
মহররম ও আশুরা : মহররম হচ্ছে চান্দ্রবর্ষের প্রথম মাস। আর আশুরা হচ্ছে সেই মাসের দশম দিন। আশুরা অর্থই হচ্ছে দশম। এই মাস এবং এই দিনের ফজিলত হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বারা প্রমাণিত। কোরআনে বর্ণিত ‘আরবাআতুন হুরুম’ তথা চারটি সম্মানিত মাসের অন্যতম হচ্ছে মহররম (তাওবা ৯:৩৬)। তা ছাড়া এ সময়ে বহু ঐতিহাসিক ঘটনাও সংঘটিত হয়েছে। আল্লাহ তাঁর কুদরত প্রকাশের বিশেষ মৌসুম হিসেবে এ সময়কে বেছে নিয়েছেন।
আজ আলোচনা করব আশুরা সম্পর্কে। আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চার সম্মানিত মাসের প্রথম মাস মহররম, যাকে আরবের অন্ধকার যুগেও বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখা হতো। আবার হিজরি সনের প্রথম মাসও মহররম। শরিয়তের দৃষ্টিতে যেমন এ মাসটি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি এই মাসে সংঘটিত ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণও অনেক দীর্ঘ। আমরা দেখতে পাই, ইতিহাসের এক জ্বলন্ত সাক্ষী এই মহররম মাস। ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্রপাত হয় এ মাসে। শুধু উম্মতে মুহাম্মদিই নয়, বরং পূর্ববর্তী অনেক উম্মত ও নবীদের অবিস্মরণীয় ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল এই মাসে। আশুরা কী এবং কেন? পবিত্র কোরআন-হাদিস এ বিষয়ে কী বলছে? এবার জেনে নিন এ বিষয়ে।
মহররমের ফজিলত : নামকরণ থেকেই প্রতীয়মান হয় এ মাসের ফজিলত। মহররম অর্থ মর্যাদাপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ। যেহেতু অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য ও রহস্যময় তাৎপর্য নিহিত রয়েছে এ মাসকে ঘিরে, সঙ্গে সঙ্গে এ মাসে যুদ্ধবিগ্রহ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ছিল, এসব কারণেই এ মাসটি মর্যাদাপূর্ণ। তাই এ মাসের নামকরণ করা হয়েছে মহররম বা মর্যাদাপূর্ণ মাস। মহররম সম্পর্কে (যা আশহুরে হুরুমের অন্তর্ভুক্ত তথা নিষিদ্ধ মাস) পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা ১২। যেদিন থেকে তিনি সব আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত মাস। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোর সম্মান বিনষ্ট করে নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।’ (সুরা তাওবা : ৩৬)
অর্থাৎ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে আল্লাহ তায়ালা ১২টি মাস নির্ধারণ করে দেন। এর মধ্যে চারটি মাস বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। ওই চারটি মাস কী কী? এর বিস্তারিত বর্ণনা হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, হাদিসে উল্লিখিত হয়েছে, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, এক বছরে ১২ মাস। এর মধ্যে চার মাস বিশেষ তাৎপর্যের অধিকারী। এর মধ্যে তিন মাস ধারাবাহিকভাবে (অর্থাৎ জিলকদ, জিলহজ ও মহররম) এবং চতুর্থ মাস মুজর গোত্রের রজব মাস। (বুখারি-৪৬৬২, মুসলিম-১৬৭৯)।
আশুরা : মহররম মাস সম্মানিত হওয়ার মধ্যে বিশেষ একটি কারণ হচ্ছে আশুরা (মহররমের ১০ তারিখ)। এ বসুন্ধরার ঊষালগ্ন থেকে আশুরার দিনে সংঘটিত হয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ও হৃদয়বিদারক কাহিনি। এখানে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো। আশুরার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ঘটনা হচ্ছে হজরত মুসা (আ.) এর ফেরাউনের অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি লাভ। এই দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা চিরকালের জন্য লোহিত সাগরে ডুবিয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন ভ্রান্ত খোদার দাবিদার ফেরাউন ও তার বিশাল বাহিনীকে।
