ঋণ জালিয়াতিতে ডুবতে বসা বেসিক ব্যাংককে টেনে তুলতে নানাভাবে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর গতি এতই মন্থর যে, এভাবে চললে লাগবে আরো অন্তত ১৬ বছর। অথচ প্রতিবছর বাড়ছে ব্যাংকটির পরিচালন ব্যয়। এসব মন্তব্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ সরেজমিন প্রতিবেদনের। যদিও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুর রহমান জানালেন, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।
প্রতিষ্ঠার পর বেসিক ব্যাংকে প্রথম বড় ধরনের ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটে ২০০৯ সালে। এরপর মাত্র কয়েক বছরে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয় বিভিন্ন শাখা থেকে। সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির ভারে বিধ্বস্ত ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি গেল এক যুগেও।
আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, একসময়ের স্মার্ট এ ব্যাংক এখন ধুঁকছে পরিচালন ব্যয় মেটাতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকায়। তবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা থেকে বিভিন্ন ছাড় না পেলে যার পরিমাণ দাঁড়াতো প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটিতে (৭ ৩৮৬ কোটি টাকা)।
বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ড. জাহেদ হোসেন বলেন, বেসিক ব্যাংকের সিস্টেমে কিছু সমস্যা আছে। তারা সময়মতো আর্থিক বিবরণ দেয় না। তাদের জবাবদিহিতা নেই। সবচেয়ে বড় সংকট ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’। ব্যাংকটির বোর্ডে অযোগ্য বক্তি রয়েছেন বেশি। যে ক’জন যোগ্য আছেন, তারাও ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। বোর্ডে প্রকট সমস্যা রয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনুসর বলেন, সত্যিকার অর্থে এক টাকাও উদ্ধার হয়নি। বিচার তো একটা প্রক্রিয়া। সম্পদগুলো একীভূত করতে হবে। সঞ্চয়কারীদের কিছু দিতে হবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে বেসিক ব্যাংক পুরোপুরি ব্যর্থ।
প্রতিবেদন বলছে, ব্যাংকটির সংস্থানপূর্ব ক্ষতি ছাড়িয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা। কমেছে আমানত ও লোকসানের পরিমাণ। আগের পরিদর্শনের সময় ব্যাংকটির সংস্থানপূর্ব ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৪০২ কোটি টাকা। গেল বছরে খানিকটা বেড়েছে বকেয়া ঋণ আদায়। ফলে ক্ষতি কমেছে ২৩৫ কোটি টাকা। কিন্তু এভাবেও যদি আদায় চলতে থাকে, তাহলে ব্যাংকের ক্ষতি পোষাতে লাগবে আরও অন্তত ১৬ বছর।
বকেয়া ঋণ আদায় এবং ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় কমাতে নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, নেয়া হয়েছে জোর পদক্ষেপ, যাতে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে না খুব একটা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ধারাবাহিকভাবে চলে আসা বকেয়া ঋণ আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে একসময় বসে যেতে পারে ব্যাংকটি।
ঠিকানা/ছালিক