Thikana News
০৬ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রে কেন স্থায়ী আবাস গড়ছেন শোবিজ তারকারা?

যুক্তরাষ্ট্রে কেন স্থায়ী আবাস গড়ছেন শোবিজ তারকারা?
ঢালিউডের কিংবদন্তি নায়িকা শাবানা থেকে শুরু করে কিংখ্যাত নায়ক শাকিব খান পর্যন্ত একের পর এক তারকা রঙিন জগতের মোহ ছেড়ে স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। অপেক্ষায় আছেন আরও অনেকে। তাদের কেউ কেউ শীতের পাখি হয়ে দেশে ফেরেন, কিছুদিন বেড়ান-ঘোরেন, সুযোগ হলে কাজও করেন। অভিনয়জগতের অনেক তারকাই যখন নিজ নিজ ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, তখনই কেউ কেউ পাড়ি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয় করে যারা দর্শকদের পর্দায় ধরে রাখতেন, ভক্তদের মন জয় করে নিতেন, সেই সব জনপ্রিয় তারকাদের অনেকেই ভক্তদের হৃদয় চূর্ণ-বিচূর্ণ করে এখন স্থায়ীভাবে আবাস গড়েছেন নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নামী শহরে। শুটিং ফ্লোরে ব্যস্ত সময় কাটানো সেই তারকাদের কয়েকজন এখন পুরোদস্তুর গৃহিণী। কেউবা জীবনযাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নয়টা-পাঁচটা চাকরি করছেন। শুধু ঢালিউডের তারকারাই নন, এ তালিকায় আছেন ছোটপর্দার অভিনয়শিল্পী, সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পীসহ শোবিজের নানা অঙ্গনের মানুষ। একের পর এক তারকার দেশান্তরি হওয়ার ঘটনায় বিস্মিত ভক্ত, শুভাকাক্সক্ষী, চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট সবাই।
প্রশ্ন হলো তারকারা কেন নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন মিডিয়া থেকে? কেনই-বা তারা দেশবিমুখ হয়ে পর্দার আড়ালে চলে গিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে? দেশ ও দেশের মানুষ তো তাদের অনেক দিয়েছে। ভক্ত-দর্শকেরা তো তাদের একেকজনকে নিজেদের আইডল মনে করেন। অনেকে তো তারকাদের ব্যক্তিজীবনকে অনুসরণ করে চলাফেরা করে গর্ববোধ করেন। কিন্তু তাদের কী এমন অভাব-অভিযোগ যে সারা জীবনের জন্য স্বদেশ ও ভক্তদের ছেড়ে পরবাসে পাড়ি জমাতে হবে?
বিভিন্ন মহল থেকে আরও প্রশ্ন ওঠে, এসব তারকা তো হঠাৎ করেই জনপ্রিয় হননি। তাদের প্রতি প্রযোজক-পরিবেশক থেকে শুরু করে সহকর্মীদেরও রয়েছে অনেক অবদান। কিন্তু যারা স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসী হচ্ছেন, তাদের মধ্যে অল্পসংখ্যক তারকা হয়তো নিম্নমুখী ক্যারিয়ারের কারণে যাচ্ছেন কিন্তু উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময়ী ক্যারিয়ারকে পেছনে ফেলে যারা দেশান্তরি হচ্ছেন, তাদের কি দেশের প্রতি কোনো দায় নেই? তারকাদের বিদেশে যাওয়ার এই স্রোতে দেশের শিল্পাঙ্গনের কতটা ক্ষতি হচ্ছে, সে প্রশ্নও এখন প্রাসঙ্গিক।
অধিকতর উন্নত জীবনযাপনের প্রত্যাশা, দেশে নিরাপত্তার অভাব, ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কা নাকি নিজেদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ তাদের দেশবিমুখ করে তুলল? মিডিয়াপাড়া সূত্রে জানা গেছে, শোবিজ তারকাদের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়ার পেছনে নানা কারণ বিদ্যমান। ক্যারিয়ারের সফলতা থাকলেও কেউ কেউ ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েনের কারণে, কেউবা সপরিবারে উন্নততর জীবনের সন্ধানে, অনেকে বিনোদনজগতের নানা গ্যাঁড়াকলে পড়ে খেই হারিয়ে ফেলে, কেউ কেউ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আবার অনেকে সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য দেশান্তরি হয়েছেন।
