টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আপন ভাগিনার হাতে স্ত্রী-মেয়েসহ খুন হন বিকাশ চন্দ্র সরকার। আলোচিত এই ত্রিপল মার্ডারের মূল আসামি রাজীব কুমার ভৌমিককে গ্রেপ্তারের পর বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে নিজ বাড়ির তিনতলা ফ্ল্যাট থেকে বিকাশ সরকার, তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার ও মেয়ে তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা সরকার তুষির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকায় বেশ তোলপাড় হয়। নিহত বিকাশ ৫ বোন এবং ২ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন।
মঙ্গলবার রাতে নিহত বিকাশের স্ত্রীর ভাই সুকমল সাহা বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর রাতেই নিহত বিকাশের ফোনে অডিও রেকর্ডের সূত্র ধরে ভাগিনা রাজীবকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার রাজীব উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়ার বাসিন্দা। তিনি নিহত বিকাশের বড় বোন প্রমীলা সরকারের ছেলে। গ্রেপ্তারের পর আসামি রাজীব নিজের সম্পৃক্ততাসহ ঘটনার বিষয়ে রোমহর্ষক বর্ণনা দেন। পরে পুলিশ তাকে নিয়ে ছয় ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে হত্যায় ব্যবহৃত হাঁসুয়া ও লোহার রড উদ্ধার করে।
বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল জানান, ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশ চন্দ্র সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত হন ভাগিনা রাজীব ভৌমিক। নিহত বিকাশ সরকার ভাগিনা রাজীবকে ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ২০ লাখ টাকা দেন। ব্যবসা চলমান থাকা অবস্থায় রাজীব মামা বিকাশকে বিভিন্ন ধাপে ব্যবসার লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেন এবং চলতি বছরে এসে ভাগিনা রাজীবের কাছে কাছে মামা বিকাশ অতিরিক্ত আরও ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার জানান, গত ২২ জানুয়ারি সকালে ভাগিনা রাজীবের বাড়িতে গিয়ে ৭-৮ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দেন এবং তার মাকে বকাবকি করেন বিকাশ। রাজীব টাকা ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং মামার বকাবকিতে ক্ষিপ্ত হয়ে মামা বিকাশসহ পুরো পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। একপর্যায়ে ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মামা বিকাশকে ফোন করে পাওনা টাকা দিতে তাড়াশ বারোয়ারি বটতলায় বিকাশের বাসায় আসেন। মামাবাড়িতে আসার সময় তিনি বাজারের ব্যাগে করে একটি হাঁসুয়া এবং ২৫০ টাকা দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কেজি ওজনের একটি লোহার রড কিনে নিয়ে আসেন।
আরিফুর রহমান মন্ডল আরও জানান, মামাবাড়িতে এসে তিনি দেখেন মামা বাইরে আছেন। রাজীবের মামি কফি আনতে বাসার নিচে দোকানে গেলে রাজীব ব্যাগে করে আনা লোহার রড দিয়ে তার মামাতো বোন দশম শ্রেণির ছাত্রী পারমিতার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন এবং হাঁসুয়া দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর রাজীবের মামি স্বর্ণা কফি কিনে বাসায় এলে একইভাবে তাকেও হত্যা করেন রাজীব। এর কিছুক্ষণ পর বিকাশ সরকার বাড়িতে এলে তাকেও একইভাবে হত্যা করে ঘরে তালা লাগিয়ে মোটরসাইকেলে করে নিজ বাড়িতে চলে যান রাজীব। যাওয়ার পথে হত্যায় ব্যবহৃত লোহার রডটি একটি পুকুরে ফেলে যান আর হাঁসুয়াটি বাড়িতে নিয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সামিউল আলম, তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলহাস উদ্দিন।
ঠিকানা/এনআই