লন্ডনের চীন দূতাবাস “তথ্য বিকৃতি” বলে এই অভিযোগকে অস্বীকার করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছে “পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হ্যাকিং সাম্রাজ্য এবং আন্তর্জাতিক সাইবার চোর।”
চীন সরকারের মদদপুষ্ট হ্যাকারদল যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও মাইক্রোসফটসহ ২৫টি প্রতিষ্ঠানের ইমেইল অ্যাকাউন্টে গত মে মাস থেকে গোপনে প্রবেশ করছিলো –বলেছে মার্কিন সরকার।
ফেডালের সরকারের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট “বেশ নিয়মিত” ভাবেই ফাঁস হচ্ছিলো এবং ভবিষ্যতে এমন আক্রমণ ঠেকাতে সেগুলোর বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে –এবিসি’র ‘গুড মর্নিং আমারিকা’ অনুষ্ঠানের এক সাক্ষাতকারে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্ঠা জ্যাক সালিভান।
এদিকে মার্কিন স্বরাষ্ট্র এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পৃথক বিবৃতিতে এই সাইবার হামলায় আক্রান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমন্ডো এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে অনুপ্রবেশ করে দলটি, সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলেছে মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট।
এই হামলায় আক্রান্তদের তালিকায় মন্ত্রী পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসাবে এখন পর্যন্ত কেবল রাইমন্ডোর নামই জানা গেছে, বলেছে রয়টার্স।
মাইক্রোসফটকে ব্যবহার করেছে দলটি
চীনের হ্যাকাররা মার্কিন সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তি, সরকারি অ্যাকাউন্ট এবং প্রায় ২৫টি কোম্পানির ওপর মে মাস থেকে সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছিলো, মাইক্রোসফটের এমন বক্তব্যকে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়টির মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, গত জুন মাসে কিছু সন্দেহজনক গতিবিধি তাদের নজরে এলে তারা মাইক্রোসফটের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সে সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার কাউকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকে।
স্টর্ম-০৫৫৮ নামধারী হ্যাকারদলটি ডিজিটাল অথেনটিকেশন টোকেন জালিয়াতি করে আউটলুক সার্ভিসের মাধ্যমে ওয়েবমেইলে ঢুকে পড়ে যা মে মাস থেকে শুরু হয় –একটি বিবৃতিতে বলেছে মাইক্রোসফট।
“রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এমন হামলায় মাইক্রোসফট তাদের কর্মীদের মাধ্যমে সরাসরি আক্রান্ত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে, সেইসঙ্গে এই ঘটনার তদন্ত ও ব্যবস্থা নিতে তাদেরকে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করেছ।”
কোন কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকার এই হামলায় আক্রান্ত হয়েছে তাদের তালিকা প্রকাশ না করলেও কোম্পানিটি জানায় হামলাকারীরা প্রথমে পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নিশানা করেছিলো।
লন্ডনস্থ চীন দূতাবাস “তথ্য বিকৃতি” বলে এই অভিযোগকে অস্বীকার করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছে “পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হ্যাকিং সাম্রাজ্য এবং আন্তর্জাতিক সাইবার চোর।”
মাইক্রোসফটের ক্লাউড সিকিউরিটিতে অনধিকার প্রবেশ করে “আনক্লাসিফাইড সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্থ করে” –বিস্তারিত ব্যাখ্যা না করে বলেন হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র এডাম হজ।
“হামলার উৎস এবং মাইক্রোসফটের ক্লাউড সার্ভিসের ত্রুটি খুঁজে বের করতে মাইক্রোসফটের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করেন কর্মকর্তারা।”-- যোগ করেন হজ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় “সন্দেহজনক গতিবিধি সনাক্ত করে” এবং “সিস্টেমকে সুরক্ষিত করতে তৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে” বলেছেন একজন মুখপাত্র। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, মাইক্রোসফটের কাছ থেকে সতর্কবার্তা পাওয়ার পর তারা “তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।”
এই নতুন সাইবার আক্রমণের ঘটনা উদঘাটনে বোঝা যাচ্ছে সাইবার কার্যক্রমে চীনের দলগুলো তাদের সক্ষমতা বাড়িয়েছে, বলেছেন একজন বেসরকারি সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ।
“চীনের সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি প্রচলিত ‘আক্রমণ এবং লুট’ কৌশল থেকে অনেকদূর এগিয়ে গেছে” বলেছেন মার্কিন সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি মানডিয়ান্ট এর মূখ্য বিশ্লেষক জন হালকোয়েস্ট।
ঠিকানা/এসআর