যেকোনো দিন কার্যকর হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি। রাষ্ট্রপতির কাছে করা প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি বুধবার রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাকর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে বলে শনিবার জানিয়েছেন জেলার নিজাম উদ্দিন।
জেল কোড অনুযায়ী, চিঠি হাতে পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং নিহত অধ্যাপক তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম।
নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার পর থেকেই দুই আসামিকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে কারাগার কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নিজাম উদ্দিন জানান, কারাকর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রায় ছয় মাস আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন আসামিরা। সে আবেদন গত মাসে নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি। বুধবার সেই চিঠি কারাগারে এসেছে। এর মাধ্যমে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে চলমান সব দাপ্তরিক ও আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন জেল কোড অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকরে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
“জেল কোড অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিনক্ষণ ঠিক করার পর আসামিদের আত্মীয়স্বজনকে শেষ দেখা করার জন্য খবর দেওয়া হবে।”
গত ২ মার্চ আসামিদের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে সুপ্রিমকোর্ট। নিম্ন আদালতে দুজনের মৃত্যুদণ্ডের যে রায় দেওয়া হয়েছিল, আপিলে সেটিই বহাল থাকে। খারিজ হয় রিভিউ আবেদনও।
এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা ছাড়া আর কোনো পথই খোলা ছিল না তাদের। এরপরও দুজনের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে গত ৭ মে ফের রিট আবেদন করেন স্বজনরা। সে আবেদনও আদালতে উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির শিক্ষকদের পশ্চিমপাড়া আবাসিক কোয়ার্টার থেকে নিখোঁজ হন অধ্যাপক তাহের। ওই বাসায় তিনি একাই থাকতেন। কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম তার দেখাশোনা করতেন। পরদিন বাসার পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের গলিত মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
অধ্যাপক তাহেরের করা একটি জিডির সূত্র ধরে বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন ও রাবির ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারদের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তারা বলেন, “অধ্যাপক ড. এস তাহের বিভাগের একাডেমিক কমিটির প্রধান ছিলেন। একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য কমিটির সুপারিশ চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু গবেষণা জালিয়াতির কারণে অধ্যাপক তাহের তা দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মহিউদ্দিন হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। বালিশ চাপায় খুনের পর বাড়ির ভেতরে থাকা চটের বস্তায় ভরে অধ্যাপক তাহেরের লাশ বাসার পেছনে নেওয়া হয়। লাশ গুমের জন্য জাহাঙ্গীররের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুলের স্ত্রীর ভাই আবদুস সালামকে ডেকে আনা হয়। তাদের সহায়তায় বাসার পেছনের ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে অধ্যাপক তাহেরের লাশ ফেলে দেওয়া হয়।”
২০০৭ সালের ১৭ মার্চ শিবির নেতা মাহবুব আলম সালেহীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসি ও দুজনকে খালাস দেয়।
দণ্ডিত অন্যরা হলেন জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল ও তার স্ত্রীর ভাই সালাম। তবে বিচারে খালাস পান ছাত্রশিবিরের নেতা সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সি।
পরবর্তীতে দণ্ডপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের রায় বহাল রাখলেও নাজমুল ও সালামের রায় কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। পরে তাদের দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাই কোর্ট বিভাগের রায়ই বহাল রাখে।
এসআর