ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচন ও বাংলাদেশে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে ঢাকা ঘুরে গেলেন বিশ্বকাপ ফুটবল তারকা আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমি মার্টিনেজ। ১১ ঘন্টা থেকে উড়াল দিলেন কলকাতা। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মাঝেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎসহ রাজসম্মান। তাকে নিয়ে পাগলপারা হয়েছেন সরকারি শীর্ষ পর্যায়ের কেউ কেউ। কোনো আসনে দলের নমিনেশন ঘোষণা না দিলেও নৌকা প্রতীক ধরিয়ে দেয়ার কাজটিও হয়েছে ঠিকঠাক মতোই। মার্টিনেজের সফরের মাঝে ক্রীড়ামোদিদের জন্য ন্যূনতম সংবাদও আছে? নামি-দামি কোনো ফুটবলারের দেখা কি পেয়েছেন তিনি?
পৃথিবীর বিস্ময় পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল কিংবা কর্ণফুলী ট্যানেল দেখার সুযোগ হয়নি তার। এরপরও বাংলাদেশে মার্টিনেজ কী দেখলেন, কিসে মুগ্ধ হলেন? মার্টিনেজ আমাদের মাশরাফীর মতো এমপি হতে চান কিনা? বড় হয়ে সালাউদ্দিন হতে চান কিনা- কিছুই জানা গেল না। ঢাকা শহরে প্যারিস, ভেনিস, লাস ভেগাস কিংবা সিংগাপুর দেখেছেন কিনা- তাও জানার বাইরে থেকে গেল। এই দেশে মোহাম্মদ আলী ক্লের মতো দুনিয়ায় সেরা ক্রীড়াবিদের আগমন হয়েছিলো। তখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ধানের শীষের আমল। তবে, শতাব্দীর সেরা অ্যাথলেট মোহাম্মদ আলীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশের পতাকা এবং বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সনদ। তা কি ভুল ছিল? ধানের শীষ প্রতীক ধরিয়ে দিলে ভালো হতো? এখন নৌকা দিয়ে কি ভালো হয়েছে?
২০১১ সালে সদলবলে ঢাকা এসেছিলেন লিওনেল মেসি। বিমানবন্দরে তাদের অভ্যর্থনা জানাতে সামনে দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন জাতীয় ফুটবল দলকে। বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলের গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজের এগারো ঘন্টার সফরে একজন ফুটবলারকেও দেখা গেছে? বা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কোন কর্মকর্তাকেও?
২৫ হাজার ডলার চুক্তিতে কয়েক ঘন্টার জন্য মার্তিনেজকে ঢাকা আনার ব্যবস্থা করা নেক্সট ভেঞ্চার্স কিন্তু ঠিকই জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে স্বপরিবারে আমন্ত্রণ জানিয়েছে মার্তিনেজের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য। তাদের অতিথি তালিকায় ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকও। এ চান্সে তিনি নৌকা প্রতীক ধরিয়ে দিয়ে মার্টিনেজের সঙ্গে ছবি তোলার কাজটা ঠিকঠাক মতোই সেরে নিয়েছেন। ২০১১ সালে মেসির দল বাংলাদেশে প্রীতি ম্যাচ খেলতে এলে জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে মেসির গলায় মালা দেয়া বিপ্লব গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আক্ষেপের কথা। সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলামও ক্ষোভ জানিয়েছেন। এ দেশের কোটি কোটি আর্জেন্টাইন দর্শকের হৃদয় গুড়িয়ে দিয়ে আয়োজকরা কেবল নিজের স্বার্থ হাসিল করতেই মার্তিনেজকে এনেছে বলে অভিমত আসলামের। মাশরাফী মার্তিনেজকে ক্রিকেট দলের জার্সি উপহার দিয়েছেন। সেখানে একজন সাবেক অথবা বর্তমান ফুটবলার থাকলে তিনি ফুটবল দলের জার্সিটাও উপহার দেয়া যেত না?
সাধ মেটেনি আর্জেন্টাইন ভক্তদেরও। অথচ ভোর থেকেই ওয়েস্টিন হোটেলের বাইরে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের জটলা পেকেছে। আর্জেন্টিনার জার্সি পরে এক পাশে পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়েছে তারা। আরেক পাশে মিডিয়া কর্মীদের ভিড়। একই চিত্র সকাল ৯টায় প্রগতি সরণিতে নেক্সট ভেঞ্চার্সের অফিসের নিচে। সবার অপেক্ষা এক ঝলক ‘বাজপাখিকে’ দেখার। সব চেষ্টা মাঠে মারা যায়। মিডিয়া কর্মীদেরও তেমন সুযোগ হয়নি মার্তিনেজকে ভালো মতো ফ্রেমবন্দি করার। মার্তিনেজকে আড়াল করে রাখার কৃতিত্ব কেবল আয়োজক নেক্সট ভেঞ্চারেরই? আশপাশে আর কোনো শুভঙ্কর ছিলেন না তো?
আইসিটি সেক্টরে ব্যবসা নেক্সট ভেঞ্চার্সের। তাই আমন্ত্রিত অতিথির অন্যতম তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। সেখানে তিনি মার্তিনেজের সঙ্গে সময় কাটান পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। মার্তিনেজ নেক্সট ভেঞ্চার্সের অফিস ছাড়ার অনেক পরে অপেক্ষারত মিডিয়া কর্মীদের মুখোমুখি হন পলক। মার্তিনেজকে কেন মিডিয়া কর্মীদের থেকে দূরে রাখা হলো, সেই প্রশ্নে চোখের পলকে পলকের জবাব- সব জানেন জায়েদ ও গালিব। কী চমৎকার না জবাবটা?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।