Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

প্রসঙ্গ : ট্রাম্প বাইডেন রিম্যাচ

প্রসঙ্গ : ট্রাম্প বাইডেন রিম্যাচ
২০২৪ সালের নভেম্বওে অনুষ্ঠিতব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রাইমারি নির্বাচনের ফলফলে এাঁ স্পষ্ট হয়ে গেছে বড় ধরনের কোনো অঘটন না ঘটলে ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পাচ্ছেন যথাক্রমে জো বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ সালের নির্বাচনেও তারা দু’জন একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। সেই নির্বাচনে কয়েকটি সুইং (Swing) স্টেটে বিজয়ী হয়ে দেশব্যাপী কমবেশি ৮০ মিলিয়ন ভোট পেয়ে বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সিনেসোটা, জর্জিয়া, অ্যারিজোনা মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার মতো কয়েকটি সুইং স্টেটে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে যাওয়ায় ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হন। তিনি প্রায় ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিকের ভোট পান। আগেরবারের মতো এবারেও তারা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন এবং ভোটযুদ্ধে এবারও তাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

সুইং স্টেট হিসাবে পরিচিত ৭টি রাজ্যে ব্লুমবার্গ পরিচালিত সাম্প্রতিক জরীপে বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্প ভালো অবস্থানে আছেন বলে দেখা যায়। অবশ্য অন্য কয়েকটি স্টেট এর বিপরীত চিত্রও পরিলক্ষিত হয়।

আউট অফ কন্ট্রোল বর্ডার এবং ক্রাইম পরিস্থিতি এবারের নির্বাচনে বড় ইস্যু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তথ্যমতে প্রধানত : যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন শতশত বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে অনেকটা বিনা বাধায় দেশে প্রবেশ করছে। বাইডেন শাসনামলের গত চার বছরে প্রায় মিলিয়ন বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে যা এক অভূতপূর্ব বর্ডার ক্রাইসিসের জন্ম দিয়েছে। মানুষের সাথে প্রবেশ ঘটছে বিপুল পরিমাণ ফ্যান্টানল, মেথ, কোফেন ও হেরোইন জাতীয় ড্রাগ যা প্রতিনিয়ত বহু মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প তথা রিপাবলিকানরা এই সংকটের জন্য বাইডেনের কথিত ওপেন বর্ডার পলিসিকে দাবী করেছেন। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে নানা ধরণের অপরাধের (চুরি, রাহাজানি, ছুরিকাঘাত, পুলিশের উপর হামলা শপ লিস্টিং ইত্যাদি) সংখ্যাও আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। অপরাধীদেও বিচাওে ডেমোক্র্যাটিক ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নীদেও কথিত অনীহাকে এজন্য বিশেষভাবে দায়ী করা হয়। তাছাড়া ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত নৃশংস (Over the top) সামরিক অভিযান প্রশ্নে বাইডেনের ভূমিকা বহু আমেরিকান মুসলমান বিশেষ কওে আরব আমেরিকানদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে, যে কারণে এবাওে তিনি তাদের কতোটা সমর্থন পাবেন, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। মিশিগান রাজ্যে বিপুল সংখ্যক আরব-আমেরিকান বসবাস করেন। ২০২০ সালে বাইডেন ওই রাজ্যে জয় পেয়েছিলেন। এবাওে সেটা না হবার সম্ভাবনাই বেশি।

বর্ডার ও ক্রাইম পরিস্থিতি ছাপিয়ে এবাওে যে ইস্যুটি মার্কিন রাজনৈতিক মহলে  Front and center হয়ে উঠেছে, সেটি হলো, বাইডেনের বয়স তথা তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার প্রশ্ন। সাম্প্রতিক নিউইয়র্ক টাইমস-শিয়েনা কলেজ এবং এবিসি নিউজের জনমত জরীপে দেখা যায়, ৮০ ভাগের অধিক মার্কিন জনগণ মনে করেন, Biden is too old to be President । ৮১ বছর বয়সী বাইডেনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তিনি কী বলছেন বা কোথায় আছেন, প্রায়শ: সেটা ঠাহর করতেও তিনি অক্ষম। তাছাড়া সাবলীলভাবে চলাফেরা এমনকি দাঁড়িয়ে থাকতেও তাকে বেগ পেতে দেখা যায়। মানুষের নামধাম ঠিকভাবে মনে করতে না পারাসহ বক্তব্য প্রদানের সময় সেটা ঠিকভাবে শেষ করতে না পারা তার জন্য অনেকটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ এাঁকে তার Brain Freeze-এর সঙ্গে তুলনার প্রায়াস পাচ্ছেন। সম্প্রতি বাইডেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আল সিসিকে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এবং ফরাসা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়াঁ মিতেরাঁকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করেন বেশি বয়সের কারণে বাইডেনের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা সমীচীন হবে না। অপরদিকে বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প ৭৭ বছর বয়সী হলেও তার স্ট্যামিনা ও মানসিক সুস্থতা (Cognitive heath) নিয়ে অধিকাংশ মানুষের মধ্যে তেমন কোনো উদ্বেগ নেই। প্রেসিডেন্ট বাইডেন অবশ্য তার সম্পর্কে ওঠা এসব মতামতকে ভুল বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি যথেষ্ট সক্ষম বলে দাবি করেন।

