
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একজন অত্যন্ত বিনয়ী, সজ্জন, উঁচু মাপের মানুষ ও অনুকরণীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলে দেশের মানুষের কাছে পরিচিত, সমাদৃত। এ ব্যাপারে তাদের দীর্ঘ পারিবারিক ঐতিহ্যও রয়েছে। রাজনীতিবিদদের প্রচলিত আচার-আচরণেও লক্ষণীয় ব্যতিক্রম দেখা যায় ফখরুলের মধ্যে। সেই মির্জা ফখরুলকে নিয়ে অত্যন্ত দুঃখজনক, বেদনাদায়ক মন্তব্য করেছেন সরকারদলীয় কোনো কোনো নেতা। মির্জা ফখরুল দীর্ঘদিন যাবৎই কয়েকটি জটিল রোগে আক্রান্ত। সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক যেতে হয় তাকে চিকিৎসার জন্য। সরকারের কাছে তিনি আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। দেশের মানুষকে সাহায্য সহায়তা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ফান্ড রয়েছে। এ খাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বরাদ্দ থাকে শত শত কোটি টাকা। এ জন্য তাকে কারও কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় না। সরকারি উচ্চতর মহল থেকে নির্দেশনা পেয়েই বিএনপির মহাসচিবকে সরকারপ্রধানের কাছে আবেদন করতে বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলেই এ খাতের অর্থ ব্যয় করতে পারেন না। কাউকে বরাদ্দ করতে হলে নির্ধারিত নিয়ম মানতে হয়। সে অনুযায়ীই মির্জা ফখরুল বিষয়টি দলের চেয়ারপারসনের গোচরীভূত করে তার অনুমতি নেন। এভাবে অর্থ সাহায্য করা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারাধীন হলেও এটা সাহায্য গ্রহীতার অধিকার। এতে রাজনৈতিক ব্যক্তিগত ক্ষতির কিছু নেই। কারণ বিষয়টি সম্পূর্ণ মানবিক। কারণ এই অর্থ রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিবিশেষের নয়। জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সাহায্য করা সরকার, সরকারপ্রধানের দায়িত্ব এবং সে জন্যই এই ফান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। জানা যায়, দুই দফায় মির্জা ফখরুলকে প্রধানমন্ত্রীর এই ফান্ড থেকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। মির্জা ফখরুলের চিকিৎসা বাবদ এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫৭ লাখ টাকা। মির্জা ফখরুল এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন। আগামীতেও তার যথেষ্ট অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু অত্যন্ত জরুরি হলেও তিনি সরকারের কাছে আর সাহায্যের আবেদন করবেন না বলেই জানা যায়। মির্জা ফখরুলকে আর্থিক সহায়তা করার বিষয়টি সরকারদলীয় কোনো কোনো নেতা প্রচার করছেন। মানবিক কারণে সহায়তার বিষয়টি অত্যন্ত স্থূল রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের ঘটনা বাংলাদেশে সম্ভবত এই প্রথম। এতে মির্জা ফখরুলসহ বেগম খালেদা জিয়া এবং শীর্ষস্থানীয় আরও কয়েকজন নেতা দারুণভাবে দুঃখিত, মানসিকভাবে আহত হয়েছেন। বিএনপির একজন প্রবীণ নেতা জানান, বামপন্থী নেতা রাশেদ খান মেনন আততায়ীর হাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। পল্টনে অফিসের সামনে গুলিবিদ্ধ মেনন জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে ছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাকে বিমানযোগে বিদেশে নিয়ে সুচিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করেছিলেন। চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৯০ লাখ টাকা, খালেদা জিয়া এ কথা কোনো দিন প্রকাশ করেননি। রাজনৈতিক ন্যূনতম এই সৌজন্য রক্ষা করেছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আওয়ামী লীগ এর ব্যতিক্রম করল।