নির্বাচনমুখী জাতিসংঘ সফর

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ , চলতি সংখ্যা
বাংলাদেশের রাজনীতি এখন নির্বাচনমুখী। জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরও অনেকটা নির্বাচনমুখী বলে ধারণা করা হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দেশে বিরোধী দলের আন্দোলন চলছে, একইসঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। কিন্তু সবকিছুকে পেছনে ফেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে ছুটে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। এই সফরে জাতিসংঘে তিনি যে ভাষণ দেবেন সেখানে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রা তুলে ধরবেন। সরকারের ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনাও কৌশলে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন শেখ হাসিনা। 
জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে এবারের সফর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ নানা কারণে। এই সফরে তিনি আবারো সুযোগ পাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাতের। এমনকী মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে আবারো সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে। ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বাইডেনের নৈশভোজে অংশ নেন শেখ হাসিনা। এছাড়া আগামী কয়েকদিন আরো বেশ কয়েকজন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হবে প্রধানমন্ত্রীর। এসব সাক্ষাতে সুযোগ পেলেই সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনী বছরে এ ধরনের সুযোগ এটা আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য অভাবনীয় সুযোগ নিঃসন্দেহে। 
এদিকে ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানাভাবে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রা তুলে ধরবেন। এছাড়াও তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যখাতে সাফল্য ইত্যাদি বিষয়ের উপর আলোকপাত করবেন। পাশাপাশি, বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক সংকট, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরকে রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করছেন, এই সফর অবশ্যই নির্বাচনমুখী। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসঘের ৫টি উচ্চ পর্যায়ের সভায়, বিশেষ করে ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর এসডিজি সামিটে যোগ দেন তিনি। সভায় জাতিসংঘ উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহ অর্জনের অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতাসমূহ এবং এই প্রতিবন্ধকতাসমূহের উত্তরণ ঘটিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে কীভাবে লক্ষ্যসমূহ অর্জন করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে সামিটে। এই সামিটের অধীনে বিভিন্ন থিমের ওপর ৪টা লিডার্স ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ১৮ সেপ্টেম্বর লিডার্স ডায়ালগে বক্তব্য দেন। 
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জাতিসংঘের চলতি ৭৮তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন সুদৃঢ় করবে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরো প্রসারিত করবে। 
সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত মুহিত আরো জানান, এবারের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের মূল বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য খুবই জরুরি। বিশেষ করে, যুদ্ধ-বিগ্রহ পরিহার করে চলমান খাদ্য ও জ্বালানি সংকট নিরসন, আর্থিক অনিশ্চয়তা মোকাবেলা করার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা, বিশ্বশান্তি, বহুপাক্ষিকতাবাদ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর বৈশ্বিক উদ্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়ন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহ অর্জন প্রভৃতি বিষয়ে সাধারণ অধিবেশনে গুরুত্বের সাথে আলোচনা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা এবং এর স্থায়ী ও টেকসই সমাধানের বিষয়টিও ব্যাপকভাবে আলোচিত হবে, যা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে সহায়ক হবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা ষষ্ঠ বছরে পদার্পণ করেছে। কিন্তু এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিকভাবে গৃহীত পদক্ষেপ আশানুরূপ কোন সমাধান দিতে পারেনি। বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন এক নম্বর ইস্যু। এই বক্তব্যই আবারও বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে শেখ হাসিনার এবারের সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি রাজনৈতিক সরকারের জন্য এই সফর বড় সুযোগ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।
শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফর বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে : আগামী দ্বাদশ সংসদ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের যুক্তরাষ্ট্র সফর বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। আগের যে কোনো বারের সফরের চেয়ে এ সফর অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতারা। দিল্লিতে হাসিনা-বাইডেন সেলফির ১০ দিন পর আবারও দুই নেতার সাক্ষাত দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন দলটির নেতারা।
রেকর্ড টানা ১৫ বারের মতো জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন নিউইয়র্কে। নানা সভা সেমিনারে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। নির্বাচনের ঠিক আগে এবারের এ সফর যে বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার, আধুনিক বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প বিশ্বকে এ আসরের মাধ্যমেই হয়তো তুলে ধরবেন তিনি। তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগেও ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে এ সফর। 
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কিছুটা টানাপোড়েনের মাঝে ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে হাসিনা-বাইডেন সেলফি যে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল তার কদিন বাদেই আবারও দুই নেতার সাক্ষাতে সেই সম্পর্ক আরও প্রাণবন্ত হয়েছে বলেই মনে করেন দলের নেতা-কর্মীরা। আগামীতে যে নির্বাচন হচ্ছে এটি নিয়ে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে তার কথা হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে তাদের জানানো হবে। এটা হবে আমাদের জন্য বিশেষ প্রাপ্য।


 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078