সম্প্রতি বাইডেন কর্তৃক সরকারি নথিপত্র নিজের বাড়ি ও অন্যত্র রাখার বিষয়ে মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের স্পেশাল কাউন্সিল রবার্ট হারের (Robert Hur) তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্ট প্রকাশের পূর্বে হার বাইডেনের একাধিক ইন্টারভিউ নেন। রিপোর্টে বাইডেনের স্মরণশক্তি বেশ দুর্বল বলে উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়,  ÒBiden is an elderly man with a poor memory”. বাইডেন কবে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন বা তার টার্ম কবে শেষ হয় এবং তার পুত্র বো বাইডেন কবে মারা যান, এসবের সন তারিখ বাইডেন মনে করতে ব্যর্থ হন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। ফক্স নিউজের হোয়াইট হাউস সাংবাদদাতা পিটার ডুসি বাইডেনকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে বাইডেন জানান, ÒMy memory is fine. I have done a lot since I became President”। 

বাইডেনের Cognitive Decline পরিস্থিতি দেখে অনেকে তিনি কীভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো অত্যন্ত শ্রমসাধ্য ক্যাম্পেন পরিচালনা এবং ট্রাম্পের পরিচালনা এবং ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে কতোটা কী করতে পারবেন, সে বিষয়ে সন্দেহ ব্যক্ত করেছেন। প্রতিটি মানুষের মধ্যে বয়সের প্রভাব পড়াটা স্বাভাবিক হলেও মুক্ত বিশ্বেও নেতাকে মার্কিন জনগণ একজন অমিততেজী ব্যক্তি হিসাবে দেখতে চান, যেমনটি তারা সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড বেগানের মধ্যে দেখেছিলেন। তৎকালীন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের উদ্দেশ্যে রেগানের দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারিত Mr. Gorbachev, Tear Down this wall (Berlin wall) কথাটি এখনো বহু মানুষের মধ্যে তার অমিততেজের কথা মনে করিয়ে দেয়, যদিও সেসময় রেগানের বয়স আশির উপরেই ছির।

বর্ণিত অবস্থার প্রেক্ষাপটে এাঁ বলা যায়, ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাইডেন বর্তমানে Underdog হিসাবে বিবেচিত হচ্ছেন। তা সত্বেও নির্বাচনে বাইডেনের বিজয়ী হবার সম্ভাবনা নেই এাঁ বলা যাবে না। বেকারত্বেও রেকর্ড নিম্নহার, অ্যাবরশন ইস্যুতে নালীর অধিকারের প্রতি অনুণ্ঠ সমর্থন এবং সোশ্যাল সিকিউরিটি বেনিফিট ও মেডিকেয়ার মেডিকেইড কর্মসূচীর সুরক্ষা ও তা চালু রাখার বিষয়ে রিপাবলিকানদের চেয়ে ডেমোক্র্যাটদের অবস্থানের প্রতি মানুষ বেশি আস্থাশীল বলে প্রতীয়মান হয়। তাছাড়া ট্রাম্পের বিশৃঙ্খল ব্যক্তিত্বও (Chaotic Personality) বহু আমেরিকানের পছন্দনীয় নয়। তবে, জনমনে বিদ্যমান ধারণা যে, বাইডেনের আমলে সবকিছুই খুবই ব্যয়বহুল, এটা বাইডেনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। কারণ মার্কিন জনগণ সবকিছুর উপরে অর্থনীতিকে স্থান দেন।
লেখক : কলামিস্ট

কমেন্ট বক্স