Thikana News
২৩ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
মা দিবস পালিত

কর্মব্যস্ত মায়েরা কি সন্তানের দিকে খেয়াল রাখছেন?

কর্মব্যস্ত মায়েরা কি সন্তানের দিকে খেয়াল রাখছেন?
বিশ্ব মা দিবস পালিত হলো ১২ মে রোববার।একজন সন্তান তার মাকে ভালোবাসে-এটা খুবই স্বাভাবিক। সন্তানের জন্য মায়ের ভালোবাসা প্রতিদিনের প্রতি মুহূর্তের। কিন্তু এই ভালোবাসাও মাঝেমধ্যে সন্তানের জন্য যন্ত্রণাদায়ক হয়ে পড়তে পারে। যদি সন্তান মায়ের ভালোবাসার গুরুত্ব না বোঝে এবং মা-বাবার কথাগুলো শুনতে তার ভালো না লাগে। অনেক সন্তানই বাবা-মায়ের কড়া শাসন পছন্দ করে না। তারা তাদের মতো থাকতে চায়। কোভিড-পরবর্তী সময়ে শিশু-কিশোরদের অনেকের মধ্যেই ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। অধিকাংশ সন্তান স্বাভাবিক আচরণ এবং মা-বাবাসহ পরিবারের সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখলেও কেউ কেউ ভিন্ন আচরণ করছে। অনেক বাবা-মা কাজে ব্যস্ত থাকায় সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিতে পারছেন না। এ নিয়ে তাদের পরিবারের সন্তানদেরও তেমন কোনো অভিযোগ নেই। তারা ধরেই নিয়েছে, এখানে এটাই বাস্তবতা। ওই সন্তানেরা নিজেদের মতোই প্রতিষ্ঠিত হতে চেষ্টা করছে, অনেকে সফলও হচ্ছে। এসব পরিবারের উঠতি বয়সের সন্তানদের নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা নেই।
কিন্তু এর বিপরীত চিত্রও আছে। বাবা-মায়ের কাজে ব্যস্ত থাকার সুযোগ নিয়ে উঠতি বয়সী টিনএজার ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজের পড়ালেখার চেয়ে বেশি মনোযোগী মোবাইল ফোন, গেম নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন জিনিস নিয়ে তারা ব্যস্ত থাকে। দিনের পর দিন তারা ওই সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটায়। ভালো সাইটগুলোতে ভিজিট না করে উপকারে আসে না এমন সাইটে ঢুকে সময় কাটায়। ফলে ইতিবাচক কোনো ফল পায় না। নেতিবাচক জিনিসে থাকার কারণে সেগুলো তাদের মনের ওপর প্রভাব ফেলে। সেখানে অন্যরা কী করে তা দেখে এবং তা রপ্ত করার চেষ্টা করে। এরা সাধারণত ঘরের বাইরে খুব একটা যায় না। নেহাত প্রয়োজন ছাড়া, এমনকি নিজের খাবার দরকার হলেও যায় না। ঘরেই বেশির ভাগ সময় থাকে। নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকতে পছন্দ করে। সারা দিন নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে চেয়ারে কিংবা বিছানায়ই বসে থাকে। ঘরে-বাইরে সব জায়গায় মোবাইল নিয়ে যায়। দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখে। সারা দিন পর্দা টেনে অন্ধকার ঘরে থাকতে পছন্দ করে। বাথরুমে গিয়েও গেম খেলে কিংবা ভিডিও দেখে। তারা ভিডিও গেম খেলতে খেলতে টায়ার্ড হয়ে যায়। তখন নিজের মেধা ও শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে না। ফলে সময়মতো হোমওয়ার্ক শেষ করতে পারে না। অ্যাসাইনমেন্ট ঠিকমতো জমা দিতে পারে না। সবকিছু শেষ সময়ে এসে তাড়াহুড়ো করেই করে। এসব কারণে ভালো ফলাফল করতে ব্যর্থ হয়। এপি, রিজেন্ট, স্যাটসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষায়ও ভালো ফল করতে পারে না। ক্লাসের পরীক্ষায় ভালো করলেও ফাইনালে ভালো ফল করতে পারে না। এমনকি তারা বাবা-মায়ের কোনো কথা শুনতে চায় না। নিজেরাও কথা বলে না। চুপচাপ থাকে। বাসায় যখন থাকে কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। পরিবারের কেউ কোনো কথা বললে শোনে না। ব্যস্ত থাকে নিজেকে নিয়েই। আর সময়মতো নাওয়া-খাওয়া করে না। কেউ কেউ তিন-চার দিনেও গোসল করে না। হাতে বড় নখ রাখে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে না। পরিবারের কোনো কাজ তারা করে না। এসব সন্তানকে নিয়ে অনেক পরিবার কঠিন অবস্থার মধ্যে আছে। কিন্তু তাদের বাবা-মা এটা না পারছেন কাউকে বলতে, না পারছেন সহ্য করতে।