অনেকে মনে করেন, ফেরাউন নীলনদে ডুবেছিল। ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুযায়ী এই ধারণা ভুল। বরং তাকে লোহিত সাগরে ডুবিয়ে বিশ্ববাসীকে শিক্ষা দেওয়া হয়। এ ঘটনা ইমাম বুখারি (রহ.) তাঁর কিতাবে এভাবে বর্ণনা করেন, ‘হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) যখন হিজরত করে মদিনায় পৌঁছান, তখন তিনি দেখলেন যে মদিনার ইহুদি সম্প্রদায় আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন, আশুরার দিনে তোমরা রোজা রেখেছ কেন? তারা উত্তর দিল, এই দিনটি অনেক বড়। এই পবিত্র দিনে মহান আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন আর ফেরাউন ও তার বাহিনী কিবতি সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হজরত মুসা (আ.) রোজা রাখতেন, তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি। তাদের উত্তর শুনে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, হজরত মুসা (আ.) এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে অধিক হকদার। অতঃপর তিনি নিজে আশুরার রোজা রাখেন এবং উম্মতকে তা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন।’ (বুখারি-৩৩৯৭, মুসলিম-১১৩৯)
উপরিউক্ত হাদিসের আলোকে কয়েকটি বিষয় প্রতিভাত হয় : হজরত মুসা (আ.) অভিশপ্ত ফেরাউনের কবল থেকে আশুরার দিন রক্ষা পেয়েছিলেন। তা হাদিসের প্রায় সব গ্রন্থেই (বুখারি, মুসলিমসহ) পাওয়া যায়।
একটি প্রসিদ্ধ ভ্রান্তির অপনোদন : উল্লিখিত হাদিস থেকে আমরা এ কথাও বুঝতে পারলাম, আশুরার ঐতিহ্য আবহমানকাল থেকে চলে আসছে। অনেকেই না বুঝে অথবা ভ্রান্ত প্ররোচনায় পড়ে আশুরার ঐতিহ্য বলতে রাসুল (সা.) এর প্রিয়তম দৌহিত্র, জান্নাতের যুবকদের দলপতি হজরত হোসাইন (রা.) এর শাহাদাত ও নবী পরিবারের কয়েকজন সম্মানিত সদস্যের রক্তে রঞ্জিত কারবালার ইতিহাসকেই বুঝে থাকে। তাদের অবস্থা ও কার্যাদি অবলোকন করে মনে হয়, কারবালার ইতিহাসকে ঘিরেই আশুরার সব ঐতিহ্য, এতেই রয়েছে আশুরার সব রহস্য।
উপরোল্লিখিত হাদিসের আলোকে প্রতীয়মান হয়, আসলে বাস্তবতা কিন্তু এর সম্পূর্ণ বিপরীত। বরং আশুরার ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। হজরত হোসাইন (রা.) এর মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনার অনেক আগ থেকেই আশুরা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ও রহস্যঘেরা দিন। কারণ কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৬১ হিজরির ১০ মহররম। আর আশুরার রোজার প্রচলন চলে আসছে ইসলাম আবির্ভাবেরও বহুকাল আগ থেকে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে আবহমানকাল থেকে আশুরার দিনে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা যেমন অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি হিজরি ৬১ সনে আশুরার দিন কারবালার ময়দানের দুঃখজনক ঘটনাও মুসলিম জাতির জন্য অতিশয় হৃদয়বিদারক ও বেদনাদায়ক। প্রতিবছর আশুরা আমাদের এই দুঃখজনক ঘটনাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে এও বাস্তব যে এ ঘটনাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে না পেরে আজ অনেকেই ভ্রষ্টতা ও কুসংস্কারের অন্ধকারে নিমজ্জিত। যারা কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাকে ব্যথাভরা অন্তরে স্মরণ করে থাকেন, তারা কোনো দিনও চিন্তা করেছেন যে কী কারণে হজরত হোসাইন (রা.) কারবালার ময়দানে অকাতরে নিজের মূল্যবান জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তাই তো অনেকেই মনে করেন, জারি মর্সিয়া পালনের মধ্যেই কারবালার তাৎপর্য! হজরত হোসাইন (রা.) এর উদ্দেশ্য ও আদর্শ বাস্তব জীবনে অনুসরণ করাই হবে এ ঘটনার সঠিক মর্ম অনুধাবনের বহিঃপ্রকাশ। হজরত হোসাইন (রা.) ও রাসুলে করিম (সা.) এর প্রতি মহব্বত ও আন্তরিকতার একমাত্র পরিচায়ক।
