Thikana News
১৮ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪


 

ফুরফুরে মেজাজে আছে জামায়াত

ফুরফুরে মেজাজে আছে জামায়াত


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির পর খুব সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচন-সংক্রান্ত ছয় সদস্যের তথ্যানুসন্ধানী দলটি ১৫ জুলাই বিকেলে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠক করবে। বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়ে ইইউ প্রতিনিধিদলের জ্যেষ্ঠ সচিব চেরি মেরিলিন ডিও জামায়াতকে চিঠি পাঠিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বৈঠকে আমন্ত্রণ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। একই দিন অর্থাৎ ১৫ জুলাই সিলেটের সমাবেশ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে জামায়াত। দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ জানান, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আমরা রাজপথে আছি। এই দাবিতে যারাই আন্দোলন করছে, তাদের সঙ্গে আমাদেরও কর্মসূচি থাকবে। তবে সেটা আমাদের দলের নীতিনির্ধারকেরা ঠিক করবেন। আগামী ২৩ জুলাই মার্কিন দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান হবে। এবার প্রথমবারের মতো ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানসহ তিনজন আমন্ত্রণ পেয়েছেন সেই অনুষ্ঠানে। এ ছাড়া গত ১০ জুন ঢাকায় সফল সমাবেশ করেছে দলটি। এসব কারণে এখন ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে জামায়াত।
জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, সরকারের সঙ্গে পর্দার আড়ালে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি মিটিং হয়েছে তাদের। সর্বশেষ গত মাসে এক বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে একটি আপস প্রস্তাব দেওয়া হয় জামায়াতকে। জামায়াতে ইসলামী সেটি গ্রহণ করলে তৃণমূলে ভাঙন তৈরি হতে পারে বলে দলীয় ফোরামে পর্যবেক্ষণ এসেছে। রাজনীতি এবং ইসলামি আদর্শÑএ দুইয়ের মধ্যে সংঘর্ষ তৈরি হতে পারে। তাই এখনই তারা সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় যাচ্ছে না। যদিও একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর জামায়াতে ইসলামী সরকারের সঙ্গে বসে ‘ডোন্ট ডিস্টার্ব’ নীতি গ্রহণ করে বলেও রাজনীতির মাঠে কথা রয়েছে। তবে সেটি তিন বছরের বেশি যায়নি। দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানকে গ্রেপ্তারের পর সেই নীতিও ভঙ্গ হয়। এ ছাড়া দলটির একাংশের দাবি, সরকার বিএনপির বিকল্প তৈরিতে জামায়াতকে ভোটে নিতে নেতাদের আটক করেছে। কিন্তু শীর্ষ নেতারা সেখানেও মাথা নত করেননি। বরং তারা আদর্শের পরিচয় দিয়েছেন।
এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব চলছে। তখন ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যাওয়া নির্বাচনে জামায়াতকে ঘোষিত ২৪টি আসনে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়। আর ঐক্যফ্রন্টের জোটকে দেওয়া হয় ২৩টি আসন। ভরাডুবির পর দেশের সিংহভাগের সন্দেহ ছিল ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুলের ষড়যন্ত্রে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে ভরাডুবির ছক পূর্বনির্ধারিত ছিল। এ ছাড়া জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির পর বিএনপি থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে অসন্তোষ দীর্ঘ দিনের। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয় সরকার পতনে ১০ দফা। একাত্মতা প্রকাশ করে জামায়াতও একই কর্মসূচি ঘোষণা করে। কিন্তু প্রথম কর্মসূচিতে মালিবাগে জামায়াতের ওপর হামলা ও আটকের ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদে জামায়াত বিএনপি থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে আবারও ‘একলা চলো’ নীতিতে চলে যায়।
জামায়াতে ইসলামীর সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর স্থায়ী কমিটির একটি অংশ এবং দলটিতে যারা বাম আদর্শে বিশ্বাসী, তারা জামায়াতে ইসলামীকে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে। তারা এও মনে করছে, শুধু জামায়াত নয়, বিএনপির একটি অংশ খালেদা জিয়াকেও নেতৃত্ব থেকে মাইনাসের ষড়যন্ত্র করছে। এ পরিস্থিতিতে তারা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনে থাকাও বিপজ্জনক বলে মনে করছে।
কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আবারও আলোচনায় চলে এসেছে জামায়াত। জামায়াতকে নিয়ে এখন বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে আলোচনা বাড়ছে। সবাই জামায়াতকে নিজেদের ঘরে টানতে চাচ্ছে। দুই দল টানাটানি করলেও জামায়াত এককভাবে নির্বাচন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে এককভাবে ভোটের মাঠে থাকতে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে নিয়েছে। সূত্র জানায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৬০ আসনে এককভাবে নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত প্রার্থী ঠিক করেছে জামায়াত। তবে এই সংখ্যা থেকে আরও কিছু আসন কমতে পারে। শেষ সময়ে এসে সেই সংখ্যা ১৪০-১৪৫ আসনেও নেমে আসতে পারে। অবশ্য এখন পর্যন্ত ১৬০ আসনই চূড়ান্ত রয়েছে। যদিও নির্বাচনী প্রচারণা রয়েছে ৩০০ আসনে। জামায়াত মনে করছে, এককভাবে নির্বাচন করলে ৬০-৭০টি আসনে তারা জিতে আসতে পারবে। দলটি মনে করছে, জামায়াতের আদর্শের কোনো ভোট ভিন্ন প্রতীকে যাবে না। এ ছাড়া তারুণ্যের ভোটও জামায়াতের ব্যাংকে পড়বে। তারা নিজস্ব জরিপ চালিয়ে নিশ্চিত হয়েছে, দেশের ভোটারদের ২৭ শতাংশ ভোট জামায়াতের রয়েছে। গত ১৫ বছরে এবং দলের প্রথম সারির নেতাদের ফাঁসির পর দলটিতে ১০ শতাংশেরও বেশি ভোট বেড়েছে বলে তাদের জরিপে রয়েছে। এ ছাড়া গত ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায় চার কোটি তরুণ ভোটার ভোট প্রয়োগ করতে পারেননি, যার অধিকাংশ ভোটই জামায়াতের পক্ষে যাবে বলে দলটির প্রত্যাশা।
এ নিয়ে জামায়াতের প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, বিভাগীয় সমাবেশ করার বিষয়ে জামায়াতের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিকে সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও রাজশাহীতে সমাবেশ করার কথা ভাবা হচ্ছে। আমাদের সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে। আমাদের সমাবেশ যে শান্তিপূর্ণ হয়, গত ১০ জুন তা প্রমাণিত হয়েছে। আগামীর সমাবেশগুলোতেও শৃঙ্খলার নজির রাখবে জামায়াত।
দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ২০২৩ সাল হলো আন্দোলন-সংগ্রাম ও নির্বাচনের বছর। কেয়ারটেকার সরকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজপথ ছাড়বে না।
 

কমেন্ট বক্স