অন্যান্য উচ্চ শব্দের মতো হেডফোনও কানের ক্ষতি করে। যাকে বলে ‘নয়েস-ইনডিউসড হিয়ারিং লস’ বা ‘উচ্চ শব্দ-প্ররোচিত শ্রবণশক্তি হ্রাস’।
কানের ভেতর ছোট ছোট রোম সংবেদক হিসেবে কাজ করে। হেডফোন ব্যবহারে উচ্চ শব্দের কারণে এই রোমগুলো অবনত হয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ এমনটা চলতে থাকলে কানের ক্ষতি হয়।
টাইমসঅবইন্ডিয়া ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মুম্বাইয়ের ‘স্যার এইচএন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন হস্পিটাল’য়ের পরামর্শক ও বিভাগীয় সমন্বয়ক ডা. স্মিতা নাগাঙ্কর বলেন, “শুধু হেডফোনের উচ্চ শব্দই নয়, মাঝারি শব্দও শ্রবণশক্তির ক্ষতি করতে পারে।”
“শব্দের স্থায়িত্বের ওপরেও কানে ক্ষতি হওয়া নির্ভর করে। যেমন- খোলা মাঠে দীর্ঘ সময় কনসার্ট শোনা কানের কাছে বন্দুকের গুলির শব্দের মতোই ক্ষতিকর”, বলেন এই চিকিৎসক।
‘বিএমজে’ সাময়িকীতে প্রকাশিত ২০২২ সালের করা গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ডা. নাগাঙ্কর জানান, এক বিলিয়নের বেশি তরুণরা শ্রবণশক্তি হ্রাসের শিকার। যার অন্যতম কারণের মধ্যে রয়েছে অডিও ডিভাইস যেমন- হেডফোন ও ইয়ারবাড ইত্যাদির ব্যবহার।
খুব জোরে অতিরিক্ত শব্দের কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাসের কোনো চিকিৎসা নেই। তাই এর প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
আওয়াজ জনিত শ্রবণশক্তি হ্রাসের লক্ষণ
* কানের ভেতর ঘন্টা, গর্জন, হিসহিস শব্দ বা গুঞ্জন শোনা।
* কোলাহলপূর্ণ স্থান বা নিচু গলায় কথা বললে শুনতে সমস্যা হওয়া।
* কানের ভেতর ভোঁতা ও কান-বন্ধ অনুভূতি হওয়া।
* আগের চাইতে উচ্চ শব্দে টেলিভিশন বা রেডিও শোনা।
প্রতিকার
* শ্রবণশক্তির ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় করার একমাত্র উপায় হল শ্রবণ পরীক্ষা করা। ইয়ারবাডের কারণে হওয়া শ্রবণশক্তি হ্রাস শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য।
* বেশিক্ষণ খুব জোরে না শুনলে বা ব্যবহার না করলে অনেকটাই সমাধান করা যায়।
* এক্ষেত্রে ডা. নাগাঙ্কর ৬০/৬০ মিনিট নীতি অনুসরণের পরামর্শ দেন।
* এই নীতিতে গান শোনা, টেলিভিশন বা সিনেমা দেখা ও ভিডিও গেইমের পূর্ণ শব্দের ৬০ শতাংশের বেশি হবে না এবং ৬০ মিনিটের বেশি একটানা শোনা যাবে না। বিরতি দিয়ে পুনরায় শুনতে হবে।
* অনেক সময় কাজের প্রয়োজনেই হেডফোনের ব্যবহার এড়ানো যায় না। সেক্ষেত্রে কিছু নিরাপদ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় যেমন- ‘নয়েজ ক্যান্সেলিং হেডফোন’ ব্যবহার করা।
“অধিকাংশ হেডফোন ব্যবহারকারী বাইরের অন্যান্য শব্দ থেকে বিরত থাকতে হেডফোনের শব্দ বাড়িয়ে দেন, যা ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে ‘নয়েজ ক্যান্সেলেশন হেডফোন’ ব্যবহার উপকারী। এতে কম শব্দে নিরাপদে গান শোনা বা গেইম খেলা যায়”, পরামর্শ দেন ডা নাগাঙ্কার।
* কানের যত্ন নিতে যা করা উচিত
* কান পরিষ্কার করতে কটন বাডস ব্যবহার না করা।
* চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কানে কোনো কিছু ব্যবহার না করা।
* কানে ব্যথা থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
* কানের নিজস্ব পরিচ্ছন্নতা পদ্ধতি রয়েছে। অন্য কিছুর মাধ্যমে কান পরিষ্কার করতে যাওয়া জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
ডা. নাগাঙ্কার বলেন, “কান শ্রবণ সংবেদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই এর প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। কানে কোনো সমস্যা দেখা দিলে নিজে চিকিৎসা গ্রহণের পদক্ষেপ না নিয়ে বরং চিকিৎসকের সহায়তা গ্রহণ করতে হবে।”
এসআর