আশুরার রোজা : মহররম মাসে রোজা রাখা সম্পর্কে অনেক বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন ওপরে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু বিশেষভাবে আশুরা, অর্থাৎ মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। একটি হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা উম্মতে মুহাম্মদির ওপর ফরজ ছিল। পরবর্তী সময়ে অবশ্যই ওই বিধান রহিত হয়ে যায় এবং তা নফলে পরিণত হয়। হাদিস শরিফে হজরত জাবের (রা.) সূত্রে বর্ণিত আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। এ বিষয়ে নিয়মিত তিনি আমাদের খবরাখবর নিতেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো, তখন আশুরার রোজার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও দিতেন না এবং নিষেধও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খবরাখবরও নিতেন না।’ (মুসলিম শরিফ-১১২৮)
বিশ্বের বিভিন্ন জাতির ইতিহাস কীভাবে এই দিনের সঙ্গে জড়িত, তার প্রতি দৃষ্টি দিলে সহজেই আমরা আশুরার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি। মানবজাতির আদি পিতা হজরত আদমকে (আ.) প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি, জান্নাতে অবস্থান, পৃথিবীতে প্রেরণ ও তওবা কবুলÑসবই আশুরার তারিখে সংঘটিত হয়।
হজরত নুহ (আ.) সাড়ে ৯০০ বছর তাওহিদের দাওয়াত দেওয়ার পরও যখন পথভ্রষ্ট জাতি আল্লাহর বিধান মানতে অস্বীকৃতি জানায়; তখন তাদের প্রতি নেমে আসে আল্লাহর গজব মহাপ্লাবন। এই মহাপ্লাবনের ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা পায় তারা, যারা আল্লাহ ও নবীর প্রতি বিশ্বাসী হয়ে হজরত নুহের (আ.) নৌকায় আরোহণ করে। ওই নৌকা ৪০ দিন পর জুদি পাহাড়ের পাদদেশে মাটি স্পর্শ করে ঐতিহাসিক আশুরার দিন।
এ দিনেই হজরত ইবরাহিমের (আ.) জন্ম, ‘খলিলুল্লাহ’ উপাধিতে ভূষিত ও নমরুদের অগ্নি থেকে রক্ষা পান। হজরত ইদরিসকে (আ.) বিশেষ মর্যাদায় চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয় আশুরার দিনে। সুদীর্ঘ ৪০ বছর পর হজরত ইউসুফের (আ.) সঙ্গে তাঁর পিতা হজরত ইয়াকুবের (আ.) সাক্ষাৎ যেদিন হয়, সে দিনটি ছিল আশুরার দিন।
নবী আইয়ুব (আ.) দীর্ঘ ১৮ বছর কুষ্ঠরোগ ভোগ করার পর আরোগ্য লাভ করেছিলেন আশুরার দিন। হজরত ইউনুস (আ.) ৪০ দিন মাছের পেটে থাকার পর মুক্তিলাভ করেন আশুরার দিন। ঘটনাক্রমে হজরত সোলায়মান (আ.) সাময়িক রাজত্বহারা হন। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে আবারও রাজত্ব ফিরিয়ে দেন আশুরার দিনে।
আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার অনুসারী বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্ত করে পানির মধ্যে রাস্তা তৈরি করে দিয়ে পার করে দেন এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ সাগরে ডুবিয়ে মারেন আশুরার দিন। হজরত মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিলেন আশুরার দিনে। এ দিনে হজরত ঈসার (আ.) জন্ম হয় এবং ইহুদিরা তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ফেরেশতা কর্তৃক সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেন এ দিনেই। দাবি করা হয়, কাবা শরিফ সর্বপ্রথম গিলাফ দ্বারা আবৃত করা হয়েছিল আশুরার দিন।
এই পৃথিবীর অস্তিত্বের সঙ্গেও আশুরার দিনের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। আশুরার দিনেই আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন আকাশমালা, জগৎ, পর্বতরাজি, লওহ-কলম ও ফেরেশতাদের। আশুরার দিনে আল্লাহ নিজ আরশে আজিমে অধিষ্ঠিত হন। এভাবে পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ দিনের সম্পর্ক।
