Thikana News
২২ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

ভালোবাসার দিন বদল

ভালোবাসার দিন বদল
হাশেম গ্রামের ছেলে। মফস্বল শহর বাগেরহাটের একটি কলেজে পড়ে। বাড়ি থেকে শহরটি বেশ দূরে হওয়ায় কলেজের হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বাড়ি চলে আসে। গ্রামের পাশেই একটি হাট। সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার দুই দিন হাট বসে। সোমবার হাটের দিন বাবার সঙ্গে হাটে গিয়েছে। হাটে মাছের বাজারের একটি স্থানে বেজায় ভিড়। কৌতূহলী মন নিয়ে ভিড় ঠেলে গিয়ে দেখে মাছ ব্যবসায়ীরা বিশাল আকৃতির এক বোয়াল মাছ কেটেকুটে কেজি দরে বিক্রি করছে। হাশেম বাবার কাছে গিয়ে বলল, ‘বাবা, ওইখানে ব্যবসায়ীরা বিশাল আকৃতির একটি মাছ কেটে কেজি দরে বিক্রি করছে। চলেন, আমরাও এক কেজি নিই।’
-কী মাছ?
-বোয়াল মাছ।
না থাক, বলে বাবা অন্যদিকে মাছ খুঁজতে লাগলেন। অন্য এক জায়গা থেকে বোয়ালের চেয়ে চড়া দামে ভেটকি মাছ নিলেন।
হাট থেকে বাড়ি ফিরে হাশেম তার মেজো বোনকে বলল, ‘মেজো’পু, হাটে আজকে বিশাল একটা বোয়াল মাছ ব্যবসায়ীরা কেটে কেজি দরে বিক্রি করছিল, বাবাকে সেখান থেকে এক কেজি কিনতে বললাম, কিন্তু তিনি কিনলেন না। বাবার কাছে যে টাকা ছিল না, তা নয়। তিনি বোয়ালের চেয়ে চড়া দামে একটি ভেটকি মাছ নিলেন। বাবা তা করলেন কেন?’
-ভালোবাসা।
হাশেম কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘ভালোবাসা! বুঝলাম না কী ভালোবাসা?’
-ওই তো ভালোবাসা!
-ধুৎ, কী যে বলো না মেজো আপু। তোমার কথার আগা-পাছা কিছুই বুঝলাম না। একটু বুঝিয়ে বলো।
-মা-বাবার ভালোবাসা।
-আবারও প্যাঁচ লাগিয়ে দিলে। বোয়াল মাছের সঙ্গে মা-বাবার ভালোবাসার সম্পর্ক কী?
-এটা হলো পুরোনো দিনের ভালোবাসা। আজকালকার স্বামী-স্ত্রীরা সারা বছর ঝগড়াঝাঁটিতে কাটিয়ে দেয় আর বছরের একটি দিনে ভ্যালেন্টাইনস ডে নাকি ভালোবাসা দিবসে একে অপরকে নানান ধরনের উপহারসামগ্রী বিনিময় করে ভালোবাসা দিবস করে। আগেরকার দিনে এসব লোকদেখানো ভ্যালেন্টাইনস ডে ছিল না। ভ্যালেন্টাইনস ডে অন্তর্নিহিত ব্যাপার, একে ঢাকডোল বাজিয়ে বোঝানো যায় না।
তবে শোন, মা আর বাবার দাম্পত্য জীবনের প্রথম দিকে বাবা ধানের কারবার করতেন। তখন আমাদের বড় বোন এবং বড় ভাই হয়েছেন, আমিও তখন ছোট। দাদি তখন বেঁচে আছেন। স্থানীয় বাজার, গ্রাম-গঞ্জ থেকে বাবা ধান কিনে শ্রীরামকাঠি নামক ধানের মোকামে নিয়ে বিক্রি করতেন। আমাদের একটা ঘাসি নৌকাও ছিল। সেই নৌকায়ই বাবা মোকামে যেতেন। আমাদের প্রতিবেশীও কজন বাবার সঙ্গে একই ব্যবসা করতেন।
হাশেম গভীর আগ্রহে বোনের মুখে বাবার প্রথম জীবনের ব্যবসায়িক কাহিনি শুনতে লাগল। মুখেও উচ্চারণ করল, হু। বোনকে জিজ্ঞেস করল, তারপর?
