৬ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় শুরুটা হয়েছিল সংবাদ সম্মেলনের আবহে। সাংবাদিকদের সামনে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন সর্বশেষ ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটির মেম্বার সেক্রেটারি শাহনেওয়াজ। বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্র সতীর্থদের নিয়ে সেখানে প্রবেশ করেন স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ। দু-এক কথায় বেধে যায় তুমুল হট্টগোল। কিছুক্ষণ পর শুরু হয় বিক্ষিপ্ত আলোচনা। এরপর গলতে শুরু করে বরফ। নেতৃবৃন্দ একপর্যায়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে চেয়ারম্যান ও মেম্বার সেক্রেটারি মিলে স্টিয়ারিং কমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন।
গত বছর কানাডার মন্ট্রিয়াল ফোবানায় গিয়াস আহমেদকে চেয়ারম্যান এবং শাহনেওয়াজকে মেম্বার সেক্রেটারি করে নতুন স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু একটি ভাইস চেয়ারম্যান পদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় নানা কারণে নয় মাসেও পূর্ণাঙ্গ স্টিয়ারিং কমিটি গঠিত হয়নি। এ নিয়ে দেখা দেয় নেতৃত্বের কোন্দল।
এদিকে গত ২০ মে শনিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গিয়াস আহমেদের নেতৃত্বে ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটি ঘোষণা করা হয়। এমনকী ১১ জুন রোববার নতুন কমিটির অভিষেকের দিনও ধার্য করা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনের পরই কার্যত এই ফোবানা ভেঙে যায়। প্রায় দুই সপ্তাহ পর মেম্বার সেক্রেটারি শাহনেওয়াজ ৬ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার জ্যাকসন হাইটসের ব্যবসায়িক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন খান, আলী ইমাম শিকদার, সাবেক মেম্বার সেক্রেটারি কাজী আজম, ফিরোজ আহমেদ, আকাশ রহমান, নিশান রহিম প্রমুখ।
সূচনা বক্তব্য দেন আলী ইমাম শিকদার। এসময় তিনি নিজেকে ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান দাবি করে বলেন, নয় মাসেও স্টিয়ারিং কমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। গিয়াস আহমেদ পাল্টা কমিটি করেছেন। তাই তার নেতৃত্বাধীন আগের কমিটিই এখনো বহাল আছে।
এরপর সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শাহনেওয়াজ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এই সংবাদ সম্মেলন আমাদের পক্ষ থেকে কিছুটা কৈফিয়তের, কিছুটা নিজেদেরকে দায়মুক্ত করার জন্য। তিনি বলেন, এই ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটি অনেক আগেই তার কাজের সমাপ্তির পথ রচনা করেছিল। মন্ট্রিয়ালে ফোবানার বিগত দায়িত্ব দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। কিন্ত নয়মাস অতিক্রম হলেও যার বা যাদের ওপর দায়িত্ব ছিল তারা নতুন কোন কমিটি ঘোষণা করতে পারেননি। আর তা বর্তমান কমিটির কাছ থেকে অনুমোদনও নিতে পারেননি। পরবর্তী সম্মেলনের আর মাত্র বাকি তিন মাস। আমরা এখানে আমাদের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের অমোঘ ধারাবাহিকতায় পরবর্তী ফোবানা সম্মেলন না হওয়া পযর্ন্ত বর্তমান স্টিয়ারিং কমিটি কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আর দায়িত্ব গ্রহণপূর্বক কমিটির কাঠামোকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কিছুটা পরিবর্তন করে ঢেলে সাজিয়েছি। আমার মনে করি ফোবানার কমিউনিটির সকলের যেমন সম্পৃক্ততা রয়েছে, তেমনি বিষয়টি সকলের জানার অধিকারও রয়েছে।
শাহনেওয়াজ বলেন, গত ২৩ মে আমরা পূর্ববর্তী ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির এক ভার্র্চুয়াল সভার আয়োজন করি। ফোবানা কমিটির সাংগঠনিক চেয়ারম্যান আলী ইমাম শিকদার এই সভার আয়োজন করেন। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী সম্মেলন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটি দায়িত্ব পালন করে যাবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী বর্তমান সভাপতি আলী ইমাম শিকদার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন এবং বর্তমান কমিটির মেম্বার সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করবেন শাহ নেওয়াজ।
৩১ সদস্য বিশিষ্ট ফোবানা কমিটিকে বর্তমানে আমরা সর্বসম্মতিক্রমে ৩৫ সদস্য উন্নীত করেছি। আগামী সম্মেলন পর্যন্ত এই ৩৩ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি কাজ করবে। যেসব সদস্য ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটিতে নতুন করে সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন জিল্লুর রহমান জিল্লু, মিজানুর রহমান ভূইয়া মিল্টন, হেলাল চৌধুরী, ইলিয়াস হোসেন, ইয়াহিয়া আহমদ, হাসান চৌধুরী, জিআই রাসেল, নিউজার্সি ও পেনসিলভেনিয়ার একজন করে প্রতিনিধি।
সংবাদ সম্মেলনে শাহনেওয়াজ বলেন, উত্তর আমেরিকায় পাল্টাপাল্টি ফোবানা কনভেনশন, ফোবানার বিভক্তি ও বিভাজন নিয়ে কমিউনিটির কাছে সবসময় আমরা বিব্রত বোধ করি। কমিউনিটি এই বিভক্তি ও বিভাজন নিয়ে যথেষ্ট বিরক্ত ও অন্য সম্প্রদায়ের কাছেও বিব্রত। এই ফোবানার দীর্ঘ পথে ফোবানা বিভক্ত হয়েছে, আবার ঐক্যবদ্ধ ফোবানা কনভেনশনও হয়েছে। ফোবানা ও আমাদের দূর্ভাগ্য যে শেষ পর্যন্ত ফোবানা এবং আমাদেরকে বিভক্তি এবং বিভাজনের ফোবানা নিয়েই চলতে হচ্ছে। আমরা আগেও মনে করেছি, এখনো মনে করি, আলাদা ফোবানা করে যেতে পারবো, কিন্ত কোনদিনই বিভক্ত থেকে ফোবানার যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছাতে পারবো না।
এদিকে শাহনেওয়াজের এই বক্তব্যের পরপরই সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে প্রবেশ করেন গিয়াস আহমেদ। সেখানে পুরনো স্টিয়ারিং কমিটি নিয়ে বহাল প্রসঙ্গে আসতেই প্রতিবাদ জানান গিয়াস আহমেদ। এ নিয়ে গিয়াস আহমেদের সতীর্থরাও তর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ দুপক্ষের হট্টগোল চলার পর গিয়াস আহমেদ ও শাহনেওয়াজ ফোবানাকে ঐক্যবদ্ধ করতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারেরও প্রতিশ্রুতি দেন। অর্থাৎ অনৈক্য দূর করতে নিজেরা পদত্যাগ করার মত উদারতা দেখান। এরপরই সেখানে শীতল অবস্থা বিরাজ করতে শুরু করে। একপর্যায়ে শাহনেওয়াজ বলেন, আমরা দুজন মিলে শিগগির পূণাঙ্গ কমিটি গঠন করবো। এরপরই সেখানে ঐক্যের সুবাতাস বইতে শুরু করে। শেষ হয় সংবাদ সম্মেলন।