আশুরার দিনটি যে কারণে বিশ্ব মুসলিমের কাছে অত্যন্ত স্মরণীয়, শিক্ষণীয় ও হৃদয়বিদারক তা হলো কারবালার ঘটনা। হজরত রাসুলুল্লাহর (সা.) দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) অন্যায়ের কাছে মাথানত না করে সত্যের জন্য সংগ্রাম করে কারবালার প্রান্তরে সপরিবারে শাহাদাতবরণ করে সর্বোচ্চ ত্যাগের অতুলনীয় আদর্শ রেখে গেছেন। আশুরার ঘটনাবলিতে রয়েছে মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু। আশুরার মহান শিক্ষাগুলো হলো :
১. আশুরার দিনটি মূলত বাতিলের পরাজয় এবং সত্যপন্থী, হকপন্থীদের বিজয় ও মুক্তির দিবস।
২. নবী ও তাঁদের অনুসারীদের ইতিহাস স্মরণপূর্বক আল্লাহর বিধান পালন ও বাস্তবায়নে অবিচলতা, দৃঢ়তা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা যথার্থমানের হতে হবে। তাহলেই কেবল আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সব বাতিল শক্তির মোকাবিলায় মুসলমানদের বিজয়ী করবেন।
৩. ইমান-আকিদাবিরোধী সব কার্যকলাপ বন্ধ করতে সচেষ্ট হতে হবে।
৪. ইসলাম সম্পর্কে যারা ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে, তাদেরকে সঠিক ধারণা প্রদান করতে হবে এবং ইসলামের সুমহান আদর্শের দিকে সবাইকে আহ্বান জানাতে হবে।
৫. সত্য ও ন্যায়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে বাতিলের মোকাবিলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
৬. আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব কাজে ত্যাগ এবং কোরবানির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
৭. সুযোগ থাকার পরও যেমন হজরত হোসাইনের (রা.) সাথিরা তাঁকে ছেড়ে না গিয়ে তাঁর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সঙ্গে থেকেছেন; তেমনি আমাদেরও উচিত সর্বদা সত্যপন্থীদের সমর্থন, সহযোগিতা ও সঙ্গে থাকা।
৮. ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে সার্বিক সফলতা অর্জনের জন্য নিজেরা ভালো আমল করা, সর্বপর্যায়ে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন এবং খোদাভীরু নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালানো।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।
আজ আলোচনা করব আশুরা সম্পর্কে। আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চার সম্মানিত মাসের প্রথম মাস মহররম, যাকে আরবের অন্ধকার যুগেও বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখা হতো। আবার হিজরি সনের প্রথম মাসও মহররম। শরিয়তের দৃষ্টিতে যেমন এ মাসটি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি এই মাসে সংঘটিত ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণও অনেক দীর্ঘ। আমরা দেখতে পাই, ইতিহাসের এক জ্বলন্ত সাক্ষী এই মহররম মাস। ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্রপাত হয় এ মাসে। শুধু উম্মতে মুহাম্মদিই নয়, বরং পূর্ববর্তী অনেক উম্মত ও নবীদের অবিস্মরণীয় ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল এই মাসে। আশুরা কী এবং কেন? পবিত্র কোরআন-হাদিস এ বিষয়ে কী বলছে? এবার জেনে নিন এ বিষয়ে।
মহররমের ফজিলত : নামকরণ থেকেই প্রতীয়মান হয় এ মাসের ফজিলত। মহররম অর্থ মর্যাদাপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ। যেহেতু অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য ও রহস্যময় তাৎপর্য নিহিত রয়েছে এ মাসকে ঘিরে, সঙ্গে সঙ্গে এ মাসে যুদ্ধবিগ্রহ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ছিল, এসব কারণেই এ মাসটি মর্যাদাপূর্ণ। তাই এ মাসের নামকরণ করা হয়েছে মহররম বা মর্যাদাপূর্ণ মাস। মহররম সম্পর্কে (যা আশহুরে হুরুমের অন্তর্ভুক্ত তথা নিষিদ্ধ মাস) পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা ১২। যেদিন থেকে তিনি সব আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত মাস। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোর সম্মান বিনষ্ট করে নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।’ (সুরা তাওবা : ৩৬)
