ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে ঘরে ঘরে দেখা দেয় জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি। আর ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস-সহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান থেকে বাঁচতে জোরালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকা জরুরি। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা দেহকে শুধু রোগ থেকেই রক্ষা করে না বরং রোগ তৈরির উপাদানের বিরুদ্ধে লড়তেও সাহায্য করে।
তাই অসুস্থ হওয়া থেকে রক্ষা পেতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত রাখা জরুরি। সেজন্য শুধু খাবার নয়, বিভিন্ন পানীয় পান করাও উপকারী।
পানি
মানব দেহের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পানি। আর দেহ সচল রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সচল রাখতে পানির প্রয়োজন হয়।
মার্কিন পুষ্টিবিদ জুলিয়া আপটন এই বিষয়ে ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “পানিশূন্যতার কারণে ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাস বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি হতে থাকে দেহে। এজন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি পান করতেই হবে।”
কতটা পানি পান করতে হবে তা নির্ভর করে দেহের ওজনের ওপর। সাধারণত, দেহের ওজনের অর্ধেক পরিমাণ পানি পান করতে হয়। যেমন- ওজন যদি হয় ১৫০ পাউন্ড বা ৬৮ কেজি তবে পানি পান করতে হবে ৭৫ আউন্স বা প্রায় আড়াই লিটার।
পুষ্টি শোষণে সহায়তা পানি। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। নাক, মুখ ও গলার শ্লেষ্মা ঝিল্লি সুস্থ রেখে ‘প্যাথোজেন’য়ের বিরুদ্ধে কাজ করতে সাহায্য করে।
পানি ‘লিম্ফ্যাটিক’ তরল তৈরিতে প্রয়োজন হয়, যা রোগের বিরুদ্ধে লড়তে শ্বেতরক্ত কণিকা সরবরাহ করতে সাহায্য করে।
গ্রিন টি
এই চা প্রাকৃতিক সুরক্ষক তৈরি করে। রয়েছে উপকারী পলিফেনল ফ্লাভানয়েডস সমৃদ্ধ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং নির্দিষ্ট কিছু কোষের প্রক্রিয়াগত প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।
‘মলিকিউলস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রিন টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষের অক্সিডেটিভ চাপ কমায়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সংক্রমণ কমাতে পারে। ক্যালরি মুক্ত হওয়ার কারণে গ্রিন টি নানানভাবে দেহের উপকার করে।
আদা লেবুর চা
বাজারে কিনতে পাওয়া যায় এমন ‘রেডিমেইড’ চায়ের চেয়ে ভেষজ চা বেশি উপকারী।
‘অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়- তাজা আদা, লেবু ও গরম পানি দিয়ে তৈরি পানীয় কোষের অক্সিডেটিভ চাপ কমায়। লেবুর রসে থাকা ভিটামিন সি প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে।
আদাতে রয়েছে একশটিরও বেশি ‘বায়োঅ্যাক্টিভ’ যৌগ যা বমি-বমিভাব ও কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। রক্তের লিপিডস উন্নত করে, প্রদাহ কমায়- জানা যায় ‘নিয়ট্রিয়েন্ট’ সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে।
শতভা খাঁটি কমলা বা আঙ্গুরের জুস
কমলার রস ঠাণ্ডা ও সর্দির ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। সিট্রাস ফলের রস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন ইমিউনোলজি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে পুষ্টিবিদ আপটন জানান, গবেষণায় দেখা গেছে সিট্রাস ফলের ভিটামিন সি ও ফোলেইট- রোগের প্রতিরক্ষক হিসেবে কাজ করে। আর রোগ প্রতিরোধক কোষ সুরক্ষিত রাখে।
এর ‘বায়োঅ্যাক্টিভ’ যৌগ প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে।
কমলা ও আঙ্গুরের রস পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং দৈনিক প্রয়োজনীয় শতভাগ ভিটামিন সি’র যোগান দিতে পারে।
একশত ভাগ ফলের রস ভিটামিন এ এবং ফোলেইট সরবারহ করে।
আর বাজার থেকে প্যাকেটজাত ফলের রস কেনার সময় সেটা ভিটামিন ডি ‘ফোর্টিফাইড’ বা যুক্ত করা আছে কি-না তা দেখে নিতে হবে। এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর অত্যাবশ্যক উপাদান।
টমেটোর রস
অন্যান্য সিট্রাস ফলের মতো টমেটো উচ্চ ভিটামিন সি এবং লাইকোপিন সমৃদ্ধ; যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যারোটিনয়েড’য়ের মতো কাজ করে। আর স্বাস্থ্যের উপকারী প্রভাব ফেলে।
ঠাণ্ডা বা সর্দি হলে টমেটোর সুপ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই সবজির রসে থাকা ভিটামিন সি ঠাণ্ডা উপশমে সহায়তা করে।
আট আউন্স বা এক কাপ টমেটোর রসে ৫০ ক্যালরি থাকে। এটা চিনি মুক্ত আর রয়েছে প্রায় শতভাগ ভিটামিন সি।
সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখতে কম সোডিয়াম যুক্ত টমেটোর জুস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ঠিকানা/এসআর