Thikana News
১৫ মার্চ ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশের পক্ষে চীনের শক্ত অবস্থান : অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির আশঙ্কা

বাংলাদেশের পক্ষে চীনের শক্ত অবস্থান : অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির আশঙ্কা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকার এবং বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি তৎপরতা যে কতটা ব্যাপক, ক্রমেই তা স্পষ্ট হচ্ছে। সেনাসমর্থিত বিগত ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন সরকার গঠনের সময়ও দেশি-বিদেশি কার্যকলাপ এতটা প্রকাশ্য রূপ নেয়নি। কূটনৈতিক মহল ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা আসন্ন নির্বাচন, বর্তমান সরকার ও দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়েই শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা, বলিষ্ঠ মনোভাব এবং তার পেছনে চীন দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেওয়ায় আগামী নির্বাচন অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ও দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা নিয়ে তেমন শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলেও কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। কূটনৈতিক মহল মনে করেন, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের অপসারণ বা বিএনপি ও তার সহযোগীদের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন করা বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের লক্ষ্য নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ শক্তিধর দেশগুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা।
এদিকে আন্তর্জাতিক ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন প্রকাশ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকার ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বহাল রাখার পক্ষে অত্যন্ত জোরালো অবস্থান নিয়েছে। নিকটতম প্রতিবেশী ও চরম দুঃসময়ের পরীক্ষিত মিত্র ভারত শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পক্ষেই প্রকাশ্য অবস্থান ঘোষণা করেছে। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা তার প্রকাশও ঘটাতে শুরু করেছে। কূটনৈতিক মহল ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা মনে করেন, অস্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে দিনমজুর, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তসহ সর্বস্তরের মানুষ বিরাট দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ডলারের সঙ্গে টাকার অমূল্যায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, রাশিয়ার আধিপত্যবাদী যুদ্ধ, আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রভৃতি দেশে দেশে সংকট তীব্র করেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। কিন্তু এখানে প্রবলভাবে ক্রিয়াশীল সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারের চরম ব্যর্থতার পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থা মনিটরিং না করা, সমস্যা চিহ্নিত করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, বাণিজ্যসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের অদূরদর্শী, অযোগ্য নেতৃত্বসহ আরো কিছু বিষয় এ জন্য বহুলাংশে দায়ী। মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ বেড়ে চললেও বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনে গতি পায়নি। তবে তফসিল ঘোষণার পর বা তার কিছু আগে বিএনপি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে চরম ও চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে, যা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এর পেছনে থাকতে পারে বিশ্বের প্রভাবশালী দু-একটি দেশের ইন্ধন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু কিছু বক্তব্য ও অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হতাশ করেছে। ক্ষুদ্র একটি দেশের বিশ্ব মোড়লের বিপক্ষে এমন প্রকাশ্য অবস্থান তাদের হতবাক করেছে। অবশ্য শেখ হাসিনাকে পেছন থেকে শক্তি জোগাচ্ছে মহাশক্তিধর চীন। অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সামরিক সব ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রকাশ্য ঘোষণা বাস্তবায়নও করছে। বাংলাদেশের এই চীনপ্রীতি ও তাদের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তুষ্টির প্রধান কারণ।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, সুন্দরভাবে ব্যাপক সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের ঘটনা দেশি-বিদেশি নির্বাচনবিরোধীদের হতাশ করেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও অনুরূপভাবে সম্পন্ন করার যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন ও সরকার। অন্যদিকে নির্বাচন প্রতিহত করার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। পরিকল্পিতভাবেই তারা সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে বলে সরকারি মহল আশঙ্কা করছে। বিএনপি নেতাদের মতে, এ ছাড়া কোনো বিকল্পও সরকার তাদের সামনে অবশিষ্ট রাখেনি। অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই তাদেরকে এ পথ বেছে নিতে হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির এই হুংকার ও সরকারের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তার নাগরিকদের সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছে। সরকারকে মারাত্মক রকম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপরও মার্কিন প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে কুণ্ঠিত নাও হতে পারে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করেন। এ পদক্ষেপ নিতে সময় নিতে পারে তারা বা শেষ পর্যন্ত নাও নেওয়া হতে পারে। পরবর্তী পর্যায়ে গার্মেন্টসামগ্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। পশ্চিমা কয়েকটি দেশকেও তারা এ ব্যাপারে সহযোগী করার চেষ্টা করছে বলেই জানা যায়। কূটনৈতিক মহল মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে চাপে রেখে তাদের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সামরিক জোটে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা চায় তারা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের ধীরে চলো নীতি এবং যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার নীতির বিপক্ষে তারা। মিয়ানমারকে নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় তারা। চীনকে দুর্বল করে মিয়ানমার থেকে তাদের কর্তৃত্বহীন করাই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম উদ্দেশ্য। বিএনপি বা অন্য কোনো শক্তির পক্ষে পরোক্ষ অবস্থান নিয়ে তাদের ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। তবে অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও ব্যাপক সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তাদের প্রত্যাশিত। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে কোনো রকম হিংসাত্মক পরিস্থিতির উদ্ভব যুক্তরাষ্ট্রের দৃশ্যত কাম্য নয় বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
মিয়ানমারকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার বিশেষ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। চীনকে দুর্বল করাই এর মুখ্য উদ্দেশ্য। মিয়ানমারের জান্তা সরকারবিরোধী শক্তিকে তারা সহায়তা করছে। সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে। জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে তারা সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। তাদের কিছুসংখ্যক সশস্ত্র সদস্য কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছে। মাঝেমধ্যে তারা সশস্ত্র হামলাও চালায়। এদের নিয়ে সরকার সংকটে রয়েছে। একজন সশস্ত্র সদস্য বিদ্রোহী নেতা কিছুদিন আগে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিহত হওয়ার ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অসন্তুষ্ট করে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর তাদের ক্ষুব্ধ হওয়ার এটাও অন্যতম কারণ। মিয়ানমারে জান্তা সরকারবিরোধী সামরিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সহযোগিতা চায়। চীনকে অসন্তুষ্ট করে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে নয় বাংলাদেশ। অতি সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ভূমিকা রাখছে বলে সরকারিভাবেই বলা হচ্ছে।
 

কমেন্ট বক্স