Thikana News
৩১ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫


শান্তর সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কাকে হারাল বাংলাদেশ

শান্তর সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কাকে হারাল বাংলাদেশ ছবি সংগৃহীত



 
চট্টগ্রামে ২৫৬ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নামা বাংলাদেশ সমর্থকদের হৃৎকম্পন ধরিয়ে দিয়েছিল ২৩ রানে ৩ উইকেট খুইয়ে। সেখান থেকে শান্ত, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর দায়িত্বশীলতা দিন শেষে ৬ উইকেটের অনায়াস জয় এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে। প্রথম ম্যাচ জিতে সিরিজেও বাংলাদেশ এগিয়ে গেল।

বুধবার (১৩ মার্চ) ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে প্রথম বলেই ফিরে যান লিটন দাস। দিলশান মাদুশঙ্কার করা চমৎকার ডেলিভারিতে স্টাম্প আগলে রাখতে পারেননি লিটন। শিকার হন গোল্ডেন ডাকের। তৃতীয় ওভারে লিটনের পথ ধরেন সৌম্য সরকারও। মাদুশঙ্কার দ্বিতীয় ছোবলে ৩ রানেই নিজের উইকেট দিয়ে আসেন সৌম্য। তুলে দেওয়া সহজ ক্যাচটি লুফে নেন মাহিশ থিকশানা। তাতে ১৪ রানেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে সংকটের সম্মুখীন হয় বাংলাদেশ। অধিনায়ক শান্তর সঙ্গে ক্রিজে আসা তাওহীদ হৃদয়ের দায়িত্ব ইনিংসটাকে পুনরায় গড়ে তোলার হলেও ব্যর্থ হন হৃদয়। দলের যখন ২৩ রান, প্রমোদ মাদুশানের বলে ক্লিন বোল্ড হয়ে যান হৃদয়। তিনিও সৌম্যর মতো মাত্র ৩ রান করেন।

এরপর পুরো দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন অধিনায়ক শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। চতুর্থ উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়েন শান্ত। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩৭ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩৭ রানে আউট হলে ভাঙে সেই জুটি। তাতে আবারও ম্যাচের মোড় ঘুরে যাওয়ার শঙ্কা জাগে।

তবে ভরসা হয়ে দাঁড়ান মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। পঞ্চম উইকেটে শান্তর সঙ্গে পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটি গড়ে বাংলাদেশকে সঠিক দিশায় রাখেন দুজন। ২৩ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ধৈর্য, অভিজ্ঞতা ও দায়িত্বশীলতা। এ সবগুলো গুণই দেখান রিয়াদ, শান্ত ও মুশফিক। রিয়াদ ৩৭ রানে থেমে গেলেও ফিফটি তুলে নেন শান্ত।

সেই পথে হাঁটেন মুশফিকুর রহিম। ইনিংসের ৩৫তম ওভারে ব্যক্তিগত ৫৯ বলে চার মেরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৯তম ফিফটি পূর্ণ করেন মুশফিক।

ওই একই ওভারেই মুশির ফিফটির আগে শান্ত ও মুশফিকের পঞ্চম উইকেটের জুটি পূর্ণ করে ফেলে শতরান। চার হাঁকিয়ে জুটির সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শান্ত।

এরপর ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দেন অধিনায়ক শান্ত। লাহিরু কুমারার অফ স্টাম্পের বাইরে করা শর্ট বলে চার মেরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত। ব্যক্তিগত ১০৮ বলে মাইলফলক ছোঁন তিনি।

সব মিলিয়ে এটি তার অষ্টম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। সাকিব (৩), আশরাফুল (১), মুশফিক (১) ও তামিমের (১) পর পঞ্চম বাংলাদেশি অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি পেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

ওয়ানডে প্রতিপক্ষ হিসেবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা ৩ ম্যাচেই জ্বলে উঠেছেন শান্ত। প্রথম দুই ম্যাচে দুই ফিফটির পর এবার তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে ২০২৩ সাল দারুণ কেটেছে নাজমুল হোসেন শান্তর। ২৬ ইনিংসে ৮ ফিফটির সঙ্গে তিনি সেঞ্চুরিও করেছেন দুটি। এবার অধিনায়ক হিসেবে এ বছরেও সেই ফর্ম ধরে রাখলেন।

শান্তর সেঞ্চুরির পর ৩৮ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। ওই রানটুকুও অনায়াসে তুলে ফেলেন দুজন। শেষ পর্যন্ত মুশফিক ৮৪ বলে ৭৩ এবং শান্ত ক্যারিয়ারসেরা ১২৯ বলে ১২২ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।