অর্থাৎ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে আল্লাহ তায়ালা ১২টি মাস নির্ধারণ করে দেন। এর মধ্যে চারটি মাস বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। ওই চারটি মাস কী কী? এর বিস্তারিত বর্ণনা হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, হাদিসে উল্লিখিত হয়েছে, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, এক বছরে ১২ মাস। এর মধ্যে চার মাস বিশেষ তাৎপর্যের অধিকারী। এর মধ্যে তিন মাস ধারাবাহিকভাবে (অর্থাৎ জিলকদ, জিলহজ ও মহররম) এবং চতুর্থ মাস মুজর গোত্রের রজব মাস। (বুখারি-৪৬৬২, মুসলিম-১৬৭৯)।
আশুরা : মহররম মাস সম্মানিত হওয়ার মধ্যে বিশেষ একটি কারণ হচ্ছে আশুরা (মহররমের ১০ তারিখ)। এ বসুন্ধরার ঊষালগ্ন থেকে আশুরার দিনে সংঘটিত হয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ও হৃদয়বিদারক কাহিনি। এখানে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো। আশুরার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ঘটনা হচ্ছে হজরত মুসা (আ.) এর ফেরাউনের অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি লাভ। এই দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা চিরকালের জন্য লোহিত সাগরে ডুবিয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন ভ্রান্ত খোদার দাবিদার ফেরাউন ও তার বিশাল বাহিনীকে।
অনেকে মনে করেন, ফেরাউন নীলনদে ডুবেছিল। ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুযায়ী এই ধারণা ভুল। বরং তাকে লোহিত সাগরে ডুবিয়ে বিশ্ববাসীকে শিক্ষা দেওয়া হয়। এ ঘটনা ইমাম বুখারি (রহ.) তাঁর কিতাবে এভাবে বর্ণনা করেন, ‘হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) যখন হিজরত করে মদিনায় পৌঁছান, তখন তিনি দেখলেন যে মদিনার ইহুদি সম্প্রদায় আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন, আশুরার দিনে তোমরা রোজা রেখেছ কেন? তারা উত্তর দিল, এই দিনটি অনেক বড়। এই পবিত্র দিনে মহান আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন আর ফেরাউন ও তার বাহিনী কিবতি সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হজরত মুসা (আ.) রোজা রাখতেন, তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি। তাদের উত্তর শুনে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, হজরত মুসা (আ.) এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে অধিক হকদার। অতঃপর তিনি নিজে আশুরার রোজা রাখেন এবং উম্মতকে তা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন।’ (বুখারি-৩৩৯৭, মুসলিম-১১৩৯)
উপরিউক্ত হাদিসের আলোকে কয়েকটি বিষয় প্রতিভাত হয় : হজরত মুসা (আ.) অভিশপ্ত ফেরাউনের কবল থেকে আশুরার দিন রক্ষা পেয়েছিলেন। তা হাদিসের প্রায় সব গ্রন্থেই (বুখারি, মুসলিমসহ) পাওয়া যায়।
একটি প্রসিদ্ধ ভ্রান্তির অপনোদন : উল্লিখিত হাদিস থেকে আমরা এ কথাও বুঝতে পারলাম, আশুরার ঐতিহ্য আবহমানকাল থেকে চলে আসছে। অনেকেই না বুঝে অথবা ভ্রান্ত প্ররোচনায় পড়ে আশুরার ঐতিহ্য বলতে রাসুল (সা.) এর প্রিয়তম দৌহিত্র, জান্নাতের যুবকদের দলপতি হজরত হোসাইন (রা.) এর শাহাদাত ও নবী পরিবারের কয়েকজন সম্মানিত সদস্যের রক্তে রঞ্জিত কারবালার ইতিহাসকেই বুঝে থাকে। তাদের অবস্থা ও কার্যাদি অবলোকন করে মনে হয়, কারবালার ইতিহাসকে ঘিরেই আশুরার সব ঐতিহ্য, এতেই রয়েছে আশুরার সব রহস্য।