Ñবাবা যখন শ্রীরামকাঠি থেকে বাড়ি ফিরতেন, তখন ঘর-গেরস্থালির অনেক সওদাপাতি সেখান থেকে কিনে আনতেন। যেমন ধর, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরা আরও কত মসলাপাতি? প্রায় সবকিছুই। তা ছাড়া ফলের মৌসুমে বিভিন্ন ফলফলাদি। চোখের সামনে বড় কোনো মাছ পড়লে তা-ও আনতেন।
একবার হলো কী জানিস?
-কী?
-শ্রীরামকাঠি থেকে ফেরার পথে বাবা বড় একটি বোয়াল মাছ কিনে আনলেন।
-আনতেই পারেন। তাতে অসুবিধা কোথায়?
-কথাই তো সেখানে।
-কী?
-মা যখন বোয়াল মাছ কাটতে গেলেন, তখন ঘটল এক লঙ্কাকাণ্ড।
-কী কাণ্ড?
-বোয়ালের পেটে একটি মরা ইঁদুর পেলেন মা। ইঁদুর দেখে মা তো এক চিৎকারে বেহুঁশ। চিৎকার শুনে দাদি রান্নাঘরে ছুটে এসে মায়ের কাণ্ড দেখে তিনিও অস্থির। দাদির সেবায় মা সুস্থ হওয়ার পর বোয়ালের পেট থেকে ইঁদুর ফেলে দিয়ে মাছটা দাদিই কাটলেন। কথাটা মা আর দাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকল। আর কেউ জানল না।
আবারও বিপত্তি ঘটল খাওয়ার সময়।
-কী?
-সবাই যখন মাছ দিয়ে ভাত খাচ্ছে মায়ের মুখে আর ভাত উঠছে না। আর কেউ খেয়াল না করলেও ব্যাপারটা দাদির নজরে পড়ল। তিনি ইশারায় মাকে বললেন, ‘খাও, কিছু হবে না। আর তুমি না খেলে সবার মনেও একটা সন্দেহ আসবে, ঘটনা কী?’ বোয়াল মাছ বাবা তো সেদিন নতুন আনেননি। আগে-পিছেও এনেছেন।
অনুরোধে ঢেঁকি গেলার মতো মা-ও দাদির কথা রাখলেন। রাতের খাওয়া শেষ করে সবাই যখন পান-সুপারি নিয়ে বসেছেন, তখন টের পাওয়া গেল রান্নাঘরের পেছনে মা অক অক করে বমি করছেন। অভক্তিসহকারে বোয়াল মাছ দিয়ে ভাত খেলেও ইঁদুরের কথা মায়ের মন থেকে যায়নি। বমি, সেকি বমি! একদম মরণ দশা। সে যা-ই হোক, মা সুস্থ হয়ে উঠলেন। তার পর থেকে বাবা আর কখনো বোয়াল মাছ কেনেন না।
-মা কি নিষেধ করেছিলেন?
-না, একদম না।
এটাই হলো আগের দিনের ভালোবাসা। আজকালকার মতো বছরের এক দিন, হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে বা আই লাভ ইউ বলে একটা গ্রিটিং কার্ড দিয়ে ভালোবাসার শ্রাদ্ধ করত না। এটাই হলো স্বামী-স্ত্রীর আসল ভালোবাসা।
হাশেম এবার মাথা নেড়ে হু শব্দ করে বলল, ‘এবার বুঝলাম বাবা কেন বোয়াল মাছ কিনলেন না।’
কলেজপড়ুয়া সেই হাশেম এখন আমেরিকার অভিবাসী। পাক্কা তিন বছর পর প্রবাস থেকে বাড়ি ফিরল। দেশে ফিরেই পরিবারের সম্মতিতে পাশের গ্রামের এক স্কুলশিক্ষিকার সঙ্গে মালাবদল হয়ে গেল হাশেমের। প্রবাসে থাকা অবস্থাতেই পরিবারের পক্ষ থেকে বাগদান সম্পন্ন হওয়ায় বিয়ের পিঁড়িতে বসতে আর বেশি সময় নিতে হয়নি।
নতুন বউ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি আর বাবার বাড়ি বেড়াতে বেড়াতেই তিন মাসের ছুটিতে আসা হাশেমের সময় যে কখন ফুরিয়ে গেল, ঠাওরও করতে পারল না। আবারও উড়তে হলো আমেরিকার উদ্দেশে।
হাশেম আমেরিকায় ফিরেই বউকে আনার জন্য ইমিগ্রেশনে অ্যাপ্লিকেশন পাঠাল। তার কাগজপত্র প্রসেসিং হতে কম করে হলেও তিন বছর সময় লাগবে। বউয়ের টানে বছরখানেক পরে আবারও দেশে ফিরল সে। সাধারণত এক বছরের মধ্যেই কেউ প্রবাস থেকে দেশে ফেরে না। কিন্তু সে ফিরল। নতুন বউ বলে কথা!
দেশে ফিরে দেখল, তার বউ অন্য এক স্কুলে বদলি হয়ে গেছে। সেই স্কুলের পাশেই একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছে। সেখানে কিছুদিন তার শ্বশুরও ছিলেন। তিনিও বাড়িতে ফিরে এসেছেন। হাশেমও সেখানে গিয়ে উঠল। স্কুলের পাশেই একটি বাজার। হাশেম সে বাজার থেকে বাজার-সওদা করে এবং স্বামী-স্ত্রী অঘোষিত হানিমুনের আনন্দ উপভোগ করতে লাগল।
একদিন বাজার-সওদা করতে গিয়ে মাছের বাজারে দেখে এক মাছ ব্যবসায়ী কিছু বোয়াল মাছ নিয়ে বসে আছেন। পারিবারিক কারণে বোয়ালে অরুচি, তাই ওদিকে না দেখে বাজার থেকে অন্য মাছ-তরকারি নিয়ে বাসায় ফিরল।
বাসায় গিয়ে বউকে বলল, ‘বাজারে কিছু বোয়াল মাছ দেখেছিলাম, আমাদের পরিবারে তো বোয়াল মাছ সবাই খায় না। তাই কিনলাম না। ভাবলাম তুমিও খাও কি না?’
-না না, আমি খাই। বোয়াল আমার খুব প্রিয় মাছ। কাঁটাগুলো একটু বড় হয়, তাই বাছতে ঝামেলা কম।
-তাই নাকি?
-হ্যাঁ।
হাশেম পরের দিন আবার বাজারে গেল। সেদিন বাজারে বোয়াল পেল না। পরপর আরও কয়েক দিন গেল, বোয়ালের আর দেখা মিলল না। বোয়াল মাছ না পেয়ে মনে মনে বেশ কষ্ট পেলেও বউকে তা বুঝতে দিল না।
কিছুদিন পর হাশেম আবারও আমেরিকায় ফিরল।
বউকে আমেরিকায় আনার জন্য অ্যাপ্লাই করা হয়েছে, এখন শুধু অপেক্ষার পালা।
রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। হাশেম স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির একটি স্টোরে গেল বাজার-সওদা করতে। স্টোরের ফ্রোজেন মাছের রেফ্রিজারেটরের ঢাকনা খুলেতেই চোখে পড়ল বোয়াল মাছ। মাছগুলো ফ্রোজেন হলেও মনে হচ্ছিল, চোখ তুলে তার দিকে ড্যাবডেবিয়ে তাকিয়ে আছে। বোয়ালগুলোর দিকে তাকিয়ে হাশেম মনে মনে ভাবল, হায়রে বোয়াল, তুই এখানে? দেশে তোকে পেলে কিনে বউকে খুশি করতে পারতাম। কিনতে গিয়ে আর কিনল না। বউ এলে কিনবে বলে অপেক্ষায় থাকল।
দিন মাস বছর গুনতে গুনতেই একদিন বউ আমেরিকায় চলে এল। স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে বাজারঘাট করলেও হাশেম সেদিন বোয়াল মাছ কিনবে বলেই বউকে বাজারে নিল না। দোকান থেকে বড় এক বোয়ালসহ অন্যান্য সওদা নিয়ে বাসায় ফিরল।
ডোর বেল বাজাতেই হাশেমের স্ত্রী রিমি দরজা খুলেই বলে ওঠে, ‘একি! তুমি বাজার-সওদা নিয়ে এসেছ?’ বাজারের ব্যাগের দিতে চোখ পড়তেই দেখতে পেল, একটি মাছের লেজ ব্যাগ থেকে ঝুলে আছে। তা দেখে রিমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ওমা! ওটা কী?’
-বোয়াল মাছ।
-এত বড় বোয়াল! এখানেও কি বোয়াল পাওয়া যায়?
-আমেরিকায় বিশ্বের সবকিছুই পাওয়া যায়। বিশ্বের সব দেশের সঙ্গেই এদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আছে। এ বোয়াল ভিয়েতনামি।
-তাই? এত বড় বোয়াল কেনার কী দরকার ছিল? আমরা তো মানুষ মাত্র দুজন।
-শুধু তোমার জন্য। মনে পড়ে, আজ থেকে তিন বছর আগে বাংলাদেশে তোমার স্কুলের পাশের বাজারে বোয়াল মাছ দেখেছিলাম, যখন তুমি কিনতে বলেছিলে, কিনতে গিয়ে আর পাইনি। কিনতে না পেরে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। সেই থেকেই মনে মনে ভেবেছিলাম, তোমাকে বোয়াল মাছ না খাইয়ে আমি কোনো দিনই বোয়াল মাছ খাব না।
ওমা! তুমি আজও সে কথা মনে রেখেছ বলেই হাশেমকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে রিমি বলল, ‘তুমি হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হও। এক কাপ চা নিয়ে আসি।’
বছর ঘুরতেই রিমি মা হতে চলল। আমেরিকায় একটা সুবিধা আছে, কোনো ইমিগ্র্যান্ট মহিলা গর্ভবতী হলে তার পরিচর্যা এবং সন্তান প্রসবের পর নবজাতকের পরিচর্যার জন্য গর্ভবতীর মা-বাবাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমেরিকায় আসার ভিসা দেওয়া হয়। হাশেম তার শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য ইমিগ্রেশনে ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করে দিল। শাশুড়ি অসুস্থ থাকায় কিছুদিনের মধ্যে শ্বশুর চলে এলেন। রিমি এক পুত্রসন্তানের মা হলো। রিমি ইতিমধ্যে ড্রাইভিং শিখে নিজেই বাজারঘাটে যেতে পারে। হাশেম তাকে একটি গাড়িও কিনে দিয়েছে। বাজারঘাট এখন সে নিজেই করে।
রিমি সেদিন বাজারে গিয়ে মাছ, মাংস, তরিতরকারির সঙ্গে এক ফালি মিষ্টিকুমড়াও কিনল। বাসায় ফিরে চিংড়ি মাছ দিয়ে কুমড়ার চচ্চড়ি রান্না করে ডাইনিং টেবিলের ওপর রেখেই বাথরুমে ঢুকল।
ওদিকে হাশেমও কাজ থেকে ফিরেছে। ঘরে ঢুকে শ্বশুরকে সামনে পেয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘বাবা, রিমি কই?’
-বাথরুমে। মনে হয় গোসল করছে?
রিমি বাথরুমে ঢুকলে অন্য মেয়েদের চেয়ে একটু বেশি সময় নেয়। তার বেরিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করার মতো অবস্থা হাশেমের নেই। ক্ষুধায় তার পেটের ভেতর ইঁদুর দৌড়ানোর অবস্থা। ডাইনিং রুমে ঢুকেই টেবিলের ওপর ভাত-তরকারি পেয়ে নিজেই ভাত বেড়ে খেতে খেতে টের পেল কুমড়ার তরকারি। রিমি কি কুমড়া রেঁধেছে? কুমড়ায় যে তার ভীষণ অ্যালার্জি। রিমি কি আজও ভুল করেছে? খাওয়া স্থগিত করেই তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল। এরই মধ্যে হাশেমের বমি শুরু হয়ে গেছে। বমির তীব্রতা দেখে হাশেমের শ্বশুর বাথরুমের কাছে গিয়ে রিমিকে ডাক দিলেন, ‘রিমি, তাড়াতাড়ি বের হ, জামাই হঠাৎ বমি করছে।’
হাশেমের ঘন ঘন বমি হচ্ছে। বমি করতে সে একবার রান্নাঘরের সিঙ্কে যায় আবার সোফায় এসে বসে। ক্লান্ত শরীরে আর সিঙ্কেও যেতে পারছে না। এখন সে সোফায় শুয়ে শুয়েই বমি করছে। রিমি সেখানে একটা বাকেট এনে দিল।
হাশেমের শ্বশুর রিমির দিকে লক্ষ করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হঠাৎ এমন বমি হওয়ার কারণ কী?’
-ওর না মিষ্টি কুমড়ায় অ্যালার্জি আছে। মিষ্টি কুমড়া খেতে পারে না।
-অ্যালার্জি আছে তো তুই মিষ্টি কুমড়া রান্না করলি কেন?
-ও যে এত তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবে আমি কি জানতাম? তাহলে তরকারিটা সরিয়ে রাখতাম। দেখেশুনে খেতে পারে না?
-তুই তার স্ত্রী, কী রান্না করেছিস তার তো দেখার বিষয় নয়। তার জন্য যা ক্ষতিকর, নিশ্চয় তুই তা রান্না করবি না। এটাই তার বিশ্বাস। এ কাজ তুই ঠিক করিসনি। বাজারে কত তরিতরকারি আছে, মিষ্টিকুমড়া না খেলে কী হয়?
-বা রে! সে খাবে না, তাই বলে কি অন্য কেউও খাবে না?
-না, খাবি না। স্বামীর যে খাদ্যে ক্ষতি হয়, সে খাদ্য স্ত্রীরও পরিহার করা উচিত। ছেলেটার যদি কিছু হয়?
-না, কিচ্ছু হবে না। আরও দুবার এমন হয়েছে।
-একবার নয়, তিন-তিনবার একই ভুল। এটা কেমন কথা, রিমি? এটা কি স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা? তোর মায়ের তেলাপিয়া মাছে অ্যালার্জি ছিল, আমি জানার পর এক দিনও বাজার থেকে তেলাপিয়া কিনিনি।
-আপনাদের আগেকার দিনের ভালোবাসা আর আজকালের ভালোবাসা এক নয়।
-তা কেন হবে? তোকে বোয়াল মাছ খাওয়াতে পারেনি বলে তুই আমেরিকা না আসা অবধি ছেলেটা বোয়াল মাছ খায়নি, তুই-ই তো আমাকে শোনালি। সে কি এ যুগের ছেলে নয়?
রিমি কর্কশ কণ্ঠে আঙুল উঁচিয়ে বলে উঠল, ‘বাবা, আপনি আপনার রুমে যান। আমাদের পারিবারিক ব্যাপারে আপনার নাক গলাতে হবে না।’
মেয়ের ব্যবহারে তিনি কষ্ট পেলেন।
হাশেম এতক্ষণ বাপ-বেটির কথোপকথন নীরবে শুনছিল। এবার মাথা তুলে শ্বশুরকে লক্ষ করে বলল, ‘বাবা, তাকে বোঝানো যাবে না, সে আমেরিকায় এসে বদলে গেছে। আমার কথায় পাত্তাই দেয় না।’
শ্বশুর বেচারা অগত্যা বুকের কষ্ট বুকে নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালেন।
রিমি সুযোগ পেলে এখনো লুকিয়ে লুকিয়ে মিষ্টিকুমড়া খায়।
(বি. দ্র. গল্পের প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক। এটির সঙ্গে জাতি, ধর্ম বা কোনো ব্যক্তির মিল নেই। যদি কোনো মিল পাওয়া যায়, তা সম্পূর্ণভাবে কাকতালীয়।)

কমেন্ট বক্স