পর্ব (৩)

আমেরিকার স্বাধীনতার ইতিহাস, একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৩, ১৩:০৯ , চলতি সংখ্যা
অনেকে হয়তো জানেন না, হাইতি লাতিন আমেরিকান প্রথম দেশ, যারা স্বাধীন হয়েছিল। ১৮০৪ সালে ফরাসি ঔপনিবেশকারীদের বিরুদ্ধে তাদের এই স্বাধীনতা ছিল কালো ক্রীতদাসদের ত্যাগ ও বীরত্বের ফসল। আমেরিকা জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে ১৭৭৬ সালে যখন স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, তখন তাদের হয়ে হাইতিয়ানরাও লড়াই করেছিল। ১৮৬১-৬৫ পর্যন্ত আমেরিকান সিভিল ওয়ারের সময় সাউথে যখন শ্বেতাঙ্গদের প্রচণ্ড আগ্রাসন, তখন বহু কালো মানুষ পালিয়ে হাইতি চলে গিয়েছিল। ‘হাইতি’ নামটাই আমেরিকার বহু কালো মানুষের আশা আর প্রেরণার প্রতীক। যদিও রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে স্বাধীনতার এত বছর পরও দেশটি এই অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হিসেবে পরিচিত।

একটা সময় ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর শ্বেতাঙ্গরা চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করত। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রই প্রথম মানুষ, যিনি আমেরিকায় কালো মানুষের প্রতি বৈষম্যের জন্য ১৯৫৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে সিভিল রাইটস মুভমেন্ট শুরু করে প্রতিবাদ করেন। ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটনে এক সভায় কিং তার ভাষণে বলেছিলেন, ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম।’ সেখানে তিনি নাগরিক ও অর্থনৈতিক অধিকার এবং বর্ণবাদের সমাপ্তির কথা বলেছিলেন। তার এই ভাষণ জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক স্মরণীয় ঐতিহাসিক ভাষণ। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সাদা-কালোর দূরত্ব পরিবর্তিত। মানুষ এখন বর্ণবৈষম্য থেকে সরে এসে যোগ্যতার বিচারে মানুষকে ভাবতে শুরু করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একের পর এক সন্ত্রাসী কায়দায় গুলি, হত্যা, প্রাণঘাতীর ঘটনা ঘটছে। শিক্ষার পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তুলছে এক শ্রেণি। এরই মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছে টেক্সাসে। ২৪ মে ২০২২ টেক্সাসের উভালদে এলাকায় একটি এলিমেন্টারি স্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় ২১ জন নিহত হন, তাদের মধ্যে ১৮ জনই শিশু। যুক্তরাষ্ট্রে গত ১০ বছরের মধ্যে স্কুলে সংঘটিত এটিই সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা।

১৪ মে ২০২২ নিউইয়র্কে একটি মুদি দোকানে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করে ১৮ বছরের এক কিশোর। নিজেকে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ঘোষণা দিয়ে আফ্রিকান-আমেরিকান অধ্যুষিত এলাকাটিতে হামলা চালিয়েছিল। টেক্সাসের হামলার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ৩১ মে লুইজিয়ানায় একটি স্কুলের সমাবর্তন অনুষ্ঠানস্থলে গুলিতে এক নারী এবং আরও দুজন গুরুতর আহত হন। অন্যদিকে ১৬ মে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি চার্চের দরজায় দাঁড়িয়ে নির্বিচারে গুলি চালায় এক বন্দুকধারী। এতে ১০ জন নিহত ও ৫ জন আহত হন।

যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত বন্দুক হামলা ও তাতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও সেখানে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন এখনো কঠোর করা হয়নি। মার্কিন কংগ্রেসে এ বিষয়ে কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে সেগুলো।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০২০ সালে দেশটিতে ১৯ হাজার ৩৫০টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্র পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেন, দেশজুড়ে বাবা-মায়েরা সন্তানদের বিছানায় শুয়ে দিয়ে বিভিন্ন গল্প শোনান। ঘুমপাড়ানি গান শোনান, কিন্তু তাদের মনের মধ্যে অনিশ্চয়তা চলতে থাকে! কাল সন্তানদের স্কুলে দিয়ে আসার পর, মুদি দোকানে নিয়ে যাওয়ার পর কিংবা অন্য যেকোনো জনপরিসরে রেখে আসার পর কী ঘটবে! তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন তারা।

