Thikana News
৩১ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫


আন্তর্জাতিক নারী দিবস

আন্তর্জাতিক নারী দিবস



 
আন্তর্জাতিক নারী দিবস (পূর্বনাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস) প্রতিবছর ৮ মার্চ পালিত হয়। বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবস উদ্যাপন করে থাকেন। বিশ্বের একেক প্রান্তে নারী দিবস উদ্যাপনের প্রধান লক্ষ্য একেক প্রকার হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদ্যাপন মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও নারীদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পায়।

নারীর সমঅধিকার, মর্যাদা এবং অসম শ্রম মজুরির প্রতিবাদের ক্ষেত্রে দিনটির তাৎপর্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৫৭ সালে কর্মজীবী নারীদের শিল্প-কারখানার শ্রম সময় কমানো, মানবিক আচরণবিধির প্রয়োগ, শ্রম মজুরির বৈষম্য দূরীকরণসহ আরও অন্যবিধ স্বাধীনতা প্রদানকে কেন্দ্র করে নারী শ্রমিকেরা রাজপথে নেমে আসেন। আর এসবের সূচনা করা হয় নিউইয়র্কের সুতা কারখানার অসংখ্য নারী শ্রমিকের পক্ষ থেকে। অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এই ঐক্যবদ্ধ মিছিলে সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়ন সারা বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সামনেও চলে আসে। নারীর প্রতি অমানবিক আচরণ এবং অধিকার হরণের করুণ আখ্যান। নারীর এই ন্যায্য দাবি এবং বঞ্চনার ইতিহাসে বিক্ষুব্ধ হন বিভিন্ন দেশের নারীনেত্রীরাও। সম্মিলিতভাবে সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে নারীর প্রতি এই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে সোচ্চার হতে থাকে বিশ্বের অসংখ্য নারী শ্রমিক। ঘটনার পথপরিক্রমায় কেটে যায় আরও অর্ধশত বছর। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নারী শ্রমিকেরা সংগঠিত হতে থাকে এবং একটি সুদৃঢ় আন্দোলনের কাঠামোও প্রস্তুত হয়ে যায়। এই বিরাট কালপর্বে নারীর প্রতি অসাম্য, বৈষম্যের মাত্রা তো কমেইনি, বরং আরও বাড়তে থাকে। শ্রেণিবিভক্ত সমাজে মালিকানার মূল শক্তিটা যাদের হাতে থাকে, তারাই সামগ্রিক উৎপাদনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিবেচিত হয়। আবার এই আধিপত্য বিস্তারকারী মালিকপক্ষ সমাজের সংক্ষিপ্ত একটি গোষ্ঠী। আর সিংহভাগ হলো সাধারণ শ্রম বিনিয়োগ শ্রেণি, যারা পুরো উৎপাদনের মূল চালিকাশক্তি। আর এই শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর প্রায়ই অর্ধাংশ নারী। উৎপাদনের মূল কর্মক্ষম শক্তি হিসেবে শোষণ আর বঞ্চনার শিকার নারী-পুরুষ সবাই। কিন্তু সামাজিক অব্যবস্থার কারণে দুর্বল এবং পিছিয়ে পড়া অংশ হিসেবে নারীরা এ ক্ষেত্রে অনেকখানিই এগিয়ে। ফলে নামেমাত্র শ্রম মজুরির ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের বিভাজন দৃষ্টিকটু ও অমানবিক।

