
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক কনজারভেটিভ রাজনৈতিক কর্মী ও সংগঠন এবং ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসের প্রতিষ্ঠাতা চার্লি কার্ক (৩১) গত ১০ সেপ্টেম্বর ইউটা রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সংগঠন আয়োজিত এক সমাবেশে (২৫০০/৩০০০) আততায়ীর গুলিতে নিহত হন, যা সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মহল ও মিডিয়ায় স্পটলাইট হয়ে উঠতে দেখা যায়। চার্লি কার্ক যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার ‘আমেরিকান কামব্যাক ট্যু’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই ক্যাম্পাসের সমাবেশে যোগ দেন।
তার হত্যাকারী আততায়ী টাইলার রবিনসনকে (২২) তার পরিবারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। হত্যার মোটিভ হিসেবে রবিনসন চার্লি কার্কের কথিত হেইটসূচক বক্তব্য ও তৎপরতাকে দায়ী করে। হত্যার ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত একটি চিরকুটে লেখা ছিল, Hey Fascist, Catch it। অর্থাৎ তুমি একটা ফ্যাসিস্ট, তোমার এটাই প্রাপ্য। তার হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টিকে একটি হটবাটন ইস্যুতে পরিণত করে।
চার্লি কার্কের পডকাস্ট চার্লি কার্ক শো যুক্তরাষ্ট্রের কনজারভেটিভ শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী মহলে ব্যাপক জনপ্রিয় একটি আলোচনা অনুষ্ঠান, যেখানে তিনি প্রতিদিন অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে খ্রিষ্ট ধর্মের মাহাত্ম্য ও এই ধর্মের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, যেমন অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট, মুসলমান, ইসলাম ধর্ম, রেইস, অপরাধ এবং ডেমোক্র্যাটিক তথা অতি বামধারার (Radical Left) রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির তীব্র সমালোচনামূলক বক্তব্য রাখেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর তার শেষকৃত্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ বহু রিপাবলিকান নেতা ও লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেন, যা শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীল জনগোষ্ঠীর মধ্যে তার বিপুল জনপ্রিয়তার প্রমাণ বহন করে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ অনেক রিপাবলিকান নেতা চার্লি কার্ক হত্যার তীব্র নিন্দা করে এই হত্যার জন্য ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করার প্রয়াস পান। তার মতে, অধিকাংশ সহিংসতার জন্য Radical Left দায়ী, যদিও যারা অপরাধের বিস্তার রোধ এবং দমনের পক্ষে সোচ্চার, সেসব সহিংসতার দায় তারা অবলীলায় তাদের চাপিয়ে দিতে পছন্দ করে। চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল জনগোষ্ঠীকে বিশেষভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করে, যদিও এর বিপরীতে কিছু মানুষকে তার হত্যাকাণ্ডের যৌক্তিকতা তুলে ধরে হত্যার নিন্দা না করে তাদেরকে একপ্রকারের উল্লাস ব্যক্ত করতে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি টিভি চ্যানেলে জনৈক সংবাদ বিশ্লেষক চার্লি কার্ক হত্যার নিন্দা না করে তিনি তার বিরুদ্ধে জনমানুষের মধ্যে পারস্পরিক ঘৃণা ও বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ করেন এবং এ কারণে তাদের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলার প্রয়াস পান। তার এহেন বক্তব্য কার্ক সমর্থক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিলে টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তাকে সংবাদ বিশ্লেষকের চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। অনেকটা একই কারণে এবিসি টিভির ‘জিমি কিমেল শো’ বাতিল করা হয়। কেউ কেউ এসব পদক্ষেপের পেছনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হাত রয়েছে বলে ধারণা করেন। প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট ক্যারেন আতিয়া চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সমাজমাধ্যমে নেতিবাচক পোস্ট দেওয়ায় পত্রিকা কর্তৃপক্ষ তাকে বরখাস্ত করে।