বারাক ওবামা আরও বলেন, ‘স্যান্ডি হুকের ঘটনার প্রায় ১০ বছর এবং বাফেলোর ঘটনার ১০ দিন পর আমাদের দেশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। আতঙ্কে নয়, বরং আগ্নেয়াস্ত্রের পৃষ্ঠপোষক এবং একটি রাজনৈতিক দলের কারণে এমনটা হয়েছে। তারা এসব মর্মান্তিক ঘটনা ঠেকাতে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার আগ্রহ দেখায়নি।’

২০১৫ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব ছাড়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বিবিসিকে ওবামা বলেন, তার প্রশাসন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে সংস্কার আনতে ব্যর্থ হয়েছে। একে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের মেয়াদকালের সবচেয়ে বড় হতাশা বলে উল্লেখ করেছিলেন। বিবিসির জন সোপেলকে তিনি বলেছিলেন, ‘এ ইস্যুর সমাধান না করতে পারাটা আমাদের জন্য কষ্টকর।’
১৯১৮ সালে ফ্লোরিডার স্কুলে গুলিবর্ষণ থেকে বেঁচে যাওয়া এক ছাত্রী শক্তিশালী ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের (এনআরএ) সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বন্দুকবিরোধী এক শোভাযাত্রায় এমা গঞ্জালেস নামের এই স্কুলছাত্রী বলে, ‘প্রতিটি রাজনীতিবিদ এনআরএ থেকে অর্থ নিচ্ছেন। অর্থের বিনিময়ে তারা অপরাধীদের কিনে ফেলেছে। আপনাদের জন্য লজ্জা হয়। নির্বাচনী প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন অস্ত্রনির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সহায়তা নিয়েছেন।’ বিক্ষোভকারীদের সামনে বক্তব্য দেওয়ার সময় ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে সে বলে, ‘আপনার জন্য আমাদের লজ্জা হয়।’

তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে। মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে সরকারি হিসাব দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে সেটি আরও বেশি বলে ধারণা করা হয়। তার চেয়েও আশঙ্কার বিষয় মূল্যবৃদ্ধির এই ধারা থামার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। তাই প্রশ্ন উঠছে, মূল্যস্ফীতি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে? দ্রব্যমূল্য কি বাড়তেই থাকবে?

অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করছেন, অর্থনৈতিক মন্দার ভেতর দিয়েই এ মূল্যস্ফীতির অবসান হতে পারে। আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সুদের হার বাড়ানো শুরু করেছে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অনেক অর্থনীতিবিদ ধারণা করছেন। এর ফলে জ্বালানির দাম বেড়ে গিয়েছে।
৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ৮.৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় দেশবাসীকে কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেননি দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, বরং তিনি সতর্ক করে বলেছেন, মূল্যস্ফীতি দীর্ঘায়িত হতে পারে।
গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বাইডেন বলেছেন, আমাদের আরও কিছুদিন এই মূল্যস্ফীতি নিয়েই চলতে হবে। এই সংকট ক্রমে কমে আসবে, তবে তার আগে কিছু সময় আমাদের এটি সহ্য করতেই হবে। ৪ জুলাই ২০২৩-এ উদ্্যাপিত যুক্তরাষ্ট্রের ১৪৭তম স্বাধীনতা দিবসে জনগণ প্রত্যাশা করে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার প্রশাসন যেন মূল্যস্ফীতির লাগাম শক্ত হাতে ধরেন এবং সুদের হার আর না বাড়িয়ে একটি সীমার মধ্যে রাখেন।
৪ জুলাই ছিল আমেরিকার মহান স্বাধীনতা দিবস। এ বছর দিনটি পড়ে মঙ্গলবার। গত ২৪৬ বছর ধরে ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। এবার ২৪৭তম স্বাধীনতা দিবসও মহা ধুমধামে প্যারেড, মেসির আতশবাজি, পিকনিক, বারবিকিউ পার্টি, কনসার্ট ইত্যাকার বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করা হয়।

