জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতির খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকার এবং বিএনপি উভয়েই এ কাজটি করে আসছে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াত শেষ পর্যন্ত কোন পক্ষে অবস্থান নেয়, তা গভীর আগ্রহের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো এবং পর্যবেক্ষক মহল।
বিএনপির গত ১৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামসহ যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মসূচির মুখ্য সহযোগী ছিল জামায়াতে ইসলামী। বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপির আচরণ ও ভূমিকায় জামায়াতের নেতাকর্মীদের প্রচণ্ড হতাশা, ক্ষোভ থাকার পরও তারা বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করেনি। অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক স্বার্থে জামায়াত বিএনপিকে আদর্শিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রায় অভিন্ন অবস্থানে থেকে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলা ও সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করা নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। অন্যদিকে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় আসা নিয়েও দলের বিভিন্ন পর্যায়ে তীব্র আপত্তি রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে অনন্যোপায় হয়েই জামায়াত নেতাদের সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ও গোপন আঁতাতের বিষয় বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে।
দলের শীর্ষ নেতাদের হারিয়েছে জামায়াত। যুদ্ধাপরাধের দায়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এ নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে সরকারবিরোধী তীব্র অসন্তোষ রয়েছে। পাশাপাশি বিএনপিকে প্রায় আদর্শ, চিন্তাচেতনায় বিশ্বাসী হিসেবে মনে করলেও চরম দুঃসময়ে দলটিকে কাছে পায়নি জামায়াত। এমনকি মুখের সহানুভূতিও জানায়নি, কাগজে বিবৃতিও দেয়নি। তার পরও অভ্যন্তরীণ দলীয় রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আঞ্চলিক প্রভাবে বিএনপিকেন্দ্রিক রাজনীতিই করে আসছে জামায়াত। কিন্তু অত্যন্ত কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে জামায়াত বিএনপির রাজনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আশার আলো দেখছে না। আওয়ামী লীগ আগামীতে ক্ষমতায় এলে জামায়াতকে অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে জেলের জীবন কাটাতে হবে। বছরের পর বছর হামলা-মামলায় অতিষ্ঠ হয়ে তারা আর দুর্ভোগ পোহাতে চান না। ছিয়াশি সালসহ বিভিন্ন সময়ে জামায়াত আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সমঝোতায় চলেছে। জামায়াত নেতাদের বড় অংশ মনে করে, সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় এখন যদি দলের নিবন্ধন ফেরত পাওয়া যায়, সেটিই হবে তাদের বড় অর্জন।
নির্বাচন সামনে রেখে সরকার জামায়াতের প্রতি নমনীয়তার নীতি নিয়েছে। গত কয়েক বছর দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হারে মামলা দিয়ে গ্রেফতারের জন্য বাড়ি বাড়ি অভিযান চালানো হলেও অতি সম্প্রতি তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা সরকারের সঙ্গে গোপন সমঝোতারই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে। ঈদের পর বিএনপি ও তার অপরাপর ইসলামি সংগঠনগুলোকে তেমন একটা বলিষ্ঠ ভূমিকায় দেখা যাবে না।
জানা যায়, দলীয় প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ না থাকলেও জামায়াতকে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো এবং তার নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আদালত কর্তৃক প্রতীক বাতিল করার বিষয়টি চাপা পড়ে গেছে। এ নিয়ে জামায়াত কোনো রকম বাড়াবাড়িও করবে না। তারা নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পাচ্ছে। সরকার এর আগে ঘোষণা করেছিল, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আইনগত প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। আইনমন্ত্রী নিজেই এ ব্যাপারে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই কার্যক্রম স্থগিত রেখে এখন জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়া ও রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালানোর প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। জামায়াতের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে বঙ্গবন্ধুকে জাতির স্থপতি, মহান চার জাতীয় নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান দেখাবে। গঠনতান্ত্রিক এই সংশোধনী এবং আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ সাপেক্ষে জামায়াতকে প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর অবারিত সুযোগ দেবে সরকার। নিবন্ধন না পেলে বিডিপির নামে রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াতের।