উপরোল্লিখিত হাদিসের আলোকে প্রতীয়মান হয়, আসলে বাস্তবতা কিন্তু এর সম্পূর্ণ বিপরীত। বরং আশুরার ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। হজরত হোসাইন (রা.) এর মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনার অনেক আগ থেকেই আশুরা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ও রহস্যঘেরা দিন। কারণ কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৬১ হিজরির ১০ মহররম। আর আশুরার রোজার প্রচলন চলে আসছে ইসলাম আবির্ভাবেরও বহুকাল আগ থেকে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে আবহমানকাল থেকে আশুরার দিনে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা যেমন অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি হিজরি ৬১ সনে আশুরার দিন কারবালার ময়দানের দুঃখজনক ঘটনাও মুসলিম জাতির জন্য অতিশয় হৃদয়বিদারক ও বেদনাদায়ক। প্রতিবছর আশুরা আমাদের এই দুঃখজনক ঘটনাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে এও বাস্তব যে এ ঘটনাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে না পেরে আজ অনেকেই ভ্রষ্টতা ও কুসংস্কারের অন্ধকারে নিমজ্জিত। যারা কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাকে ব্যথাভরা অন্তরে স্মরণ করে থাকেন, তারা কোনো দিনও চিন্তা করেছেন যে কী কারণে হজরত হোসাইন (রা.) কারবালার ময়দানে অকাতরে নিজের মূল্যবান জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তাই তো অনেকেই মনে করেন, জারি মর্সিয়া পালনের মধ্যেই কারবালার তাৎপর্য! হজরত হোসাইন (রা.) এর উদ্দেশ্য ও আদর্শ বাস্তব জীবনে অনুসরণ করাই হবে এ ঘটনার সঠিক মর্ম অনুধাবনের বহিঃপ্রকাশ। হজরত হোসাইন (রা.) ও রাসুলে করিম (সা.) এর প্রতি মহব্বত ও আন্তরিকতার একমাত্র পরিচায়ক।
আশুরার রোজা : মহররম মাসে রোজা রাখা সম্পর্কে অনেক বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন ওপরে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু বিশেষভাবে আশুরা, অর্থাৎ মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। একটি হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা উম্মতে মুহাম্মদির ওপর ফরজ ছিল। পরবর্তী সময়ে অবশ্যই ওই বিধান রহিত হয়ে যায় এবং তা নফলে পরিণত হয়। হাদিস শরিফে হজরত জাবের (রা.) সূত্রে বর্ণিত আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। এ বিষয়ে নিয়মিত তিনি আমাদের খবরাখবর নিতেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো, তখন আশুরার রোজার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও দিতেন না এবং নিষেধও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খবরাখবরও নিতেন না।’ (মুসলিম শরিফ-১১২৮)
বিশ্বের বিভিন্ন জাতির ইতিহাস কীভাবে এই দিনের সঙ্গে জড়িত, তার প্রতি দৃষ্টি দিলে সহজেই আমরা আশুরার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি। মানবজাতির আদি পিতা হজরত আদমকে (আ.) প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি, জান্নাতে অবস্থান, পৃথিবীতে প্রেরণ ও তওবা কবুলÑসবই আশুরার তারিখে সংঘটিত হয়।
হজরত নুহ (আ.) সাড়ে ৯০০ বছর তাওহিদের দাওয়াত দেওয়ার পরও যখন পথভ্রষ্ট জাতি আল্লাহর বিধান মানতে অস্বীকৃতি জানায়; তখন তাদের প্রতি নেমে আসে আল্লাহর গজব মহাপ্লাবন। এই মহাপ্লাবনের ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা পায় তারা, যারা আল্লাহ ও নবীর প্রতি বিশ্বাসী হয়ে হজরত নুহের (আ.) নৌকায় আরোহণ করে। ওই নৌকা ৪০ দিন পর জুদি পাহাড়ের পাদদেশে মাটি স্পর্শ করে ঐতিহাসিক আশুরার দিন।
এ দিনেই হজরত ইবরাহিমের (আ.) জন্ম, ‘খলিলুল্লাহ’ উপাধিতে ভূষিত ও নমরুদের অগ্নি থেকে রক্ষা পান। হজরত ইদরিসকে (আ.) বিশেষ মর্যাদায় চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয় আশুরার দিনে। সুদীর্ঘ ৪০ বছর পর হজরত ইউসুফের (আ.) সঙ্গে তাঁর পিতা হজরত ইয়াকুবের (আ.) সাক্ষাৎ যেদিন হয়, সে দিনটি ছিল আশুরার দিন।
