Thikana News
০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মার্কিন ঘোষণা বাংলাদেশকেই বিশ্ব দরবারে হেয় করেছে

মার্কিন ঘোষণা বাংলাদেশকেই বিশ্ব দরবারে হেয় করেছে
 বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তা, ভিসা না দেওয়ার হুমকি, নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক দল হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য যেমনি বিরোধী দল বিএনপির জন্যও কেবল বিব্রতকরই নয়, অত্যন্ত অসম্মানজনক। বাংলাদেশের জন্যই সেটা অমর্যাদাকর।
সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রশ্নে মার্কিন নতুন ভিসানীতিকে হুমকিস্বরূপ যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। তারা মনে করেন, মার্কিন ঘোষণা অঙ্গীকারেই শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারেরই নাকি প্রতিফলন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তারা যদি যথেষ্ট আস্থাশীলই হবেন, তাহলে নতুন ভিসানীতিতে বাংলাদেশের প্রতি এতটা বৈরী আচরণ কেন! সরকারি বক্তব্য ও পদক্ষেপ যদি গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে নির্বাচনে জড়িত সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি বিচার বিভাগের লোকজনের প্রতিও কঠোর আচরণ নেওয়া কি যৌক্তিক? মার্কিন নতুন ভিসানীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে যারা বাধাগ্রস্ত করবে, তারা এই প্রক্রিয়ায় জড়িত। সরকারের কর্মকর্তা, সরকারি ও বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী-সমর্থক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এর আওতায় পড়বেন। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবেন অর্থাৎ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সন্ত্রাসমুক্ত, কারচুপিমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে যারাই অন্তরায় হয়ে ভূমিকা রাখবেন, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ভিসা দেওয়া হবে না। ভোট কারচুপি, জালিয়াতি ছাড়াও ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণকে সংগঠিত হতে না দেওয়া, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে না দেওয়া, সহিংসতার মাধ্যমে বাধা দেওয়া, রাজনৈতিক দল, ভোটার সাধারণ, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রকাশে বাধাদান, বিরত রাখা মার্কিন নতুন এ নীতির আওতায় পড়বে। বিরোধী দলের প্রতিও সমভাবে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টিকারী এ ঘোষণা।
মার্কিন এই ভিসানীতি উদ্বেগজনক নয়, নিষেধাজ্ঞাও নয় বলেই সরকার মনে করে। তারা মনে করে, এ জন্য বিএনপিরই উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা। কারণ তাদের মতে, নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি অতীতে সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘মার্কিন ভিসানীতিতে সরকারের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই। কারণ আমরা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও কূটনৈতিক মহল মনে করেন, বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে না যাওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশনের আওতায় নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলেছে। অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তারা যদি নির্বাচনেই অংশ না নেয়, সে ক্ষেত্রে মার্কিন সংশোধিত ভিসানীতি বিএনপির জন্য বাড়তি কী সুবিধা বয়ে আনবে বা এ থেকে কী ফায়দা নিতে পারবে। নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এ ঘোষণা ও এ-সংক্রান্ত কার্যকলাপ বিএনপির নেতাকর্মীদের মার্কিন ভিসানীতির আওতায় শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচিত করবে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে সরকার নির্বাচনকেন্দ্রিক অনৈতিক কার্যক্রম নিরুৎসাহিত করতে অধিকতর আগ্রহী হবে। সিটি করপোরেশনসমূহের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছে। তাদের অনুপস্থিতিতে সরকারি মহল সূক্ষ্ম কারচুপিরও আশ্রয় যদি নেয়, তাহলে প্রতিবাদ করার কেউ নেই। কারণ বাদবাকিরা সরকারের সুবিধাভোগী, সরকার সমর্থক। নির্বাচনে সরকারি দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিলেও সরকার হটানোর পক্ষে নয় তারা।
কারচুপি, জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপক উপস্থিতিহীন নির্বাচন হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে হিংসাত্মক কার্যকলাপসহ নির্বাচন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ অন্যদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আসবে। এ অবস্থাটা সব পক্ষের জন্যই রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর। লাভবান হবে না কেউই। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলেনি, যা বিএনপিকে দুর্বল করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃত অর্থেই সুষ্ঠু, প্রভাবমুক্ত নির্বাচন চায়। এর ব্যত্যয় হলে তারা কঠোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে এবং নতুন কঠিনতর নিষেধাজ্ঞা, শর্ত আসবে। বিদ্যমান বিধিনিষেধেই কেবল সরকার ও বিএনপিকেই নয়, বাংলাদেশকেই অমর্যাদার পরিস্থিতিতে নিপতিত করেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনই এ অবস্থার কারণ।

কমেন্ট বক্স