পরিবারের কোনো ছেলেমেয়ের ক্ষেত্রে এমনটা এক দিনে ঘটেনি। বেশির ভাগই হয় বাবা-মায়ের অযত্ন আর অবহেলার কারণে। এসব বাবা-মা সন্তানদের সময় দেন না। সন্তানেরা দিনের পর দিন একা থাকে। বাবা-মায়ের সময় নেই তার খবর রাখার। এসব সন্তানেরা অবহেলা থেকে আস্তে আস্তে কেবল নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
অনেক সময় মায়েরা সন্তানের সামনে বসে বসে মোবাইল টিপতে থাকেন আর সন্তানকে পড়তে বলেন। সন্তান কী পড়ছে, সেটা দেখেন না। এসব সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের দূরত্ব বাড়তে থাকে। এ কারণে সন্তানেরা চায় বাবা-মাকে ছেড়ে দূরে চলে যেতে। সে ক্ষেত্রে তারা কলেজে ওঠার সময়টাকে প্রাধান্য দেয়। কলেজে পড়ার নাম করে তারা বাবা-মায়ের কাছ থেকে দূরে চলে যায়। দূরে গিয়েও তারা গেম খেলে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যস্ত থাকে, খারাপ ভিডিও দেখে। এতে তাদের মনমানসিকতা নষ্ট হয়, শরীরও খারাপ থাকে। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া ও পড়ালেখা না করায় কলেজে তারা ভালো ফলাফল করতে পারে না। কেউ কেউ কলেজ থেকে বাদ পড়ে, কেউ বিরতি নেয়, কেউবা অন্য কিছু করে। ফলে এই সন্তানদের বেশির ভাগই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় পরিবারের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক ভালো থাকে না।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এক ব্যক্তি বলেন, এখানে অনেক বাবা-মা এতটাই ব্যস্ত থাকেন, এতটাই পয়সার পেছনে ছোটেন যে তারা সন্তানকে সময় দিতে পারেন না। কেউ কেউ দিনে ১৬-১৭ ঘণ্টাও কাজ করেন। বাবা-মা সারা দিন কাজ করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তারা সন্তানের সঙ্গে ভালো করে কথা বলার সময়ও পান না। এসব সন্তান একাকী থাকতে থাকতে অনেক সময় সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাই প্রত্যেক সন্তানের বাবা-মায়ের উচিত তার যত্ন নেওয়া, তাকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া ও তাকে ভালোবাসা। খেয়াল-খুশিমতো চলতে না দিয়ে তাকে ভালো-মন্দ শেখানো।
আরেকজন বিশেষজ্ঞ বলেন, কোভিডের সময় ঘরে থাকতে থাকতে অনেক সন্তান মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। তাদেরকে একা দোষ দিলে হবে না। তারা পরিবারের কাছ থেকে যথাযথ মনোযোগ ও গুরুত্ব না পাওয়ার কারণে সমস্যাগ্রস্ত হয়েছে। এই সন্তানদের বাইরে বের করে আনতে হবে। তাকে বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, সন্তানকে সময় দিতে হবে। তাদের প্রতি যত্ন নিতে হবে। তারা কখন কী করছে, সেটা দেখতে হবে। লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। তাদের সঙ্গে পারিবারিক সব কথা শেয়ার করতে হবে। তাদের কথা শুনতে হবে। তাদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। সন্তান ভুল করলে তাকে বুঝিয়ে সঠিক পথে আনতে হবে। অতিরিক্ত শাসন সন্তানের জন্য উপকার বয়ে আনবে না। বরং আদর করে, স্নেহ দিয়ে তাকে বোঝাতে হবে। পরিবারের ছোটখাটো কাজগুলো তাকে দিলে আস্তে আস্তে সে দায়িত্বশীল হবে। সব মিলিয়ে বলা যায়, সে নিজের যে বৃত্ত তৈরি করেছে, তার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বুঝিয়ে তাকে সেই বৃত্ত থেকে বের করে আনতে হবে।

 

কমেন্ট বক্স