কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনার সাত বছর অতিবাহিত হয়েছে ৭ জুলাই (শুক্রবার)। ওই তারিখে জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল আনসারুল। সাত বছরেও শেষ হয়নি কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার বিচার কাজ।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, জঙ্গিরা অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় নিরাপত্তার কারণে সশরীরে তাদের আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য শুরু করা যাচ্ছে না সাক্ষী নেয়ার প্রক্রিয়া।
এদিকে ঘটনায় জড়িতদের মৃত্যুর আগে দ্রুত ফাঁসি দাবি করেছেন নিহত পুলিশ কনস্টেবল আনসারুলের মা রাবেয়া খাতুন।
তিনি বলেন, ‘আমার ফুত এই মাসের সাত তারিখে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। ওই দিন মুসলমানদের আনন্দের দিন ছিল। আর আমার শোলাকিয়ামাঠে কারবালা। আমার ফুত সকালে মোবাইলে কইছি মা আমি নামাজের পর আসব। আর আইল না। আইল লাশ হয়ে। এই সময় আসলেই আমার বুকে আগুন জ্বলতে থাকে। আমার ফুতরে যারা হত্যা করেছে আমি দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় তাদের ফাঁসি দেখে যেতে চাই। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার একটাই দাবি।’
তবে ওই হামলার ঘটনায় করা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানী প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে দুঃসহ স্মৃতি এখনো ভুলতে পারছেন না নিহত আনসারুলের পরিবার। আনসারুল হক মদন উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই ছিল পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের অদূরে আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে পুলিশের ওপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। তারা নির্মমভাবে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পুলিশ কনস্টেবল আনসারুলকে।
সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো ভুলতে পারছেন না আনসারুলের মা রাবেয়া খাতুন। ওই তারিখ আসলেই ছবির দিকে তাকিয়ে থাকেন বৃদ্ধ মা। জীবিত থাকাকালে ছেলে হত্যাকারীদের ফাঁসি চান তিনি। ওই ঘটনায় তার পুরো পরিবার তছনছ হয়ে গেছে।
শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ঐতিহ্য ও মর্যাদা রক্ষায় দ্রুত এর বিচারকার্য শেষ করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকার বিশিষ্টজনেরা।
ওই দিন পুলিশের তল্লাশির সময় জঙ্গিরা গ্রেনেড হামলা করে। এ ছাড়া তাদের চাপাতির কোপে দুই পুলিশ কনস্টেবল আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম মারা যান। ওই সময় আরও ১২ পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে’ ঘটনাস্থলে জঙ্গি আবির রহমান মারা যান। উভয় পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে নিজ বাসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এলাকার গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিক।
এ ঘটনায় আটক করা হয় জঙ্গি শফিউল ও স্থানীয় তরুণ জাহিদুল ইসলাম ওরফে তানিমকে। পরে একই বছরের ৪ আগস্ট ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ডাংরি এলাকায় র্যাবের সঙ্গে এক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শফিউল নিহত হন।
হামলার তিন দিন পর ১০ জুলাই পাকুন্দিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ সামসুদ্দীন বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আর ২৮ নভেম্বর মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে কিশোরগঞ্জের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-২ বিচারাধীন। মামলার তদন্ত করে শেষ পর্যন্ত মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানকালে ১৯ জন মারা যায়।
নিহত আনসারুল হকের ভাই নাজমুল হক বলেন, ‘‘আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার কি হয়েছে কিনা তা আমরা জানি না। এ ফলাফল আমরা জানি না। আমরা চাই এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে সরকার ফাঁসি দিক। আমার বৃদ্ধ মায়ের আকুতি সরকারের কাছে, মা জীবিত থাকা অবস্থায় যেন তাদের ফাঁসি দেখে যেতে পারেন। ’’
মদন থানার ওসি তাওহীদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি এখানে কয়েক মাস হল নতুন যোগদান করেছি। পুলিশ সুপারের নির্দেশে নিহত আনসারুলের পরিবারের সদস্যদের খোঁজ খবর নিয়েছি। আজ (শুক্রবার) তার সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে উপহার সামগ্রী প্রেরণ করা হয়েছে। তবে আইনের বিষয়টি কিশোরগঞ্জ পুলিশ বলতে পারবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদের নামাজের প্রস্তুতি চলাকালীন পুলিশের নিরাপত্তা চৌকিতে অতর্কিত হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে দুই পুলিশ সদস্য, এক গৃহবধূ, দুই জঙ্গিসহ নিহত হয় ৫ জন। তথ্য সূত্র : তোফাজ্জল হোসেন, মদন, নেত্রকোনা।
এসআর//