Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

সোনামণিদের জন্য লেখা ধনঞ্জয় সাহার ‘স্বাধীনতার ইতিহাস’

সোনামণিদের জন্য লেখা ধনঞ্জয় সাহার ‘স্বাধীনতার ইতিহাস’
‘স্বাধীনতার ইতিহাস’ ছড়াকার ধনঞ্জয় সাহা রচিত একটি ছড়ার বই। ছড়াগুলো পড়ে গভীর আবেশে ভাবছি, বইটির নাম হওয়া উচিত ছিল ‘ইতিহাসের আদর্শলিপি’। তবে বইটির নামকরণ ইতিহাসের আদর্শলিপি না হলেও ইতিহাসের আদর্শলিপি হিসেবেই তা প্রতীয়মান। ছড়া সাহিত্যের এমন একটি শাখা, যেখানে সরলতা ও সহজবোধ্যতা প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তা যদি হয় শিশুতোষ, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। এ কথা শোনার পর অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কি ছড়ার মাধ্যমে সমাজ ও মানুষের প্রতি সাহিত্যের যে দায়বদ্ধতা, তা অনুপস্থিত থাকবে বা থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়? আমি বলব অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, যা একজন সফল ছড়াকার তার সার্থক ছড়ায় সন্নিবেশ ঘটাতে পারেন। ধনঞ্জয় সাহা নিপুণভাবে তা করতে পেরেছেন।
‘স্বাধীনতার ইতিহাস’ বইটি ছন্দনির্ভর একটি শিশুতোষ ছড়ার বই, যাতে রয়েছে মুগ্ধতা ছড়ানোর মতো অনেক বিষয়। প্রথমেই আসি ছড়াকারের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস, যা তিনি বলতে চেয়েছেন এবং সফলভাবে তিনি তা বলতে পেরেছেন। ছড়াকার এখানে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। পলাশী থেকে পঁচাত্তরÑএই পর্যন্ত ছড়াকার বাংলাদেশের ইতিহাসের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করেছেন। পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার সূর্য ভূলণ্ঠিত হওয়ার পর সিপাহি বিদ্রোহ, অসহযোগ আন্দোলন, ভারত ভাগ, পাকিস্তান সৃষ্টি, ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, উনসত্তর, সাতই মার্চ, পঁচিশে মার্চ, ষোলোই ডিসেম্বর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছন্দাসিকভাবে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় বিবৃত করেছেন; যা হয়তো অনেক ছড়াকার দুর্বোধ্যতার কথা ভেবে করতে চাইবেন না।
এবার আসি বইটির ছড়াগুলোর নির্মাণশৈলী ও শব্দচয়নে। শিশু উপযোগী সারল্যভরা ছন্দ ও শব্দচয়ন বইটিকে অন্য রকম অনন্যতায় পৌঁছে দিয়েছে। শব্দচয়নে এত সারল্য নিয়ে জটিল একটি বিষয়কে অর্থপূর্ণভাবে প্রকাশ করা সত্যিই বাহবা পাওয়ার যোগ্য। খুব কম ছড়াকারই এমন কৃতসাধনে পারদর্শী। ছন্দ বিনির্মাণে তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে। সুরে সুরে এমনভাবে ছড়াকার তার কথাগুলো বলেছেন যে প্রতিটি শিশু তা আনন্দ নিয়ে পড়তে বাধ্য হবে। বইটিতে আরও একটি দৃষ্টিনন্দন বিষয় বিমোহিত করার মতো, তা হলো ছড়াগুলোর নামকরণ। ছড়াকার নামকরণে কুশলতার পরিচয় দিয়েছেন। ছড়াগুলোর নাম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, তারিখ ও আন্দোলনের নাম; যে নামগুলো একটি শিশুমনে ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করবে। একটি শিশু ছড়াগুলো পড়ে বিষয়গুলোর সঙ্গে পরিচিত হবে, ভবিষ্যতে ওই বিষয়গুলোর ওপর বিশদ জ্ঞান আহরণের পথে ধাবিত হবে।
সাহিত্যে ইতিবাচকতা ও নেতিবাচকতা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ইতিবাচকতার মতো নেতিবাচকতাও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে। তাই হয়তো নানা ইতিবাচকতার ভেতরেও বইটিতে সমালোচিত হওয়ার মতোও কিছু দিক আছে, যা থাকাটা স্বাভাবিক। পৃথিবীতে কোনো সৃষ্টিই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। সরল ছন্দের এই ছড়ার বইটিতে সহজ শব্দের সন্নিবেশ থাকলেও অনেক কঠিন শব্দের ব্যবহার বইটিকে শিশু অনুপযোগী করেছে অনেক ক্ষেত্রে। আরেকটি বিষয় হলো শিশুদের জন্য রচিত বইটিতে এত বিশদ ইতিহাস এভাবে বিবৃত করার ফলে কোমল শিশুমনে চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এতে শিশুমনে আগ্রহের বিচ্যুতিও ঘটতে পারে। দুর্বোধ্য শব্দের ব্যবহার সৃষ্টিটিকে সমালোচনার সম্মুখীন করবে। যদিও লেখক বিষয় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু দুর্বোধ্য শব্দের প্রয়োগ করেছেন বলে আমার ধারণা। এমন আরও অনেক ইতিবাচক ও নেতিবাচক অনুষঙ্গের সন্নিবেশে ‘স্বাধীনতার ইতিহাস’ নামক এই ছড়ার বইটি। তবে সব মিলিয়ে বইটি শিশুদের জন্য একটি অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
লেখাটি কুইন্স লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত সাহিত্যিক নীরা কাদরী সঞ্চালিত
‘লেখকের অঙ্গন’ অনুষ্ঠান উপলক্ষে রচিত।

কমেন্ট বক্স