সম্প্রতি এমন এক কোষের খোঁজ মিলেছে, যা দিয়ে মানবদেহের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ রক্তনালী সারিয়ে তোলা সম্ভব বলে দাবি গবেষকদের।
মানবদেহের রক্তনালী সম্পর্কিত রোগের চিকিৎসা পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে এ যুগান্তকারী আবিষ্কারটি।
এ গবেষণায় গবেষকরা এমন এক ‘প্রোটিন মার্কার’ শনাক্ত করেছেন, যা দিয়ে এমন ক্ষতিগ্রস্থ রক্তনালী সারিয়ে তোলার মতো বিশেষ ধরনের কোষগুলো চিহ্নিত করা যাবে।
গবেষণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ‘এন্ডোথেলিয়াল ডিজফাংশন’ রোগের জন্য নতুন চিকিৎসা ব্যবস্থা তৈরির সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। আর এ ধরনের শারীরিক অবস্থা করোনারি ধমনীর রোগেও ভূমিকা রাখে।
রোগটির ফলে মানবদেহের ধমনীতে রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়, পাশাপাশি এটি হৃৎপিণ্ডে রক্ত প্রবাহও কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও থাকে।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সার্কুলেশনে’ প্রকাশিত এ গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ‘ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’-এর সার্জারি বিভাগের সহকারী গবেষণা অধ্যাপক ড. চ্যাং-হিউন গিল।
“গবেষণাটিতে প্রথমবার দেখা গেছে, একটি একক সম্ভাব্য মার্কার রক্তনালীর ‘ক্লোনাল রিপুলেটিং এন্ডোথেলিয়াল সেল (সিআইসিএস)’ শনাক্ত করতে সক্ষম,” ব্যাখ্যা করেন তিনি।
হৃদরোগ বা অন্যান্য কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালী সারানোর মতো ‘সেল থেরাপি’ বিকাশের জন্য এ ধরনের কোষ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
মানুষের রক্তনালীর ভেতরের আস্তরণ তৈরি হয়ে থাকে ‘এন্ডোথেলিয়াল’ কোষ থেকে, যা দেহে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এ গবেষণায় ‘এবিসিজি২’ নামের প্রোটিন তৈরি করার জন্য এ কোষের দিকে মনযোগ দিয়েছে গবেষণা দলটি।
এ ধরনের কোষগুলোতে গুচ্ছ আকারের কলোনী তৈরির ক্ষমতা আছে, যেখানে এরা নিজেদেরকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে নতুন রক্তনালী গঠনে সহায়তা করে। এমনকি হার্ট অ্যাটাকের পর হৃদযন্ত্রের টিস্যু ও রক্তনালী সারিয়ে তোলার ক্ষেত্রেও এ সক্ষমতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণায় ড. গিল ও তার গবেষণা দল এইসব কোষের গভীরে প্রবেশ করে এর বিভিন্ন এমন জিন ও প্রোটিন বিশ্লেষণ করেছেন, যার ফলে সরাসরি এদের আচরণকে সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়েছে।
এর ফলাফলে গবেষকরা খুঁজে পান, রক্তনালী গঠন ও নতুন করে টিস্যু তৈরির যেসব উপায় আছে, সেগুলো ‘এবিসিজি২’র বিভিন্ন কোষে বিশেষভাবে সক্রিয়। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, রক্তনালীর ক্ষতি সারানোর মতো বিশেষ ক্ষমতা আছে কোষগুলোতে।
শুধু হৃদরোগ নয়, বরং এর বাইরেও এ ধরনের কোষের গুরুত্ব রয়েছে।
“এবিসিসিআরইসিএস’ এমন এক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কোষ হয়ে উঠছে, যা ‘পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজিজ’, ‘ডায়াবেটিস, ‘ডায়াবেটিক প্রলিফারেটিভ রেটিনোপ্যাথি’, গুরুতর কিডনি রোগ ও কার্ডিওভাসকিউলার রোগের ভোগা রোগীদের বেলায় ব্যবহার করা যেতে পারে,” বলেছেন ড. গিল।
এ যুগান্তকারী আবিষ্কারের গুরুত্বপূর্ণ দিক হল— ইঁদুর ও মানুষ উভয়ের দেহে এসব কোষ শনাক্ত করতে কাজ করে ‘প্রোটিন মার্কার’।
গবেষণা দলটি সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ধরনের এন্ডোথেলিয়াল কোষ নিয়ে পরীক্ষা করছে। তাদের এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ হলেও এসব কোষ কীভাবে কাজ করে ও কীভাবে এরা কার্যকরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ রক্তনালী সারানোর চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে তা ভালভাবে বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
ঠিকানা/এসআর