যুক্তরাষ্ট্রের কিছু স্টেটে বাড়ি কেনা অনেকটা সহজ হলেও বেশ কয়েকটি স্টেট আছে, যেখানে মানুষের বাড়ি কেনার মতো আমেরিকান ড্রিম পূরণ করা খুবই কঠিন। ৩০ বছরের বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্রে থেকেও অনেকে বাসাবাড়ি কিনতে পারেননি, এমন নজিরও রয়েছে। আবার দেশ থেকে আসার পাঁচ-ছয় বছরের মাথায় বাড়ি কিনেছেন, এমন উদাহরণও আছে। কেউ কেউ এখানে গ্রিনকার্ড না থাকার পরও কেবল ওয়ার্ক পারমিট দিয়েও বাড়ির মালিক হয়েছেন। ব্যবসা খুলে বসেছেন। আসলে বাড়ি কেনার বিষয়টি একটি বুদ্ধিমত্তার বহিঃপ্রকাশ ও প্রয়োজনীয়তার ব্যাপার। এটি পূরণ করার জন্য কে কীভাবে নিজেকে তৈরি করছেন ও অর্থ আয় করছেন, সেটি বড় বিষয়। যারা ভালো পরিমাণে অর্থ উপার্জন করেন, সব খরচের পর অর্থ সঞ্চয় করতে পারেন, এমন মানুষের পক্ষে বাড়ি কেনা বা বাসা কেনা তত কঠিন নয়। যারা এক পরিবারের তিন-চারজন আয় করেন, তাদের পক্ষে আরও সহজ। কিন্তু এই স্বপ্নপূরণ অনেকেই করতে পারেন না কেবল সঠিক পরিকল্পনার অভাবে।
এ বিষয়ে রিয়েলটর আসিফ চৌধুরী বলেন, আমেরিকায় আসার পর মানুষ একটি বাসা কিংবা বাড়ি কিনবেন, এটা তার অনেক বড় স্বপ্ন থাকে। এই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তারা চেষ্টা করে যান। কেউ কেউ বলেন, লোনের ইন্টারেস্ট রেট বেশি। এখন বাড়ি কিনব না, পরে কিনব- এমন চিন্তা করেন। তারা লোনের ইন্টারেস্ট কমার আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন। ফলে দিনের পর দিন ও বছর চলে যায় কিন্তু বাড়ি কেনা হয়ে ওঠে না। এ দেশে যারা চলে এসেছেন এবং থাকবেনই তাদেরকে একটি বাসা কিংবা বাড়ি কিনতেই হবে। সারা জীবন থাকার জন্য একটি বাসার অনেক বড় প্রয়োজন। সারাজীবন তো আর ভাড়া বাসায় থাকা সম্ভব নয়।
আসিফ চৌধুরী বলেন, এখনো ইন্টারেট রেট হাই। সাড়ে ছয় থেকে সাড়ে সাতের বেশি। আসলে কে কত ইন্টারেস্টে লোন পাবেন, এটা নির্ভর করে তার যোগ্যতার ওপর। কার ক্রেডিট হিস্ট্রি কেমন, ডাউন পেমেন্ট কেমন দিচ্ছেন, ইনকাম কেমন, তার ক্রেডিট লাইন কেমন এসবের ওপর। যারা ঝুঁকিপূর্ণ কাস্টমার নন, তাদের জন্য লোন পাওয়া তুলনামূলক সহজ। এ জন্য মনে রাখতে হবে, তিনি লোন পেতে চাইলে তাকে আগেভাগেই সবকিছু পরিকল্পনা করতে হবে। সে অনুযায়ী বাড়ি কেনার প্রস্তুতি নিতে হবে। বাড়ি কেনার জন্য লোনের ইন্টারেট কমার অপেক্ষা করার দরকার নেই। কারণ আজ আপনার যে বাড়ি পছন্দ হচ্ছে, এই বাড়ি আগামী দিনে পছন্দ না-ও হতে পারে বা পছন্দমতো বাড়ি না-ও পেতে পারেন। এ কারণে আমরা সব সময় বলি, বাড়ি আপনি কখন কিনছেন সেটাই বড় কথা। যখন মনে করবেন আপনি বাড়ি কেনার জন্য উপযুক্ত, তখনই বাড়ি কিনুন। ইন্টারেস্ট রেট বেশি হলেও সমস্যা নেই। কারণ এখন ইন্টারেস্ট রেট বেশি আছে, এটা আগামীতে কমবে। তখন রিফাইন্যান্স করে লোনের ইন্টারেস্ট রেট কমানো যাবে। কিন্তু এখন যে বাড়ি যে দামে পাওয়া যাবে, ইন্টারেস্ট রেট কমলে সেই দামে পাওয়া যাবে না। কারণ ইন্টারেস্ট রেট কমলে বাড়ির দাম বেড়ে যায়। আর বাড়ির দাম বেড়ে গেলে কেনা কঠিন হয়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আসকিং প্রাইজের চেয়ে বেশি দামে বাড়ি কিনতে হয়।
তিনি বলেন, শেষ কথা হলো, কে কখন বাড়ি কিনছেন এবং ইন্টারেস্ট রেট কত হচ্ছে, এটা আপনার বিবেচনা করার বিষয় নয়। আপনার বিবেচনা করার বিষয় হলো আপনি আপনার লোকেশন অনুযায়ী, স্কুল ডিস্ট্রিক্ট অনুযায়ী ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সংবলিত লোকেশনে মনের মতো ও পছন্দসই একটি বাড়ি বা বাসা পাচ্ছেন কি না। যদি পেয়ে যান, তাহলে আর দেরি করবেন না। যদি দেখেন আপনার ডাউন পেমেন্ট দেওয়ার সক্ষমতা আছে, লোন পাওয়ার যোগ্যতা আছে, বাড়ির মর্টগেজ পেমেন্ট করার মতো প্রতি মাসে আপনার আয় আছে, ভাড়াটের কাছ থেকে ভাড়া না পেলেও আপনি বাড়ির মর্টগেজ চালিয়ে নিতে পারবেন, তাহলে আর দেরি না করে বাড়ি কিনে নিন।


ঠিকানা রিপোর্ট


