ড. রফিকুল ইসলাম :
ছোট্ট একটি শব্দ ‘বন্ধু’, কিন্তু এর ব্যাপ্তি সীমাহীন, এর গভীরতা অনেক। বন্ধু মানে আস্থা, নির্ভরতা। বন্ধু মানে ভালোবাসা, যেখানে থাকে না কোনো স্বার্থ। বন্ধুত্বের কথা লেখা হয়েছে কবিতায়, গল্পে, চিত্রকর্মে, কখনো স্মৃতি হয়ে জমা হয়েছে স্থিরচিত্রে আবার কখনো-বা গানে। তাই তো মানুষের মুখে মুখে ফিরে বন্ধুকে নিয়ে অসংখ্য গান। অনেকেই হয়তো আজ মনের অজান্তে গেয়ে উঠবেন : দেখা হবে বন্ধু কারণে আর অকারণে, দেখা হবে বন্ধু, চাপা কোনো অভিমানে, দেখা হবে বন্ধু সাময়িক বৈরিতায়, অস্থির অপারগতায়!
জীবনে চলার পথে বন্ধু খুব প্রয়োজন। বন্ধু ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। নশ্বর পৃথিবীর অনেক সম্পর্কের মাঝে বন্ধু অন্যতম। হয়তো সে জন্যই বন্ধু দিবসের প্রচলন হয়েছিল। বন্ধু দিবসের প্রচলন নিয়ে কয়েকটি ধারণা আছে, এর প্রথমটি হচ্ছে বন্ধু দিবসের প্রচলন শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের কার্ড বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হল-মার্কের প্রতিষ্ঠাতা জয়েস হলের মাধ্যমে। জয়েস হল ১৯১৯ সালে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস পালনের প্রস্তাব করেছিলেন। এই দিনে তারা একে অন্যকে কার্ড পাঠাতেন।
অন্য ধারণাটি হলো ১৯৩৫ সালে আমেরিকান সরকার এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। দিনটি ছিল আগস্টের প্রথম শনিবার। হত্যার প্রতিবাদে পরের দিন ওই ব্যক্তির এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন। সে সময় বিষয়টি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর পর থেকে জীবনের নানা ক্ষেত্রে বন্ধুত্বের অবদান আর তাদের প্রতি সম্মান জানানোর লক্ষ্যেই আমেরিকান কংগ্রেস ১৯৩৫ সালে আইন করে আগস্ট মাসের প্রথম রোববারকে আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস ঘোষণা করে। তখন থেকে বেশ কিছু দেশ বন্ধু দিবসের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করে নেয়। আর এভাবেই বন্ধু দিবস পালনের পরিসর বাড়তে থাকে। বর্তমানে সারা বিশ্বেই আগ্রহ নিয়ে বন্ধুত্ব দিবস পালিত হচ্ছে।
১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ বিশ্বময় বন্ধুত্বকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যায়। সে বছর জাতিসংঘ বিখ্যাত কার্টুন চরিত্র উইনি দ্য পুহকে বন্ধুত্বের বিশ্বদূত নির্বাচিত করে। তারপর জাতিসংঘ ২০১১ সালে সাধারণ অধিবেশনে ৩০ জুলাই দিনটিকে আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস ঘোষণা করে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস পালন করে আসছে।
বন্ধু দিবসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে হলুদ গোলাপ আর ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের মতো বিষয়গুলোও। এই ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের ধারণাটিও এসেছে আমেরিকা থেকেই। আমেরিকার আদিবাসীদের মধ্যে অনেক আগে থেকেই বন্ধুত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যান্ড দেওয়ার এই রীতি চালু ছিল। তারা তাদের বন্ধুদের জন্য ব্যান্ড তৈরি করে এবং যাকে ব্যান্ড দেওয়া হয়, সে কখনোই ব্যান্ডটি খোলে না! আবার বন্ধুত্বের প্রতীক যে হলুদ গোলাপ, সেই হলুদ রং হলো আনন্দের প্রতীক। তবে হলুদ গোলাপ মানে শুধু আনন্দই নয়, প্রতিশ্রুতিও। বন্ধুত্বে যে শুধু আনন্দই নয় বরং প্রতিশ্রুতি, সে কথাটিই মনে করিয়ে দেয় এই বন্ধু দিবস।
বন্ধুত্ব ব্যাপারটা সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই প্রয়োজন। বন্ধত্ব সম্পর্ককে সহজ করে। বলেকয়ে তো আর বন্ধুত্ব হয় না। মনের সঙ্গে মনের মিল হলেই শুধু সত্যিকারের বন্ধুত্ব হয়। অগাধ বিশ্বাস, ভালোলাগা-মন্দলাগার সবটুকুই বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বে নেই অহংকার, নেই হিংসা, আছে শুধু নির্ভরতা, ভালোবাসা। তাই তো গানে গানে বলা হয়েছে : তুমি আমার পাশে বন্ধু হে বসিয়া থাকো, একটু বসিয়া থাকো, আমি মেঘের দলে আছি, ঘাসের দলে আছি, তুমিও থাকো বন্ধু হে একটু বসিয়া থাকো...
বন্ধু দিবসের এই শুভক্ষণে পৃথিবীর সব বন্ধুত্ব অটুট থাকুক চিরকাল। ভালো থাকুক সব বন্ধুরা। শৈশবের দুরন্তপনার বন্ধু, স্কুলজীবনের উচ্ছলতার বন্ধু, কলেজের সবকিছু রঙিন চশমায় দেখা বন্ধু আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিণত বয়সের বন্ধু কিংবা বয়সের ভারে ন্যুব্জ স্মৃতিতে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুÑসবাই ভালো থাকুক। বন্ধুরা যত্নে থাকুক মনের চৌকাঠে। ও বন্ধু তোকে আজ মিস করছি ভীষণ...