তবে একুশ শতকের পৃথিবীতে এসে কি আমেরিকার কোনো গুণগত পরিবর্তন এসেছে? কিন্তু না! একুশ শতকে এসে তাকে নতুন হুমকির মুখে পড়তে হলো। আর সে হুমকি এল এমন লোকদের হাতে, যারা দেশের মানুষের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছিল। প্রজাতন্ত্র রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেও তাদের হাতেই ঘটল অবিশ্বাস্য হামলা। ৬ জানুয়ারি ২০২১-এ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে আক্রান্ত হলো ওয়াশিংটন ডিসির কংগ্রেস ভবন, যার লক্ষ্য ছিল নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি। নির্বাচিত না হয়েও তিনি চেয়েছিলেন দেশের ক্ষমতাভার নিজের হাতে ধরে রাখতে।
আজ যারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা যতই গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের কথা বলছেন। সেমিনার, সিম্পোজিয়াম অথবা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তাদের নেতৃত্বে বিশ্ব বসবাসের অযোগ্য একটি গ্রহে পরিণত হচ্ছে, যা বড়ই অশনিসংকেত! সাম্য ও সুবিচার তথা জাস্টিস অ্যান্ড ইকুয়িটি বলে যারা গলাবাজি করছেন, তারাই জুলুম ও গোষ্ঠীতন্ত্রের দিকে পৃথিবীকে নিয়ে যাচ্ছেন।
দেশে দেশে আজ ধর্ম ও বর্ণের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে চতুরতার সঙ্গে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে লাখ লাখ মানুষ নিজের বাস্তুভিটা ত্যাগ করে অজানার পথে পাড়ি জমাচ্ছে, আর ভূমধ্যসাগর কিংবা নাফ নদীর তীরে অসংখ্য আয়লানের লাশ মুখ থুবড়ে পড়ে থাকছে। বিশ্ব মোড়লরা এসব জালিম শাসককে পৃষ্ঠপোষকতা করছে শুধু সম্পদ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত ও বৃদ্ধি করার জন্য।

বিভিন্ন দেশ ক্রমান্বয়ে বর্ণবাদ, সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার দিকেই ধাবিত হচ্ছে এবং তাদের নেতৃত্বে গোটা বিশ্বই একধরনের অসহিষ্ণুতার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সেটি বিশ্বের শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থায়িত্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।

তবে আমেরিকার স্বাধীনতাযুদ্ধের ফল ছিল সুদূরপ্রসারী। জনগণের সার্বভৌমত্বের আদর্শকে ভিত্তি করে প্রথম সৃষ্টি হয় এক নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থাÑগণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।

এবার আমেরিকার শাসনব্যবস্থার দিকে সামান্য দৃষ্টি দেওয়া যাক। ১৭৮৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন করা হয় এবং ১৭৮৯ সালের ৪ মার্চ থেকে এটি কার্যকর করা হয়। আমেরিকার সংবিধানে শুধু মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা, কথা বলা, লেখার-চিন্তার অধিকার সংরক্ষণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসা হচ্ছে। তা ছাড়া বিশ্বের যেকোনো অঞ্চলের নির্যাতিত মানুষের নিরাপদ এবং নতুন স্বপ্ন রচনার আশ্রয়দাতা হিসেবে আমেরিকার দায়িত্বকে মেনে নেওয়া হয়েছে। জর্জ ওয়াশিংটন থেকে শুরু করে সব প্রেসিডেন্ট আমেরিকার সংবিধানের মহান শর্তগুলোর প্রতি সম্মান দেখিয়ে এলেও আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই অঙ্গীকার থেকে দূরে সরে আসার জন্য হেন চেষ্টা নেই, যা তিনি করেননি। আমেরিকার ইতিহাস, ঐতিহ্য, মহানুভবতা সব জলাঞ্জলি দিয়ে, নিজের ইমিগ্র্যান্ট ব্যাকগ্রাউন্ড ভুলে গিয়ে তিনি আমেরিকা থেকে যেনতেন প্রকারে ইমিগ্র্যান্ট বিতাড়নের ব্রত গ্রহণ করেছিলেন। এ কাজটি তিনি ক্ষমতায় বসার দিন থেকেই একনিষ্ঠ মনে করে যাওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছেন। এ জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, তা করতে একটুও দ্বিধা করেননি। প্রশাসনে যাকে বসানোর বসিয়েছেন, যাকে বিদায় দেওয়ার বিদায় দিয়েছেন। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তুলে ইমিগ্র্যান্ট ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তার সব প্রচেষ্টাই ইমিগ্র্যান্ট-বিরোধী ছিল।