নবী আইয়ুব (আ.) দীর্ঘ ১৮ বছর কুষ্ঠরোগ ভোগ করার পর আরোগ্য লাভ করেছিলেন আশুরার দিন। হজরত ইউনুস (আ.) ৪০ দিন মাছের পেটে থাকার পর মুক্তিলাভ করেন আশুরার দিন। ঘটনাক্রমে হজরত সোলায়মান (আ.) সাময়িক রাজত্বহারা হন। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে আবারও রাজত্ব ফিরিয়ে দেন আশুরার দিনে।
আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার অনুসারী বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্ত করে পানির মধ্যে রাস্তা তৈরি করে দিয়ে পার করে দেন এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ সাগরে ডুবিয়ে মারেন আশুরার দিন। হজরত মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিলেন আশুরার দিনে। এ দিনে হজরত ঈসার (আ.) জন্ম হয় এবং ইহুদিরা তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ফেরেশতা কর্তৃক সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেন এ দিনেই। দাবি করা হয়, কাবা শরিফ সর্বপ্রথম গিলাফ দ্বারা আবৃত করা হয়েছিল আশুরার দিন।
এই পৃথিবীর অস্তিত্বের সঙ্গেও আশুরার দিনের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। আশুরার দিনেই আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন আকাশমালা, জগৎ, পর্বতরাজি, লওহ-কলম ও ফেরেশতাদের। আশুরার দিনে আল্লাহ নিজ আরশে আজিমে অধিষ্ঠিত হন। এভাবে পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ দিনের সম্পর্ক।
আশুরার দিনটি যে কারণে বিশ্ব মুসলিমের কাছে অত্যন্ত স্মরণীয়, শিক্ষণীয় ও হৃদয়বিদারক তা হলো কারবালার ঘটনা। হজরত রাসুলুল্লাহর (সা.) দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) অন্যায়ের কাছে মাথানত না করে সত্যের জন্য সংগ্রাম করে কারবালার প্রান্তরে সপরিবারে শাহাদাতবরণ করে সর্বোচ্চ ত্যাগের অতুলনীয় আদর্শ রেখে গেছেন। আশুরার ঘটনাবলিতে রয়েছে মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু। আশুরার মহান শিক্ষাগুলো হলো :
১. আশুরার দিনটি মূলত বাতিলের পরাজয় এবং সত্যপন্থী, হকপন্থীদের বিজয় ও মুক্তির দিবস।
২. নবী ও তাঁদের অনুসারীদের ইতিহাস স্মরণপূর্বক আল্লাহর বিধান পালন ও বাস্তবায়নে অবিচলতা, দৃঢ়তা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা যথার্থমানের হতে হবে। তাহলেই কেবল আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সব বাতিল শক্তির মোকাবিলায় মুসলমানদের বিজয়ী করবেন।
৩. ইমান-আকিদাবিরোধী সব কার্যকলাপ বন্ধ করতে সচেষ্ট হতে হবে।
৪. ইসলাম সম্পর্কে যারা ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে, তাদেরকে সঠিক ধারণা প্রদান করতে হবে এবং ইসলামের সুমহান আদর্শের দিকে সবাইকে আহ্বান জানাতে হবে।
৫. সত্য ও ন্যায়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে বাতিলের মোকাবিলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
৬. আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব কাজে ত্যাগ এবং কোরবানির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
৭. সুযোগ থাকার পরও যেমন হজরত হোসাইনের (রা.) সাথিরা তাঁকে ছেড়ে না গিয়ে তাঁর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সঙ্গে থেকেছেন; তেমনি আমাদেরও উচিত সর্বদা সত্যপন্থীদের সমর্থন, সহযোগিতা ও সঙ্গে থাকা।
৮. ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে সার্বিক সফলতা অর্জনের জন্য নিজেরা ভালো আমল করা, সর্বপর্যায়ে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন এবং খোদাভীরু নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালানো।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।