
কী সরল বিবরণী! কতো মজার গল্প! বিকালে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা শপিংমল এলাকায় ঘোরাঘুরির সময় উড়োজাহাজ দেখে তাতে চড়ার শখ জাগে গোপালগঞ্জ মুকসুদপুরের ১২ বছরের শিশু জোনায়েদের। শখ মতো বসুন্ধরা থেকে বাসে চড়ে চলে যায় বিমানবন্দর এলাকায়। সেখানে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর সে বিমানবন্দরে ঢুকে পড়ে! কেউ বাধা দেয়নি?
না, একদম না। কেউ বাধা দেয়নি। প্রথম ফটক শেষে দ্বিতীয় ফটকে গেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি জানতে চান, তার মা-বাবা কোথায়? জবাবে সে সামনের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে। তখন তিনি তাকে যেতে দেন। আর কোথাও তাকে বাধা দেওয়া হয়নি। মধ্যরাতের কিছু পর সে বিমানেও উঠে যায়। বসে পড়ে মাঝের দিকে একটি সিটে। সিটে বসার পর সামনে দেখে টিভি মনিটর, পাশে গোল একটা সুইচ। সেখানে চাপ দিয়ে স্পাইডারম্যান কার্টুন দেখতে থাকে। তখনও কোনো বাধা আসেনি?
বাধা এসেছে এর কিছুক্ষণ পর। এক ব্যক্তি এসে বলে, ‘এই সিট আমার। তুমি তোমার মা-বাবার কাছে গিয়ে বসো।’ এরপর কেবিন ক্রুরা তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিটে বসতে বলেন। সে একা এসেছে জানালে তারা পাসপোর্ট, টিকিট দেখতে চান। ভয়ে সব খুলে বললে তারা তাজ্জব বনে যান। শিশুটিকে নামিয়ে পুলিশে দেন। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়। ঘটনার একদিন পর শিশুটিকে বিমানবন্দর থানা থেকে গোপালগঞ্জের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকেও পালায়। পরে বেলা একটার দিকে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে খুঁজে এনে শিশুটির পায়ে শিকল পরিয়ে ঘরের খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়। পরে তাকে বুঝিয়ে শিকল খুলে দেওয়া হয়। শিশুটির বাবা পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা। তিনি জানান, ছেলের দেড় বছর বয়সের সময় তার স্ত্রী তাদের ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করেন। আরেকটু বয়স হলে জোনায়েদকে স্থানীয় একটি কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। সেখান থেকেও সে কয়েকবার পালিয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর সকালে ছেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তারা খোঁজ নেননি?
না, এমন পালানোতে অভ্যস্ত ছেলেকে খোঁজার দরকার মনে করেননি। ভেবেছেন, বরাবরের মতো কয়েকদিন কোথাও ঘুরেফিরে চলে আসবে। কিন্তু সে যে ঢাকা পর্যন্ত চলে আসবে, বিমানে উঠে পড়বে- তা তাদের ভাবনায়ও আসেনি! কী দাঁড়ালো সারসংক্ষেপটা? ঘরে-বাইরে একই কাণ্ডকারখানা। নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করে শিশুটির বিমানে উঠে পড়ার ঘটনায় ১০ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ- বেবিচক। ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়েছে। এতে সব ল্যাঠা মিটে গেল?
মোটেই না। কিছু প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। শাহজালাল বিমানবন্দর একটি অন্যরকম আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর। এখানে চেকিং শুরু হয় রাস্তা থেকে। রাস্তায় একবার গাড়ি থামায়, তারপর ব্রিজে উঠার সময় আরেকবার। তারপর ড্রপ পয়েন্টের আগে একবার গাড়ি থামিয়েও কখনো কখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভেতরে ঢোকার আগে প্রবেশমুখে বিশাল লম্বা লাইনে পুরো স্ক্যান করা হয়। ভেতরে ঢোকার পর শত শত লোক গলায় ব্যাজ লাগিয়ে নজরদারি করে। ভেতরে যাওয়ার পর বিমানে ওঠার আগে ইমিগ্রেশন অফিসারকেও ফেস করতে হয়। পরে একটা ছোট গেট দিয়ে বের হওয়ার পথেও আবার ইমিগ্রেশনের সিল দেখার পর্ব রয়েছে। সবশেষে বোর্ডিং গেটের সামনের ফাইনাল চেকিং। এভাবে ৭-৮ দফা চেকিংয়ের কোথাও মফস্বলের এই শিশু জোনায়েদ কারো জিজ্ঞাসায় পড়লো না?