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রায়ই অধিকাংশ মিডিয়া তার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অপপ্রচারে লিপ্ত অভিযোগ করে এই ধারা অবিলম্বে বন্ধ না হলে তিনি এসব মিডিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে হুমকি দেন। তা ছাড়া তার কথিত কিছু রাজনৈতিক শত্রু, যেমন সিনেটর অ্যাডাম শিফ, সাবেক এফবিআই ডিরেক্টর জেমস কমি, নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস প্রমুখের বিরুদ্ধেও অনুরূপ হুঁশিয়ারি উচ্চারণের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখা যায়। যৌন নিপীড়ক জেফরি এপস্টিনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথিত সম্পর্ক থাকার খবর প্রকাশ করায় মি. ট্রাম্প দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা করেন। মি, ট্রাম্প তাকে জড়িয়ে এপস্টিন-সংক্রান্ত খবরকে ভুয়া বলে দাবি করেন। লাগাতার অপপ্রচারের মাধ্যমে তার সুনাম ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে মি. ট্রাম্প দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ জাতীয় পদক্ষেপ ও তৎপরতা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন এবং এ কারণে বর্তমানে মতপ্রকশের স্বাধীনতা লাইনচ্যুত (Derail) হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে তাদের অনেকে বদ্ধমূল ধারণা ব্যক্ত করেন।
মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুস্পষ্ট গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, যা মার্কিন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার একটি অলঙ্ঘনীয় সুমহান ঐতিহ্যের অংশ। এই স্বাধীনতার ওপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ মার্কিন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অপরিমেয় সুনামকে ক্ষুণ্ন ও কালিমালিপ্ত করতেই কেবল সহায়ক হবে, যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়, যদিও একই সঙ্গে মতপ্রকাশে স্বাধীনতার যথেচ্ছ অপপ্রয়োগও কাম্য নয়, যেটা চার্লি কার্কের হত্যায় দু-চারজনের বক্তব্যে প্রকাশ পেতে দেখা যায়। বিভিন্ন ইস্যুতে চার্লি কার্কের অবস্থান ও বক্তব্যে কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করতেই পারেন; কিন্তু সে কারণে তার জীবনহরণ করা হবে এবং তার বক্তব্যের জন্য He deserves to die বলা অন্যায় ও অসংগত হবে। অপরদিকে কিছু রক্ষণশীল ব্যক্তি ও মহল যে ভাষায় এই হত্যাকে কেন্দ্র করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটাও অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য। উদাহরণস্বরূপ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এককালীন উপদেষ্টা ইলন মাস্ক তার এক পোস্টে উল্লেখ করেন, চরম বামধারার কর্মীরা যদি আমাদের (রক্ষণশীল) শান্তিতে থাকতে না দেয়, আমাদের উচিত হবে লড়াই করা বা মৃত্যুবরণ করা। অন্য একজন জানান, সব ডেমোক্র্যাটিক রাজনীতিককে অবশ্যই গ্রেফতার করা উচিত।
এটা সবার উপলব্ধি করা উচিত, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়, বরং তা বন্ধ করার উদ্যোগ এবং ভায়োলেন্সই ভায়োলেন্সের জন্ম দেয় এবং নিরাপদ মতপ্রকাশ (clashes of ideas safely) বরং গণতন্ত্রকে প্রাণবন্ত ও মজবুত করতেই সহায়ক হয়।
মার্কিন রাজনৈতিক ইতিহাসে অবশ্য রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা নতুন কোনো বিষয়ে নয়। যুক্তরাষ্ট্রে এ-যাবৎকাল পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত বহু রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় অন্তত চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিহত হন। তারা হলেন জেমস গারফিল্ড, উইলিয়াম ম্যাকিনলে, আব্রাহাম লিংকন এবং জন এফ কেনেডি। খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুবার হামলার মুখে পড়ে সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান।
পরিশেষে ফরাসি দার্শনিক ভল্টেয়ারের একটি বহুল উচ্চারিত উক্তি উল্লেখ করে লেখার ইতি টানছি। তিনি বলেন, ‘I may not agree with what you have to say, but I will defend to the death your night to say it.’ যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায়, ‘তোমার কথার সঙ্গে আমি একমত না হতে পারি; কিন্তু কথাটা বলার তোমার অধিকারকে আমি জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব।’
লেখক : কলামিস্ট
তার হত্যাকারী আততায়ী টাইলার রবিনসনকে (২২) তার পরিবারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। হত্যার মোটিভ হিসেবে রবিনসন চার্লি কার্কের কথিত হেইটসূচক বক্তব্য ও তৎপরতাকে দায়ী করে। হত্যার ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত একটি চিরকুটে লেখা ছিল, Hey Fascist, Catch it। অর্থাৎ তুমি একটা ফ্যাসিস্ট, তোমার এটাই প্রাপ্য। তার হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টিকে একটি হটবাটন ইস্যুতে পরিণত করে।
