ঢাকার শাজাহানপুরে যুবলীগ নেতা হত্যা

যুক্তরাষ্ট্র থেকে খুনের নির্দেশ দেয় নিবিড়

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৩, ১১:১৪ , চলতি সংখ্যা
রাজধানী ঢাকার শাজাহানপুরের গুলবাগে যুবলীগ নেতা অলিউল্লাহ রুবেলকে হত্যার নির্দেশ যায় যুক্তরাষ্ট্র  থেকে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নিবিড় এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ও নির্দেশদাতা। সে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রুবেলকে হত্যার জন্য কিলার হাবিব আহসানকে নির্দেশ দেয়। নিবিড়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, হাবিব খিলগাঁও বাজার থেকে দুটি চাপাতি কেনে। পরে রুবেলের অবস্থান শনাক্তের পর এক সহযোগীসহ তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে আহত করে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ফুটপাতে চাঁদাবাজি ও গত কোরবানির হাটের টাকার ভাগ না দেয়াকে কেন্দ্র করেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। গ্রেফতারের পর আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়া হাবিব আহসান।
গত ২০ জুলাই বাংলাদেশ সময়  রাত সোয়া একটার দিকে শাজাহানপুরের গুলবাগ জোয়ারদার লেনে স্থানীয় যুবলীগ নেতা অলিউল্লাহ রুবেলকে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় অলিউল্লাহ রুবেলের স্ত্রী তানজিনা বাদী হয়ে শাজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 
গত ২২ জুলাই পৃথক অভিযানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সন্দেহভাজন ৮ জনকে ও র‌্যাব ২ জনকে গ্রেফতার করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিবির হাতে গ্রেফতার হওয়া আসামিরা হচ্ছে- হাবিব আহসান, আলিফ হোসাইন, রবিউল সানি,  মেহেদী হাসান, শাহজালাল, রফিকুল ইসলাম, নুর আলম ও সুমন মীর। 
অপরদিকে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকা থেকে আদনান আসিফ ও শাকিল নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।
ডিবির হাতে গ্রেফতার হওয়া ৮ আসামির মধ্যে সরাসরি খুনে অংশ নেয়া হাবিব আহসান ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোশাররফ হোসেনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বাকি ৭ আসামির ৪ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হাবিব আহসান জানায়, সে প্রায় আড়াই বছর ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। শাজাহানপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি অদিতের সঙ্গে চলাফেরা করতো। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নিবিড়, শাহজালাল ও অলিউল্লাহ রুবেল একসঙ্গে চলাফেরা করতো। এরা তিনজন একসঙ্গে ফুটপাত থেকে চাঁদা তুলতো, মালিবাগ এলাকায় চাঁদাবাজি করতো। কোরবানির সময় একসঙ্গে ছাগলের হাট বসাতো। গত কোরবানির ঈদে অলিউল্লাহ রুবেল ‘পল্টি’ নেয়। সে একাই ছাগলের হাট করে। সে নিবিড় ও শাহজালালকে কোন ভাগ দেয়নি। এ নিয়ে তাদের তিনজনের মধ্যে ঝগড়া ও মনোমালিন্য হয়।
হাবিব আহসান তার জবানবন্দিতে আরো বলেছে- গত কোরবানির ঈদের সময় নিবিড় ও শাহজালাল একত্রে অলিউল্লাহ রুবেলকে কোপানোর সিদ্ধান্ত নেয়। নিবিড় তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে ফোন করে রুবেলকে কোপানোর দায়িত্ব দেয় তাকে (হাবিব আহসান)। এজন্য চাপাতি কিনতে ৪ হাজার টাকাও দেয়।
হাবিব আহসান জানায়, ‘আমি খিলগাঁও বাজার থেকে দুটি চাপাতি কিনি। গত ২০ জুলাই অলিউল্লাহ রুবেলকে কোপানোর জন্য ঠিক করি। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অনন আমাকে তথ্য দেয় যে, অলিউল্লাহ রুবেল বেক্সিন গলিতে আড্ডা দিচ্ছে। এরপর থেকে আমরা আবুজর গিফারী কলেজের সামনে অপেক্ষা করছিলাম। আমার সঙ্গে আলিফ ছিল। রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে অনন আবারও জানায় যে, অলিউল্লাহ রুবেল ঘটনাস্থলের (জোয়ারদার লেন) দিকে যাচ্ছে। তখন আমি ও আলিফ ঘটনাস্থলে  অপেক্ষা করতে থাকি। রাত ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে রুবেল ঘটনাস্থলে আসলে আলিফ তাকে একটা কোপ মারে, এরপর আমি কোপ মারি। এভাবে ৭-৮টি কোপ মারি। এরপর দৌঁড়ে পালানোর সময় আমার বন্ধু রবিউল সানি ও মেহেদী হাসানের সঙ্গে দেখা হয়।’
হাবিব আহসান আদালতকে জানায়, ‘সানি, মেহেদী ও আলিফকে একটি সিএনজিতে করে শনির আখড়ায় পাঠিয়ে দেই। আমি সুমনের বাইকে করে পালিয়ে যাই।’
হত্যায় অংশ নেয়া হাবিব জবানবন্দিতে উল্লেখ করে, ‘কোরবানির ঈদের আগে নিবিড় আমেরিকা যায়। আমেরিকা থেকে সে আমাকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে অলিউল্লাহ রুবেলকে কোপানোর দায়িত্ব দেয়। ঘটনার এক ঘণ্টা আগেও হোয়াটসঅ্যাপে নিবিড়ের সঙ্গে আমার কথা হয়। আর  ঘটনার এক ঘণ্টা পর শাহজালাল আমার সঙ্গে দেখা করে। এরপর শাহাজালাল ও আমার বড় ভাই আরিফের মাধ্যমে অলিউল্লাহ রুবেল মারা গেছে বলে জানতে পারি।’
কে এই নিবিড় : শাজাহানপুরে আলোচিত যুবলীগ নেতা রুবেল হত্যা ঘটনার নির্দেশদাতা নিবিড়ও ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। সে সর্বশেষ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ছিল। তার বাবা মৌচাক মার্কেটের মালিক আবুল হোসেন। মালিবাগ ও মৌচাকসহ শাজাহানপুরের বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজির অন্যতম হোতা এই নিবিড়। মূলত চাঁদাবাজির ভাগ নিয়েই যুবলীগ নেতা অলিউল্লাহ রুবেলের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, নিবিরের বড় ভাই আবীর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। নিবিড় মাঝে মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বড় ভাইয়ের বাসায় থাকে। দেশে তার একটি ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। সেই ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে সে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সভাপতি মেহেদীর অনুসারী নিবিড় এখনও মালিবাগ ল কলেজের পাশের বাজার থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলে বলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান। তার অন্যতম সহযোগী শাহজালাল শাজাহানপুরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা রানার অনুসারী। তাদের প্রভাবে শাহজালালও এলাকায় বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে থাকে।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041