এর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজের হারের ক্ষত ঝেড়ে ফেলে চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মুখোমুখি হওয়ার আগে অধিনায়ক শান্ত বলেছিলেন তার বোলারদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। টস হেরে আগে বোলিং করা বাংলাদেশি বোলাররা অধিনায়কের কথার মান রাখেন। ৫০ ওভার শেষ হওয়ার আগেই শ্রীলঙ্কাকে আটকে ফেলেন ২৫৫ রানে।

প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশি বোলারদের হতাশ করেছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। আভিস্কা ফার্নান্দো ও পাথুম নিশাঙ্কা মিলে শরীফুল-তাসকিনদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন। তাতে প্রথম পাওয়ার প্লেতে শ্রীলঙ্কার ওপেনিং জুটিতে উঠেছে ৭১ রান। একচ্ছত্র ভাগ থাকার কথা ছিল শ্রীলঙ্কারই। শেষে এসে তা হতে দিলেন না তানজিম হাসান সাকিব। টানা তিন ওভারে তিন উইকেট নিয়ে রানের চাকার গতি কিছুটা হলেও মন্থর করেন এই ক্রিকেটার।

আঁটসাঁট লাইনে আভিস্কাকে একটু হতাশ করেছেন তানজিম। এরপর অফ স্টাম্পের বাইরে করেছিলেন। তাতে ব্যাট ছুড়েছিলেন আভিস্কা। কানায় লেগে উইকেটের পেছনে গেছে ক্যাচ। মুশফিক ভুল করেননি। ৩৩ রানে ফিরে যান আভিস্কা।

নিজের পরের ওভারে আবার আঘাত হানেন সাকিব। গালিতে ছিলেন ফিল্ডার সৌম্য সরকার। সাকিবের শর্ট বলে পুল করতে গিয়েছিলেন নিশাঙ্কা। তবে শট খেলে ফেলেন বেশ আগেই। ব্যাটের একেবারে নিচের দিকের কানায় লেগে ক্যাচ গেছে সৌম্যর কাছে। প্রস্তুত ছিলেন সৌম্য। তবু অবাক হয়ে গেছেন ক্যাচ নেওয়ার পর। এমন শটে সেখানে ক্যাচ যাবে, সেটি ঠিক স্বাভাবিক নয়। পরপর ২ ওভারে দুই থিতু ওপেনারকে ফেরালেন তানজিম। নিশাঙ্কা থামলেন ২৮ বলে ৩৬ রান করে।

৩ ওভারে তানজিমের ৩ উইকেট! সর্বশেষ তার শিকার সাদিরা সামারাবিক্রমা। ভেতরের দিকে ঢোকা বলে মিড উইকেটের দিকে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন সামারাবিক্রমা। সফল হননি। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ গেছে উইকেটের পেছনে। বলের লাইন অনুসরণ করে লেগ সাইডে সরে যাওয়া মুশফিক ডান দিকে ডাইভ দিয়ে নেন দারুণ ক্যাচ।

মিরাজ এসে ফেরান চারিথ আসালাঙ্কাকে। এরপর পঞ্চম উইকেটে ৬৯ রানের জুটি গড়ে ফেলেছিলেন কুশল মেন্ডিস ও জানিথ লিয়ানাগে। ক্রমেই ভয়ংকর হতে যাওয়া কুশল মেন্ডিসকে থামান তাসকিন আহমেদ। কুশল মেন্ডিস ৫৯ রান করেন ৭৫ বলে। ৫টি চার ও একটি ছক্কা মেরেছেন ইনিংসে। ৩ ওভারের স্পেলে আরও দুটো উইকেট নেন তাসকিন। ডিপ থার্ডে মিরাজের হাতে ক্যাচ বানান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে। আর স্লিপে লিটন দাসের হাতে ধরা পড়েন মাহিশ থিকশানা। ২২৫ রানে সপ্তম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।

এক প্রান্ত আগলে রেখে ইনিংসের দ্বিতীয় ও ৭ ম্যাচের ক্যারিয়ারে তৃতীয় ওয়ানডে ফিফটি তুলে নেন জানিথ লিয়ানাগে। তাকে থামান শরীফুল। ৬৯ বলে ৩ চার ও ২ ছয়ে ৬৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে। লঙ্কান ইনিংসের সর্বোচ্চ রানও এটি।

বাংলাদেশের হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব, শরীফুল ও তাসকিন। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ চট্টগ্রামে ১৫ মার্চ শুক্রবার বেলা আড়াইটায় অনুষ্ঠিত হবে।

ঠিকানা/এনআই

কমেন্ট বক্স