝে। দু’জন দু’জনের বন্ধু, খেলার সাথী। এভাবেই দু’জনের দিনগুরোর চলে যায়।
বাবা-মায়ের সাথে আবীর পবিত্র উমরাহ করতে যাবে। খুবই খুশি। কিন্তু টুনির কী হবে? কোন কূল-কিনারার পায় না। অবশেষে বিশ্বস্ত একজনকে পাওয়া গেলো। আবীরও স্বস্তি ফিরে পেলো।
বন্ধুবিহীন টুনি। কিছুই ভালো লাগে না। সারা ঘর এলোপাথারি দাপাদাপি। কারণ এই মনিব সেই মনিব না। বুয়া বোঝাতে চেষ্টা করে- তোমার মনিব আমার মনিব একজনই। কিন্তু কিছুতেই টুনিকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলো না।
টুনি বদলে গেছে।
আবীর ফিরে আসে। শান্ত টুনি আজ অশান্ত। গ্যারেজে থাকার সুযোগ করে দেয়া হয়। আবীর আশাবাদী। এবার নিশ্চয়ই প্রকৃতির আলো-বাতাসে টুনির স্বাভাবিকতা দেখবে। কিছুদিন পর অভিযোগের পর অভিযোগ। টুনিকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র চলে। এক সময় গুম করা হয়। আবীর ক্ষোভে ফেটে পড়ে। থানা-পুলিশ-তদন্ত সবই চলে। বুঝতে বাকি হয় নাÑ এটা কার কাজ? প্রমাণিতও হয়। এক পর্যায়ে সেই মানুষটি দু’হাত জোর করে মাফ চায়। আরেকটা টুনি এনে দিতে প্রতিজ্ঞা করে।
কিন্তু অবীর সেই টুনিকেই চায়। কলেজ থেকে ফেরার পথে টুনিকে খোঁজে। যদি কোথাও উপস্থিতি টের পাওয়া যায়- তখনই ধরে নিয়ে আসবে। সমস্ত হৃদয়জুড়ে শুধু টুনি আর টুনি।
ভাষাহারা আবীর। কোথায় আমার টুিন? কোথায় আমার প্রিয় বন্ধু?
আবীরের আম্মুকে ফোন করি। ওর কথা জানতে চাই। অনেক ভালো ভালো উপহার পাঠানোর প্রলোভন দেখাই। কিছুতেই কিছু হয় না।
আবীর সারাদিন কি করে?
ব্যাকুল হয়ে বসে থাকে। যদি প্রিয় বন্ধুর খোঁজ পায়।
আবারও জিজ্ঞেস করি- আর কি করে?
চোখের জলে নয়ণ- সেই চেনা সুরে একটাই গান গায়। আমার এক নয়ণ তো দেখে নারে, আর এক নয়ণে, তবু দুই নয়ণে খোঁজে আমার প্রাণের স্বজনরে। বন্ধুরে দেখা দেও না কথা কও না রইলা কোন দূরে।
লেখক : সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ।