পবিত্র ঈদুল ফিতর একেবারে সন্নিকটে। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ১০ এপ্রিল উদযাপিত হতে পারে রোজার ঈদ। ইতিমধ্যে ঈদের কেনাকাটা করতে শুরু করেছেন মানুষজন। নারী-পুরুষেরা নিজ নিজ সন্তানদের নিয়ে তাদের পছন্দের এবং পরিবার-পরিজনের জন্য কেনাকাটা করছেন। এবারের ঈদে নিউইয়র্কের পাঁচ বরোর বিভিন্ন দোকানে এসেছে নতুন নতুন সব পোশাকের সমাহার। বাংলাদেশের পোশাকের পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তান থেকেও নানা ধরনের পোশাক আসছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে পোশাক এসেছে। এসব পোশাকের বেচাকেনাও ভালো।
নিউইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অনেক বাঙালি দোকান রয়েছে। সেসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন পোশাক। একাধিক ক্রেতা বলেছেন, নিউইয়র্কে ঈদকে সামনে রেখে শুধু পোশাকের দোকানে নয়, গহনার দোকানেও ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। ক্রেতারা সাধ্য অনুযায়ী ঈদ মার্কেট করার চেষ্টা করছেন।
এদিকে বিক্রেতারা আশা করছেন, এই সপ্তাহে তাদের বিক্রি আর বাড়বে। কারণ অনেকেই এখনো ঈদের কেনাকাটা শুরু করেননি। নিউইয়র্ক সিটির বাইরে থেকে অনেকেই সিটিতে ঈদের কেনাকাটা করতে আসছেন। তারা ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন, জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকার বিভিন্ন এলাকার দোকান থেকে কেনাকাটা করছেন।
পোশাক ও গহনার দোকানের পাশাপাশি অনেকেই বিভিন্ন শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটা করছেন। এ ছাড়া ঈদের দিনে রান্নার জন্য সেমাই, পায়েস রান্নার উপকরণ, মাছ, মাংস, পোলাওর চাল, মসলাপাতি, দুধ, ডিমসহ প্রয়োজনীয় সব গ্রোসারি পণ্য কিনছেন। তবে নিউইয়র্কে বাসা ভাড়া এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে অনেকেই সাধ্যের মধ্যে খরচ কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। বাসা ভাড়া ও সব বিল দেওয়ার পর যে অর্থ অবশিষ্ট থাকছে, তা দিয়েই ঈদ বাজার করার পরিকল্পনা করছেন। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে পছন্দের কেনাকাটা ও খাবার কিনতে পারছেন না। তারা সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।
একজন দোকানদার বলেন, আমরা অনেক পণ্য সবরাহ করেছি। মানুষ এখানে আসছেন, কেনাকাটা করছেন। তারা সন্তানদের পাশাপাশি নিজেদের জন্যও কিনছেন। বিক্রিতে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি।
জ্যাকসন হাইটসের ৭৪ স্ট্রিটে পোশাকের দোকান ‘দিদি দোকান’-এ শারারা গারাসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক এসেছে। দিদি দোকান থেকে জানানো হয়, এখন আমাদের এখানে ঈদের বিশেষ সেল চলছে। বাঙালি পাড়াখ্যাত জ্যাকসন হাইটসে আমাদের বিভিন্ন ডিজাইন ও এক্সক্লুসিভ সব কালেকশন রয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের পোশাক রয়েছে। ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি বাঙালি সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, শেরওয়ানি, লেহেঙ্গা, গারারা শারারা, কুর্তা, শাল এবং বিভিন্ন ধরনের পুরুষের কুর্তা, পাঞ্জাবি, মহিলাদের কটি এবং নারী-পুরুষ ও বাচ্চাদের কালেকশন কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। রয়েছে কটন, কাতান, জর্জেটের সমারোহ।
দিদি দোকানে বিভিন্ন ধরনের জুয়েলারির মধ্যে রয়েছে নেকলেস, ব্রেসলেটের আকর্ষণীয় কালেকশন। দিদি দোকানের একজন স্টাফ জানান, আমরা বিভিন্ন ধরনের পোশাকের সমারোহ ঘটিয়েছে। মানুষ আসছেন এবং কেনাকাটা করছেন। আমরা কাস্টমারদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। সব মিলিয়ে বলব, ঈদ-বাজার ভালো। আশা করা হচ্ছে, ঈদের আগে আরও ভালো বিক্রি হবে। আমরা অনেক নতুন জিনিস এনেছি। আশা করছি, মানুষ তাদের বাজেটের মধ্যে পোশাক কেনার জন্য আমাদের দোকানে আসবেন।
ইন্ডিয়া শাড়ি প্যালেস (আইএসপি) ঈদকে সামনে রেখে প্রায় সবকিছুর ওপর ৩০-৪০ পারসেন্ট ছাড় দিচ্ছে। তারা বিভিন্ন ধরনের সালোয়ার-কামিজ বিক্রি করছে ২২০-৩০০ এর মধ্যে। শাড়ি বিক্রি করছে দুই হাজার পর্যন্ত। বিভিন্ন ধরনের পোশাকের রকমারি ডিজাইন যেমন রয়েছে, তেমনি দামও নানা রকম। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে তারা নতুন নতুন শাড়ি, পাঞ্জাবি, শেরোয়ানি, টাই, বাচ্চাদের পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পোশাক এনেছে। সেখানকার ম্যানেজার বলেন, আমরা ঈদকে সামনে রেখে ভালো সেল করছি। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে, সেল তত বাড়বে। মানুষ সকাল থেকে রাত অবধি কেনাকাটা করছে। আমরা ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিপুল পণ্যের সমাহার ঘটিয়েছি। এসব পণ্য তারা ঈদের দিন পর্যন্ত স্পেশাল সেলে কিনতে পারবেন।
করণ জুয়েলার্সে ঈদ উপলক্ষে গয়নাগাটি বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। জুয়েলার্সটির কর্ণধার জানান, প্রতি গ্রাম স্বর্ণের গহনা বিক্রি হচ্ছে ৭২ ডলার। স্বর্ণের দাম এখন বেশি। এদিকে সেখানে ঈদকে সামনে রেখে নতুন নতুন ডিজাইনের চুড়ি, চেইন, গলার হার, কানের দুল, আংটি, টিকলিসহ বিভিন্ন ধরনের গহনা বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে বেচাকেনা ভালো। এ ছাড়া বিয়ের জন্য রকমারি সব গহনার সমারোহ ঘটানো হয়েছে।


ঠিকানা অনলাইন