প্রযুক্তি বিদ্যাসহ পুঁজির অব্যাহত বিকাশ উৎপাদনশীলতায় যে গতি সঞ্চার করেছে, তা অবশ্যই যুগান্তকারী। পাশাপাশি শ্রমবাজারে শ্রমিকদের মজুরিতে যে ধরনের অনিয়ম ও অবিচারের মাত্রা যোগ করা হয়েছে, সেটাও কোনোমতেই চলমান গতি নির্ণয়ে সহায়ক হয়নি। কারণ শ্রমঘণ্টা হিসাব করে যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়, শ্রমিকদের সে তুলনায় শ্রম বিনিয়োগ করতে হয় অনেক বেশি। ফলে বঞ্চনার শিকার হতে হয় অসংখ্য শ্রমিককে। যান্ত্রিক সভ্যতার বদৌলতে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি পণ্য উৎপাদন সম্ভব হয়। কিন্তু শ্রমিকের শ্রম সময় সেই ১২ ঘণ্টাই। সুতরাং পণ্য উৎপাদন হচ্ছে আরও বেশি, কিন্তু সে তুলনায় মজুরির ন্যূনতম অংশও বাড়াতে চায় না মালিকপক্ষ। সেই প্রেক্ষাপটে শ্রম সময় ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা করার দাবিতে জোর আন্দোলনে শ্রমিকেরা রাজপথে নেমে আসে। আর বৈষম্যপীড়িত নারী শ্রমিকেরাও তাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিক্ষোভ আর প্রতিবাদের ঝড় তোলে। বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরি করে তাদের এই দাবি আদায়ের লক্ষ্য ক্রমেই জোটবদ্ধ হতে থাকে।

এরই জোরালো উদ্যোগ হিসেবে ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিরাট সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জার্মানির সমাজতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক কর্মী ক্লারা জেটকিন। তিনি জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির একজন অন্যতম স্থপতি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এই সমাবেশে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ১০০ জন নারীনেত্রী অংশ নিয়েছিলেন। সম্মেলন থেকে জোর দাবি জানানো হয়, ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার। পর্যায়ক্রমে ১৯১১ সালের ৮ মার্চ নারীদের সমঅধিকার দিবস পালন করা হয়।
আজকে নারীর অধিকার, দাবি, নারী নির্যাতন রোধÑযা কিছু নিয়েই আমি লিখতে চাই বা বলতে চাই না কেন, হোক সে নারী গৃহিণী বা কর্মজীবী, সবার আগে দরকার উন্নত চেতনা। নারীর কাজ করা বা না করার সঙ্গে এই চেতনা সম্পর্কযুক্ত নয়। কুসংস্কার, পুরোনো রীতিনীতি ও আচরণের পরিবর্তন দরকার, আরও দরকার মানবিক আবেগ ও মানবিকতার জয়। মানবতা হলো নিজের কথা চিন্তা করে অন্যের প্রতি উদার হওয়ার ক্ষমতা। যে মানুষ অন্যের প্রতি উদার হতে পারে না, সে তার নিজের প্রতিও উদার নয়। দিবস আমাদের সচেতন করবে, এগিয়ে যাওয়ার পথ রচনা করে দেবে, কিন্তু আমরা আমাদেরকে সেই সফলতার পথে নিজের চেষ্টায় এগিয়ে নেব। আর এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষা। আমাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য অর্থনৈতিক সফলতা আনতে হবে। সবাইকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে, তা কিন্তু নয়, এখন কারিগরি শিক্ষাসহ অনেক সুযোগ রয়েছে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। প্রত্যেক নারী তার চাহিদা এবং নিজের ইচ্ছাকে কাজে লাগিয়ে সফলতার পথ খুঁজে নেবে। তবেই নারী দিবস সার্থক। নারী জনম সফল।

নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জাতিসংঘ ৮ মার্চকে বিশ্ব নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। নারীর মৌলিক অধিকারগুলোকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি অর্জনের ব্যাপারেও জাতিসংঘ প্রচেষ্টা চালায়। এ লক্ষ্যে জাতিসংঘ ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৫ সালকে ‘নারী দশক’ হিসেবে ঘোষণা করে। জাতিসংঘের সহযোগিতায় মেক্সিকো, কোপেনহেগেন, নাইরোবি ও বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয় চারটি বিশ্ব নারী সম্মেলন।

নারীদের কাজের স্বীকৃতি, পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় নারীর ভূমিকা, নারীর অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা, উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বীকৃতি, নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিতকরণ, সারা বিশ্বে নারী নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধ করা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-প্রজনন প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারীর প্রতিবন্ধকতা দূর করাসহ সকল ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণই নারী দিবসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। পৃথিবীর সকল নারী আত্মসম্মানের সঙ্গে নিজের অধিকার বুঝে পাক। কন্যা জায়া জননী যে রূপেই নারী আসুক, সে যেন সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকে-এই কামনা করি।

কমেন্ট বক্স