ভাবতেও অবিশ্বাস্য। শেষ সময়ে সিটের চাইতে লোক বেশি না হলে বা অন্তত ওই সিটটা খালি থাকলে শিশু জোনায়েদ বিদেশও পৌঁছে যেতো। তা কি সব সম্ভবের দেশ বলেই? বলার কি অপেক্ষা রাখে গোপালগঞ্জের শিশুটি কেবল মেধাবী নয়; বুদ্ধিমান-চৌকসও। তাকে কি এখন এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো যায় না, যেখানে সে তার মেধার বিকাশসহ প্রতিভাকে শাণিত করবে?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।
না, একদম না। কেউ বাধা দেয়নি। প্রথম ফটক শেষে দ্বিতীয় ফটকে গেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি জানতে চান, তার মা-বাবা কোথায়? জবাবে সে সামনের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে। তখন তিনি তাকে যেতে দেন। আর কোথাও তাকে বাধা দেওয়া হয়নি। মধ্যরাতের কিছু পর সে বিমানেও উঠে যায়। বসে পড়ে মাঝের দিকে একটি সিটে। সিটে বসার পর সামনে দেখে টিভি মনিটর, পাশে গোল একটা সুইচ। সেখানে চাপ দিয়ে স্পাইডারম্যান কার্টুন দেখতে থাকে। তখনও কোনো বাধা আসেনি?
বাধা এসেছে এর কিছুক্ষণ পর। এক ব্যক্তি এসে বলে, ‘এই সিট আমার। তুমি তোমার মা-বাবার কাছে গিয়ে বসো।’ এরপর কেবিন ক্রুরা তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিটে বসতে বলেন। সে একা এসেছে জানালে তারা পাসপোর্ট, টিকিট দেখতে চান। ভয়ে সব খুলে বললে তারা তাজ্জব বনে যান। শিশুটিকে নামিয়ে পুলিশে দেন। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়। ঘটনার একদিন পর শিশুটিকে বিমানবন্দর থানা থেকে গোপালগঞ্জের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকেও পালায়। পরে বেলা একটার দিকে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে খুঁজে এনে শিশুটির পায়ে শিকল পরিয়ে ঘরের খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়। পরে তাকে বুঝিয়ে শিকল খুলে দেওয়া হয়। শিশুটির বাবা পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা। তিনি জানান, ছেলের দেড় বছর বয়সের সময় তার স্ত্রী তাদের ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করেন। আরেকটু বয়স হলে জোনায়েদকে স্থানীয় একটি কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। সেখান থেকেও সে কয়েকবার পালিয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর সকালে ছেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তারা খোঁজ নেননি?
না, এমন পালানোতে অভ্যস্ত ছেলেকে খোঁজার দরকার মনে করেননি। ভেবেছেন, বরাবরের মতো কয়েকদিন কোথাও ঘুরেফিরে চলে আসবে। কিন্তু সে যে ঢাকা পর্যন্ত চলে আসবে, বিমানে উঠে পড়বে- তা তাদের ভাবনায়ও আসেনি! কী দাঁড়ালো সারসংক্ষেপটা? ঘরে-বাইরে একই কাণ্ডকারখানা। নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করে শিশুটির বিমানে উঠে পড়ার ঘটনায় ১০ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ- বেবিচক। ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়েছে। এতে সব ল্যাঠা মিটে গেল?
মোটেই না। কিছু প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। শাহজালাল বিমানবন্দর একটি অন্যরকম আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর। এখানে চেকিং শুরু হয় রাস্তা থেকে। রাস্তায় একবার গাড়ি থামায়, তারপর ব্রিজে উঠার সময় আরেকবার। তারপর ড্রপ পয়েন্টের আগে একবার গাড়ি থামিয়েও কখনো কখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভেতরে ঢোকার আগে প্রবেশমুখে বিশাল লম্বা লাইনে পুরো স্ক্যান করা হয়। ভেতরে ঢোকার পর শত শত লোক গলায় ব্যাজ লাগিয়ে নজরদারি করে। ভেতরে যাওয়ার পর বিমানে ওঠার আগে ইমিগ্রেশন অফিসারকেও ফেস করতে হয়। পরে একটা ছোট গেট দিয়ে বের হওয়ার পথেও আবার ইমিগ্রেশনের সিল দেখার পর্ব রয়েছে। সবশেষে বোর্ডিং গেটের সামনের ফাইনাল চেকিং। এভাবে ৭-৮ দফা চেকিংয়ের কোথাও মফস্বলের এই শিশু জোনায়েদ কারো জিজ্ঞাসায় পড়লো না?
ভাবতেও অবিশ্বাস্য। শেষ সময়ে সিটের চাইতে লোক বেশি না হলে বা অন্তত ওই সিটটা খালি থাকলে শিশু জোনায়েদ বিদেশও পৌঁছে যেতো। তা কি সব সম্ভবের দেশ বলেই? বলার কি অপেক্ষা রাখে গোপালগঞ্জের শিশুটি কেবল মেধাবী নয়; বুদ্ধিমান-চৌকসও। তাকে কি এখন এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো যায় না, যেখানে সে তার মেধার বিকাশসহ প্রতিভাকে শাণিত করবে?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।