
নিউইয়র্ক : এ ছবিটি এখন কেবল স্মৃতি! সড়ক দুর্ঘটনায় তছনছ করে দিয়েছে হাফিজ আহমেদ এঞ্জেল এবং তার স্ত্রী সাথী আহমেদের সাজানো সংসার। দু’জন পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া তাদের একমাত্র ছোট কন্যা রায়দা আহমেদ লড়ছে হাসপাতালে আর মা-বাবাকে হারিয়ে একমাত্র ছেলে ইশাম আহমেদ শোকে কাতর!
জানা গেছে, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বিংহ্যামটনে নতুন কেনা বাড়ি দেখতে যাচ্ছিলেন হাফিজ আহমেদ। হঠাৎ উডবারির লং মাউন্টেন পার্কওয়েতে পেছন থেকে একটি গাড়ি তাদের গাড়িকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে তাদের গাড়িটি দুমড়ে যায়। এসময় সেখানে টহল পুলিশের একটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহত অবস্থায় তাদের ভ্যালহেল্লালের ওয়েস্টচেস্টার হাসাপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা হাফিজ ও তার স্ত্রী সাথীকে মৃত ঘোষণা করেন।
একটি সূত্র জানায়, টহল পুলিশের একটি গাড়ি শুক্রবার রাতে ওই এলাকায় সন্দেহভাজন একটি গাড়িতে ধাওয়া করছিল। গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে হাফিজ আহমেদের গাড়িকে পেছন থেকে আঘাত করে। পুলিশের গাড়িটিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রন্ত হয়েছে।
আরেক সূত্র জানায়, যে গাড়িটি হাফিজ আহমেদের গাড়িটিকে ধাক্কা দিয়েছিলো সেই গাড়ির চালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর রুট-৬ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ থাকলেও পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ঐ চালককে ধরতে অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক স্টেট পুলিশ।
নিহত হাফিজ আহম্মেদের বাড়ি গাজীপুরে এবং তার স্ত্রী সাথী আহম্মেদের বাড়ি বরিশালে। পরিবারের চার সদস্যসহ তারা দীর্ঘদিন ধরে নিউইয়র্কেই থাকতেন। নিহত সাথী নিউইয়র্কে গাজীপুর সোসাইটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। দুজনের মৃত্যুতে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহতদের স্বজন চাঁদপুরের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের জানান, নিউইয়র্কের কুইন্সে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে নামাজে জানাযা শেষে লং আইল্যান্ডে ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল মুসলিম কবরস্থানে তাদের দাফন হওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, নিউইয়র্ক পুলিশ বাহিনীতে মালামাল সরবরাহ কাজের ঠিকাদার ছিলেন হাফিজ আহমেদ। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, হাফিজ আহমেদ ইউএস আর্মির কোরস অব ইঞ্জিনিয়ার্স নর্থ আটলান্টিক ডিভিশনে কর্মরত ছিলেন। নিউইয়র্কে তারা থাকতেন ব্রুকলিনের ফার রকওয়েতে।
হাফিজ আহমেদের বাবা শামছুল হক মুন্সি ১৯৯১ সালে ডিভি লটারি জিতে আমেরিকা আসেন। পরে ১৯৯৬ সালে পরিবারের সদস্যদের সবাইকে সেখানে নিয়ে যান তিনি। চাঁদপুরে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের সাচনমেঘ গ্রামের তাদের পৈতৃক বাড়ি।
পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া রাইদাকে দেখভাল করার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছে নিউইয়র্ক স্টেট। আগামী এক মাস রাইদাকে দেখভাল করার নিমিত্তে হাসপাতালের কাছে একটি হোটেল রুম বরাদ্দ রাখা হয়েছে ইশামের নামে।
যুক্তরাষ্ট্রে সন্দেহভাজন অপরাধীর গাড়ি ধাওয়া বা চেজ করা নতুন ঘটনা নয়। এ কারণে বহু নিরাপরাধ গাড়ির চালক ও পথচারী দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে অনেকে যে কোনোভাবে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পালাতে গিয়ে ঘটাছে বড় দুর্ঘটনা। পুলিশ বুলেট প্রুভড গাড়িতে থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারলেও জনসাধারণের জীবনমালের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। এ বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা।
এদিকে হাফিজ আহমেদ ও সাথী আহমেদের অকাল মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে সোস্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেছেন। অনেকে তাদের মৃত্যু নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাংলাদেশি বলছেন, পুলিশের কাজ জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা। কিন্তু পুলিশ অপরাধীকে ধরতে গিয়ে অন্যের জীবনকে বিপণ্ন করে ফেলছে। এই মৃত্যুর দায় পুলিশ এড়াতে পারে না।