বিশ্বের সর্বপ্রাচীন প্রজাতন্ত্রটি যে এখনো গণতন্ত্রবিরোধীদের হাত থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত নয়, সে কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ‘আমাদের গণতন্ত্র আক্রমণের মুখে, তাকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের’Ñএবারের স্বাধীনতা দিবসের আগে এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেছেন। এই ‘আমাদের’ বলতে বাইডেন শুধু দেশটির ককেশীয় শ্বেতকায় নাগরিকদের কথা বোঝাননি। আমরা মানে, এ দেশের ৪০ শতাংশ অশ্বেতাঙ্গও রয়েছে, যার অন্তর্গত আমরা, আমেরিকান-বাংলাদেশিরাও। এই দেশে আমরা নবাগত, সংখ্যায় এখনো নগণ্য। তা সত্ত্বেও এই গণতন্ত্র রক্ষায় আমাদের ভূমিকা রয়েছে। দেশটিকে আমরা আমাদের নতুন বাসভূমি হিসেবে নির্বাচন করেছি শুধু এ জন্য নয়, এখানে আমাদের জন্য সমৃদ্ধির বন্ধনহীন ‘সুযোগ’ রয়েছে। আমাদের নির্বাচনের কারণ দেশটির গণতান্ত্রিক চরিত্র। নানা প্রশ্নে তার যে অসংগতি রয়েছে, নিত্য লড়াইয়ের ভেতর দিয়ে সে নিজেই তার সমাধান করায় লিপ্ত। আমরা আকৃষ্ট হয়েছি তার সেই মূল্যবোধের প্রতি, আমরা গর্ববোধ করছি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি সমানাধিকার তার প্রতিশ্রুতির। (ঠিকানা : জুলাই ২০১৯)।

সুখের কথা, নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশি-আমেরিকানরা ওই ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেনি। তারা শুধু এ দেশে শিক্ষা গ্রহণ করে কর্মজীবনে সাফল্য লাভ করছে তা নয়, দেশটির রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তারা নিজেদের সম্পৃক্ত করে নিয়েছে। সম্প্রতি নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত বাছাইপর্বের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করে, তাদের মধ্যে অনেকজন লক্ষণীয় বিজয় অর্জন করে আমেরিকার বুকে আমাদের মানচিত্রটি গাঁথার গুরুত্বপূর্ণ কাজটির সূচনা করেছে।

১৯১৬ সালে ইতালীয় সমাজতাত্ত্বিক ও অর্থনীতিবিদ ভিলফ্রেডো প্যারেট্রো তার ‘মাইন্ড অ্যান্ড সোসাইটি’ নামক বইয়ে লিখেছেন, ‘হিস্টি ইজ দ্য গ্রেভইয়ার্ড অব দ্য অ্যারিস্টোক্র্যাটস।’ অর্থাৎ ইতিহাস হলো অভিজাতদের সমাধিক্ষেত্র। তিনি তার বইয়ের আরেকটি অধ্যায়ে বলেন, ‘ভয় ও ক্ষমতা দিয়ে মানুষ ও সমাজে প্রভাব না ফেলে ভালোবাসা ও সুকর্ম দিয়ে মানুষ ও সমাজের ওপর প্রভাব ফেলতে হয়। তাহলে সারা জীবন সমাজের মানুষের মনে বেঁচে থাকা যায়। ক্ষমতা যদি ক্ষমতাবান ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ক্ষমতাহীন করতে পারে, সেই ক্ষমতাই হলো প্রকৃত ক্ষমতা। আর ক্ষমতা যদি ক্ষমতাবানকে ক্ষমতাশীল করে, তাহলে সে অত্যাচারী শাসক হতে বাধ্য। প্যারেট্রোর কথার রেশ ধরে বলতে চাই, আমরা যেন লোভে পড়ে অন্যায়ভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নিজেরাই নিজেদের সমাধি রচিত না করি। সংখ্যাগরিষ্ঠের জোরে আইন করে ক্ষমতা স্থায়ী করা যায় কিন্তু সেই ক্ষমতার নৈতিক ভিত্তি থাকে না। বিশ্ববাসী মুসোলিনিকে মনে রেখেছে একজন ফ্যাসিস্ট হিসেবে। আবার বিশ্ববাসী আব্রাহাম লিংকনকে মনে রেখেছে একজন মহান ও জনগণতান্ত্রিক নেতা হিসেবে। এই দুজন ব্যক্তিকে মনে রাখার মধ্যে ফারাক বিস্তীর্ণ।

পরিশেষে বলব, আমাদের প্রার্থনা হবে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেতনা ফিরে আসুক আমেরিকার মহান স্বাধীনতা দিবসের আদর্শের আলোয় এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি সমানাধিকারে তার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হোক। আমেরিকা ইমিগ্র্যান্টের দেশÑসেই বার্তা নতুন করে ঘোষিত হোক। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার পূর্বসূরি রাজনীতিবিদদের অবদান ও ত্যাগের কথা স্মরণ করবেন এবং আমেরিকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। আজকের আমেরিকা বিনির্মাণের পেছনে ইমিগ্র্যান্ট সমাজের ভূমিকাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখবেন।

লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক। প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, নুরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজ, সিলেট। পিএইচডি ফেলো, নিউইয়র্ক।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041