বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও সতর্ক অবস্থানে থাকায় দেশে মার্কিন ডলারের সংকট কিছুটা কমেছে। রেমিট্যান্সে ডলার এখন ১১৪-১১৫ টাকা দামে পাওয়া যাচ্ছে, যা আগে ১২০ টাকায় উঠেছিল। অবশ্য ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ১১০ টাকা।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ডলার সংকট কমে আসার পেছনে কয়েকটি বিষয় ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপাচাপির কারণে আমদানি কমে এসেছে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ডলারের দাম নিয়ে কড়াকড়ি আরোপের অবস্থান থেকে সরে আসায় রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বেড়েছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, একদিকে আমদানি কমে এসেছে, অন্যদিকে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে। এ কারণে ডলারের দাম কমেছে। সামনে বোঝা যাবে বাজার কোন দিকে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় টাকার জোগান দিচ্ছে। এতে টাকার সরবরাহ বেড়েছে। এটা বাজারের উত্তাপ কমাতে ভূমিকা রেখেছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশে মার্কিন ডলারের সংকট শুরু হয়। যুদ্ধের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি খরচ হঠাৎ বেড়ে যায়। যে কারণে ওই বছরের জুনে ৮৩৭ কোটি ডলারের আমদানি দায় শোধ করতে হয় বাংলাদেশকে। এরপর ঋণপত্র খোলায় কড়াকড়ি ও ঋণপত্র খোলার বিপরীতে শতভাগ পর্যন্ত নগদ টাকা জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। এতে আমদানি দায় কমতে থাকে।
এর মধ্যে গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম আমদানি দায় পরিশোধ হয় গত ফেব্রুয়ারি মাসে। এ মাসে আমদানি দায় পরিশোধ হয় ৪৬৭ কোটি ডলারের। আমদানি দায় পরিশোধ হলো সংশ্লিষ্ট মাসের প্রকৃত ডলার খরচ। এর আগে জানুয়ারিতে আমদানি দায় পরিশোধ হয়েছিল ৫৯৬ কোটি ডলারের। অর্থাৎ ডলারের ওপর চাপ কমে আসছে।
গত জানুয়ারিতে দেশে ২১১ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আয় আসে, যা ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে দাঁড়ায় ২১৬ কোটি ডলারে। এদিকে চলতি মার্চের প্রথম ২৬ দিনে রেমিট্যান্স আয় এসেছে ১৭২ কোটি ৫০ লাখ ডলার, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৬৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ডলার নিজেদের কাছে রাখতে পারে, সে ক্ষেত্রে গত বছরে ঘাটতি ছিল ৪০ কোটি ডলার। এখন ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত আছে ৪০ কোটি ডলার।
এদিকে রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট বা আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানতের (আরএফসিডি) ওপর ৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে শুরু করেছে ব্যাংকগুলো। এই হিসাবের ডলার কোনো বাছবিচার ছাড়াই দেশে ও বিদেশে গিয়ে খরচ করা যাচ্ছে। এতে ঘরে রাখা ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা ব্যাংকে জমা হচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ ডলারের মজুত বাড়ছে। এক মাস আগে ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ ডলারের মজুত ছিল ৩ কোটি ২০ লাখ, যা বেড়ে ৪ কোটি ১০ লাখ ডলার হয়েছে। খোলাবাজারেও ডলারের দাম কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ডলার-টাকা অদলবদল (সোয়াপ) সুবিধা চালু করে। এর ফলে ব্যাংকগুলো তাদের হাতে থাকা অতিরিক্ত ডলার বিভিন্ন মেয়াদে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে শুরু করে। এভাবে দেড় মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রায় ১৫০ কোটি ডলার জমা হয়। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারের জন্য ১১০ টাকা হিসাবে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা পায়। এর ফলে বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়ে এবং টাকার সংকট কমে আসে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো এখন চাহিদামতো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্যসুবিধা পাচ্ছে।
ঠিকানা/এনআই