রওশন হাসান
স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজ একজন কবি, সমালোচক ও দার্শনিক হিসেবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। তিনি একজন Romantic Poet Ges Lake District poet হিসেবে পরিচিত। কোলরিজ The poet of Supernaturalism নামেও অভিহিত।
ইংরেজি সাহিত্যের রোমান্টিক কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের আজীবন বন্ধুত্ব আর সান্নিধ্যে ছিলেন কোলরিজ। ‘দ্য রাইম অব দ্য অ্যানসিয়েন্ট মেরিনার’ ও ‘কুবলা খান’ তার দুটি অন্যতম বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। পেশা হিসেবে কখনো বেছে নিয়েছেন সৈনিকের জীবন আবার কখনো সম্পৃক্ত থেকেছেন সাংবাদিকতায়। শেক্সপিয়ারকে নিয়ে তিনি লিখেছেন বহু সমালোচনামূলক প্রবন্ধ।
১৭৭২ সালের ২১ অক্টোবর ইংল্যান্ডের ডেভনশায়ারের অটারি সেন্ট মেরিতে স্যামুয়েল টেলর কোলরিজের জন্ম হয়। পিতা রেভারেন্ড জন কোলরিজ ছিলেন কিংস স্কুলের এক সুপণ্ডিত স্কুলশিক্ষক এবং সেন্ট মেরি গির্জার এক যাজক। জন কোলরিজের দশম সন্তান কোলরিজ শৈশব থেকেই নিমগ্ন কল্পনাপ্রবণ, অন্তর্মুখী, নির্জনতাপ্রিয় এবং সংবেদনশীল ছিলেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই তিনি ‘আরব্য রজনী’, ‘বাইবেল’ পাঠ শেষ করেছিলেন।
১৭৮১ সালে বাবার মৃত্যুর পরে লন্ডনের ক্রাইস্ট হাসপাতালে কোলরিজের শিক্ষা শুরু হয়। পরে ১৭৯১ সালে তিনি ভর্তি হন কেমব্রিজের জেসাস কলেজে। এই সময় চিকিৎসাশাস্ত্র ও অধিবিদ্যায় তার গভীর আগ্রহ জন্মায়। হোমার ও পিন্ডারের রচনা তিনি অনায়াসে আবৃত্তি করতে পারতেন। প্রাবন্ধিক চার্লস ল্যাম্ব তার বিশেষ বন্ধু ছিলেন এবং তিনি কোলরিজকে একজন ‘ইন্সপায়ারড চ্যারিটি বয়’ রূপে দেখতেন। কেমব্রিজে অধ্যয়নকালীন বন্ধু জন ইভান্সের বোন মেরির প্রেমে পড়েন কোলরিজ এবং এই প্রেমজনিত হতাশা আর রিপাবলিকান মতাদর্শের উচ্ছৃঙ্খল জীবনাচরণে তার পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। ১৭৯৪ সালের শেষ দিকে কোনো ডিগ্রি ছাড়াই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন।
কোলরিজের কর্মজীবন কখনোই স্থায়ী হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করে তিনি লন্ডনে সৈনিকের পেশা গ্রহণ করেন। ১৮০০ সালে লন্ডনের ‘মর্নিং পোস্ট’ নামক একটি সংবাদপত্রে রাজনৈতিক সংবাদলেখকের কাজে যোগ দেন। কিন্তু আর্থিক সচ্ছলতা তিনি কোনো দিনই উপভোগ করতে পারেননি।
১৭৯৮ সালে কোলরিজ এবং ওয়ার্ডসওয়ার্থের যুগ্ম রচনা সংকলন ‘লিরিক্যাল ব্যালাডস’ প্রকাশ পায়, যা ইংরেজি রোমান্টিক কাব্যান্দোলনের জন্ম দেয়। বইটিতে যে ভূমিকা লিখেছিলেন ওয়ার্ডসওয়ার্থ, সেটাই রোমান্টিকতার ধারণাকে বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিল। সারা ফ্রিকারের প্রেমে পড়ে তাকে নিয়ে কোলরিজ রচনা করেন ‘দ্য ইউলিয়ান হার্প’ ও ‘টু দ্য নাইটিঙ্গেল’ নামে দুটি বিখ্যাত কবিতা। ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও তার বোন ডরোথির সান্নিধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য রচনা তিনি একই সময়েই রচনা করেন, যা তাকে জনপ্রিয়তা দিয়েছিল। ‘দ্য রাইম অব দ্য অ্যানসিয়েন্ট মেরিনার’, ‘ক্রিস্টাবেল (প্রথম অংশ)’ এবং ‘কুবলা খান’ তার লেখা এ সময়ের অন্যতম বিখ্যাত রচনা। ১৭৯৮ সালে নেদারস্টোয়িতে থাকার সময় কোলরিজ লেখেন ‘ফ্রস্ট অ্যাট মিডনাইট’ নামের একটি আত্মজীবনীমূলক কবিতা।
কোলরিজ সমালোচনামূলক গ্রন্থ Biographia Literaria (বায়োগ্রাফিয়া লিটারারিয়া) ১৮১৭ সালে রচনা করেন। এটি আত্মজীবনী নয়, সাহিত্যের একটি জীবনচরিত। চব্বিশটি পরিচ্ছেদে তিনি দার্শনিকতত্ত্ব আলোচনা করেছেন। চৌদ্দ পরিচ্ছেদে ‘লিরিক্যাল ব্যালাড’-এর সূচনার বর্ণনা দিয়েছেন, পনেরো পরিচ্ছেদে শেক্সপিয়ারের নাটকের কাব্যশক্তি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, ষোলো পরিচ্ছেদে বর্তমানকালের সঙ্গে পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর সাহিত্যের পার্থক্য এবং শেষের সাতটি পরিচ্ছেদে সমালোচনাপ্রখর বৈদগ্ধ্য দেখিয়েছেন। তার দার্শনিক সাহিত্যতত্ত্ব মূলত জার্মান দার্শনিক ইমান্যুয়েল কান্টনির্ভর। কান্ট মনে করেন, ‘Subjectivity is aesthetic qualit’ অর্থাৎ আত্মনিষ্ঠাই হলো শিল্পগত প্রধান গুণ।
তিনি অপিয়াম আসক্ত ছিলেন এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৮৩৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
কোলরিজ ১৮ বছর বয়সে গিলম্যান পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেছিলেন, সেই পরিবারের অপিয়াম আসক্তি কোলরিজকেও বাধ্য করেছিল এবং অতিরিক্ত অপিয়াম সেবনে পরবর্তী সময়ে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
-নিউইয়র্ক