শুধু শাবানা কিংবা শাকিব নন, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী আবাস গড়েছেন এমন তারকাদের মধ্যে আরও রয়েছেন টনি ডায়েস ও প্রিয়া ডায়েস, রিচি সোলায়মান, তৌকির-বিপাশা, জামাল উদ্দিন, হাসান ইমাম, লায়লা হাসান, বেবী নাজনীন, রিজিয়া পারভীন, তাহসান খান, দিনাত জাহান মুন্নী, এসআই টুটুল, রথীন্দ্রনাথ রায়, সামিনা নবী, ফাহমিদা নবী, রোমানা, মোনালিসা, তমালিকা কর্মকার, ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তী,বন্যা মির্জা, রাইসুল ইসলাম,কাজী মারুফ, ইমন সাহা, বিপ্লব, মিলা হোসেন, শাবনুর, হিল্লোল-নওশীন, প্রমুখ।
শাবানা : ১৯৯৯ সালে অভিনয় থেকে অবসর গ্রহণের পর ২০০০ সালে আমেরিকায় স্থায়ী হন ঢালিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা। সেখানে আগেই তার সন্তানেরা পড়াশোনা করতে চলে গিয়েছিলেন। সন্তানদের দেখাশোনা করতেই মূলত শাবানার প্রবাসজীবন বেছে নেওয়া। সপরিবারে নিউজার্সিতে থাকেন তিনি। স্বামী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে চিত্রনায়িকা শাবানার সাজানো সংসার। শাবানার স্বামী ওয়াহিদ সাদিক যুক্তরাষ্ট্রে আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
শাকিব খান : ২০২১ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে যোগদান করেন শাকিব খান। এর পরই জানা যায়, শাকিব খান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগের জন্য নিয়ম মেনে সেখানে প্রায় নয় মাস অবস্থান করেন। সেখান থেকেই ‘রাজকুমার’ নামের নতুন সিনেমার ঘোষণা দেন তিনি। পরে গ্রিন কার্ড পেয়েছেন এই অভিনেতা। এরপর দেশে ফেরেন তিনি। এখন তিনি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন।
টনি ডায়েস ও প্রিয়া ডায়েস : সোনালি সময়ের একজন দুর্দান্ত অভিনেতা-নির্দেশক-আবৃত্তিকার টনি ডায়েস। ১৯৮৯ সালে নাটকের দল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তার অভিনয়জীবন শুরু হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি শুরু করেন টিভি নাটকের ক্যারিয়ার। ২০০৮ সাল পর্যন্ত চার শতাধিক নাটক, ধারাবাহিক আর টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন। হুট করেই অভিনয় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন টনি ডায়েস। ২০০৮ সালের শেষ দিকে স্ত্রী প্রিয়া ডায়েস ও মেয়ে অহনাকে নিয়ে পাড়ি জমান মার্কিন মুলুকে। বর্তমানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের হিকসভিল শহরে বসবাস করছেন তিনি। টনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। মাঝে মাঝে অভিনয়, আবৃত্তি, উপস্থাপনা করছেন। প্রিয়া ডায়েস এখানে একটি ড্যান্স একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছেন।
তৌকির-বিপাশা : অভিনেতা, নির্মাতা ও নাট্যকার তৌকির আহমেদ-বিপাশা হায়াত দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হয়েছেন। চার বছরেরও বেশি সময় ধরে বিপাশা যুক্তরাষ্ট্রে থাকছেন স্থায়ীভাবে। সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের দুই সন্তানকে ভর্তি করিয়েছেন। তৌকির আহমেদ যাওয়া-আসার মধ্যে আছেন। যদিও এই তারকা জুটি স্থায়ীভাবে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করছেন। তারা জানান, সন্তানদের পড়ালেখার জন্যই তারা এখানে অবস্থান করছেন।
