নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবিব রুবেলকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। রুবেল প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালক ও সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ করে মারধরের অভিযোগ ওঠায় তাকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া এ বিষয়ে নাটোর সদর থানায় একটি মামলাও হয়েছে।
রুবেলকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে প্রতিমন্ত্রী পলকের নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ মো. ওহিদুর রহমান।
তিনি জানান, প্রতিমন্ত্রী আজ (শুক্রবার) রাজশাহী থেকে লুৎফুল হাবিব রুবেলকে টেলিফোন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাডভোকেট শেখ মো. ওহিদুর রহমান আরও জানান, আজকেই লুৎফুল হাবিব রুবেলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া শনিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার পর রুবেলকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ-সংক্রান্ত লিখিত নোটিশ দেওয়া হবে। রুবেল দলীয় নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচন করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, ১৫ এপ্রিল জেলা নির্বাচন অফিসের সামনে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশার মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা, মারপিট ও অপহরণের ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি সুমনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আপনার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, যা দলীয় আচরণবিধি পরিপন্থীর শামিল। এ অবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা তিন দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে শুক্রবার সকালে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক চিকিৎসাধীন দেলোয়ার হোসেনকে দেখতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। তিনি অসুস্থ দেলোয়ার হোসেন ও তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন এবং দায়িত্বরত চিকিৎসকের কাছে তার চিকিৎসার খোঁজ নেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার জন্য তিনি লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। কে আমার ভাই, কে আমার শ্বশুর কিংবা শ্যালক, এটা কোনো বিবেচনার বিষয় নয়। এটা নিয়ে আমি বিব্রত, লজ্জিত, দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। এ ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের সুষ্ঠু বিচার হবে। কেউ ছাড় পাবে না।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার বিকেলে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সিংড়া উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করে একটি মাইক্রোবাসে অপহরণ করে নিয়ে যায় লুৎফুল হাবিব রুবেলের অনুসারীরা। পরে সিংড়ার সাঐল গ্রামের নিজ বাড়ির সামনে থেকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।
এ ঘটনায় তার বড় ভাই মজিবর রহমান বাদী হয়ে মামলা করলে পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করার পর তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। হামলার ঘটনার সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবিব রুবেলের নাম গণমাধ্যমে উঠে আসে।
ঠিকানা/এনআই