প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে অনাবাসী বাংলাদেশি ক্যাটাগরিতে কমার্শিয়াল ইমপর্টেন্ট পারসন (সিআইপি) ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ১১ বাংলাদেশি সিআইপি মর্যাদা লাভ করেছেন। এর মধ্যে ২০২১ সালের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে চারজন সিআইপি নির্বাচিত হন। তারা হলেন রফিকুজ্জামান খান, মুহাম্মদ আব্দুল কাদের, মারুফা আহমদ ও কল্লোল আহমদ। ২০২২ সালের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে চারজন সিআইপি হন। তারা হলেন কল্লোল আহমদ, নীর শামসুননাহার, বিল্লাল হোসাইন ও শাহপারা আনজুম আহমদ। ২০২৩ সালের জন্য পাঁচজন অনাবাসী বাংলাদেশি সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন কল্লোল আহমদ, ড. এব্রাহাম মোহাম্মদ সরকার, সুবর্ণা সিমন্তনী, আহাদুল ইমাম, আমজাদ হোসেন চৌধুরী ও মারুফা আহমেদ। এ ছাড়া ওই তিন বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা অনাবাসী বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে আরও অনেকে সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন বছরে যে ১১ জন সিআইপির মর্যাদা পেয়েছেন, তারা নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। তারা আগামী দুই বছরের জন্য সিআইপি মর্যাদা পাবেন এবং সিআইপিদের জন্য নির্ধারিত সুযোগ-সুবিধা পাবেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও তারা বিশেষ সুবিধা পাবেন। নিউইয়র্ক থেকে যারা সিআইপি হয়েছেন এর মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি একই পরিবারের। তারা হলেন কল্লোল আহমদ, মারুফা আহমদ ও শাহপারা আনজুম আহমদ। সিআইপি মর্যাদায় পাওয়ায় তারা অত্যন্ত খুশি ও সন্তুষ্ট। কমিউনিটির মানুষও খুশি।
নিউইয়র্ক থেকে সিআইপি মর্যাদা পাওয়া অল কাউন্টি হোম কেয়ারের কর্ণধার ও ইয়র্ক টেক্স অ্যাপারেল ইনক গার্মেন্টসের মালিক মুহম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, আমি সিআইপি হওয়াতে খুবই খুশি। আশা করছি, বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ বাড়াতে পারব। অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করছি। ব্যবসার মধ্য দিয়ে দেশে বিনিয়োগ করেছি। আমি দেশ থেকে তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করি। সেখানে আমার ফ্যাক্টরিও রয়েছে। এখানেও আমার ইনভেস্টমেন্ট রয়েছে ও একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিউইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারেও আমার অফিস রয়েছে। নিউইয়র্কের একাধিক স্থানে আমার অফিস রয়েছে। আমি চেষ্টা করেছি, দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অর্থ বিনিয়োগ করার। নিয়ম হচ্ছে একজনকে দেশে কমপক্ষে এক বছরের মধ্যে তিন লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন যোগ্যতা থাকতে হবে। সিআইপি হওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাক্সের ফাইলও দিতে হবে। দুই দেশের আয় ও বিনিয়োগের তথ্য বাংলাদেশ পর্যালোচনা করবে। এ ছাড়া সব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়।
সিআইপি হিসেবে নির্বাচিত ব্যক্তিদের মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিচয়পত্র (সিআইপি কার্ড) দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে তারা আগামী নির্ধারিত সময়ের জন্য জাতীয় ও সিটি করপোরেশনের অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় দাওয়াত পাবেন। ব্যবসা-সংক্রান্ত কাজে ভ্রমণের সময় বিমান, রেলপথ, সড়ক ও জলপথে সরকারি যানবাহনে সংরক্ষিত আসনে অগ্রাধিকার পাবেন, দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে বিশেষ সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া সরকারের শিল্পবিষয়ক নীতিনির্ধারণী কমিটিতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এসব সুবিধার পাশাপাশি তারা সিআইপি হিসেবে বিশেষ সম্মাননা অর্জন করেন। এ জন্য তাদের হাতে পুরস্কারও তুলে দেওয়া হবে। মুহম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, আগামী মার্চ মাসে আমাদের হাতে সনদ, কার্ড ও পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে বলে জানতে পেরেছি। তখন বাংলাদেশে যাব। তিনি বলেন, আমি ছাড়াও কয়েকজন সিআইপি হয়েছেন।
আমরা সিআইপি হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশে আরও বিনিয়োগ করার ব্যাপারে যেমন আগ্রহী হব, পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি পণ্য এখানে আনব। এতে করে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশই লাভবান হবে। দুই বছরের জন্য এই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আমি যখন আবেদন করেছিলাম, তখন আমার বয়স ছিল ৩৪। আর যখন উপাধি পেলাম, তখন আমার বয়স ৩৭। অনেক সময় লাগলেও আমি হ্যাপি যে সফল হয়েছি। এদিকে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ (অনাবাসী বাংলাদেশি) ২০২৪ নির্বাচন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, কনসাল জেনারেলের কাছে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে। সেটি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞপ্তি জারি করার জন্য বলা হয়েছে।