মোনালিসা : মাত্র ১০ বছর বয়সে নাচ ও মডেলিংয়ের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রাখেন মোজেজা আশরাফ মোনালিসা। ২০০০ সালে মিস ফটোজেনিক খেতাব লাভ করেন তিনি। তারিক আনাম খান নির্দেশিত ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির বিজ্ঞাপনে মডেল হয়ে প্রথম সবার নজর কাড়েন মোনালিসা। তারপর মডেলিংয়ের পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় শুরু করেন। অনেক দর্শকপ্রিয় নাটক-টেলিফিল্ম উপহার দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফাইয়াজ শরীফ ফাসবির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। একই বছরের ম্যাজিক ডে ১২.১২.১২-তে ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে মোনালিসা ও ফাইয়াজের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। তবে বিয়ের এক বছর না পেরোতেই তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এই অভিনেত্রী।
একইভাবে রিচি সোলায়মান, রোমানা, ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তী, হিল্লোল-নওশীন, তমালিকা কর্মকার, রাইসুল ইসলাম আসাদ,
কাজী মারুফ, বিপাশা কবির, ইমন সাহা, বিপ্লব, কাদেরী কিবরিয়া, মিলা হোসেন, মাহবুবা ইসলাম সুমী, নাফিজা জাহান, শাবনূর, অঞ্জু ঘোষ, শ্রাবন্তী দত্ত তিন্নি, ববিতা, আশিকুজ্জামান টুলুও বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
এছাড়া অল্প কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেই জনপ্রিয়তা পাওয়া চিত্রনায়িকা তামান্না থাকেন সুইডেনে।
যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে চিত্রনায়িকা শাবানা বলেন, ‘সন্তানেরা আমাকে মিস করছিল। দেশে ওরা আমার চোখের সামনেই ছিল, কাজের ফাঁকে দেখাশোনা করতে পারতাম। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর তা সম্ভব হচ্ছিল না। মা হিসেবে কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য তো আমার আছে। তাই ছেলে নাহিনকে নিয়ে আমি আর ওয়াহিদ সাদিক যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসি। অভিনয় তো অনেক করলাম। এখন সন্তানদের সময় দেওয়া দরকার। সিনেমার জগৎটাও আমার একটা পরিবার ছিল। রাত-দিন বিরামহীন কাজ করেছি। মানুষের জীবনে একটা সময় আসে, যখন আর কোনো উপায় থাকে না। সন্তানদের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই সন্তানদের কথা ভেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত মনে হয়েছে।’
টনি ডায়েস বলেন, ‘শুধু আমার দিকের আত্মীয়রা নন, প্রিয়ার দিকের সবাইও যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। আমি আমার নাটকে অভিনয় নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলাম না। ছোটবেলা থেকে আমি দেখে আসছিলাম, আমাদের সিনিয়র শিল্পীরা শেষ বয়সে করুণার পাত্র হন। যদিও অভিনয় আমার পেশা ছিল না। গার্মেন্টস, বায়িং-এসবের পাশাপাশি অভিনয় করতাম। ২০০৩ ও ২০০৪ সালের দিকে মনে মনে ভাবতে থাকলাম, আমার দেশের নাটক, সিনেমা, গান নিয়ে দেশের বাইরে এক্সপ্লোর করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ সেভাবে ভাবেওনি। তাই এমন অনিশ্চয়তা নিয়ে পড়ে থাকার কোনো কারণ দেখছিলাম না। দুই নৌকায় পা দিয়ে তো জীবন চলে না। জীবন একটাই। তাই একে সময় থাকতে কাজে লাগাতে হবে।’
প্রশ্ন হলো, শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কেন তারকারা পাড়ি জমাচ্ছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে বিশেষজ্ঞরা বলেন, মূলত দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের পাশাপাশি নাগরিকত্ব নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি সেখানে সন্তান জন্ম দিলে সেই সন্তান স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সে দেশের নাগরিক হয়ে যায় এবং বাবা-মা নাগরিকত্বের জন্য সহজেই আবেদন করতে পারেন। এসব কারণেই দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিই তারকাদের আগ্রহ বেশি।

কমেন্ট বক্স