চার্লি কার্কের পডকাস্ট চার্লি কার্ক শো যুক্তরাষ্ট্রের কনজারভেটিভ শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী মহলে ব্যাপক জনপ্রিয় একটি আলোচনা অনুষ্ঠান, যেখানে তিনি প্রতিদিন অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে খ্রিষ্ট ধর্মের মাহাত্ম্য ও এই ধর্মের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, যেমন অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট, মুসলমান, ইসলাম ধর্ম, রেইস, অপরাধ এবং ডেমোক্র্যাটিক তথা অতি বামধারার (Radical Left) রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির তীব্র সমালোচনামূলক বক্তব্য রাখেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর তার শেষকৃত্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ বহু রিপাবলিকান নেতা ও লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেন, যা শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীল জনগোষ্ঠীর মধ্যে তার বিপুল জনপ্রিয়তার প্রমাণ বহন করে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ অনেক রিপাবলিকান নেতা চার্লি কার্ক হত্যার তীব্র নিন্দা করে এই হত্যার জন্য ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করার প্রয়াস পান। তার মতে, অধিকাংশ সহিংসতার জন্য Radical Left দায়ী, যদিও যারা অপরাধের বিস্তার রোধ এবং দমনের পক্ষে সোচ্চার, সেসব সহিংসতার দায় তারা অবলীলায় তাদের চাপিয়ে দিতে পছন্দ করে। চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল জনগোষ্ঠীকে বিশেষভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করে, যদিও এর বিপরীতে কিছু মানুষকে তার হত্যাকাণ্ডের যৌক্তিকতা তুলে ধরে হত্যার নিন্দা না করে তাদেরকে একপ্রকারের উল্লাস ব্যক্ত করতে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি টিভি চ্যানেলে জনৈক সংবাদ বিশ্লেষক চার্লি কার্ক হত্যার নিন্দা না করে তিনি তার বিরুদ্ধে জনমানুষের মধ্যে পারস্পরিক ঘৃণা ও বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ করেন এবং এ কারণে তাদের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলার প্রয়াস পান। তার এহেন বক্তব্য কার্ক সমর্থক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিলে টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তাকে সংবাদ বিশ্লেষকের চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। অনেকটা একই কারণে এবিসি টিভির ‘জিমি কিমেল শো’ বাতিল করা হয়। কেউ কেউ এসব পদক্ষেপের পেছনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হাত রয়েছে বলে ধারণা করেন। প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট ক্যারেন আতিয়া চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সমাজমাধ্যমে নেতিবাচক পোস্ট দেওয়ায় পত্রিকা কর্তৃপক্ষ তাকে বরখাস্ত করে।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রায়ই অধিকাংশ মিডিয়া তার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অপপ্রচারে লিপ্ত অভিযোগ করে এই ধারা অবিলম্বে বন্ধ না হলে তিনি এসব মিডিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে হুমকি দেন। তা ছাড়া তার কথিত কিছু রাজনৈতিক শত্রু, যেমন সিনেটর অ্যাডাম শিফ, সাবেক এফবিআই ডিরেক্টর জেমস কমি, নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস প্রমুখের বিরুদ্ধেও অনুরূপ হুঁশিয়ারি উচ্চারণের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখা যায়। যৌন নিপীড়ক জেফরি এপস্টিনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথিত সম্পর্ক থাকার খবর প্রকাশ করায় মি. ট্রাম্প দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা করেন। মি, ট্রাম্প তাকে জড়িয়ে এপস্টিন-সংক্রান্ত খবরকে ভুয়া বলে দাবি করেন। লাগাতার অপপ্রচারের মাধ্যমে তার সুনাম ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে মি. ট্রাম্প দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ জাতীয় পদক্ষেপ ও তৎপরতা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন এবং এ কারণে বর্তমানে মতপ্রকশের স্বাধীনতা লাইনচ্যুত (Derail) হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে তাদের অনেকে বদ্ধমূল ধারণা ব্যক্ত করেন।
মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুস্পষ্ট গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, যা মার্কিন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার একটি অলঙ্ঘনীয় সুমহান ঐতিহ্যের অংশ। এই স্বাধীনতার ওপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ মার্কিন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অপরিমেয় সুনামকে ক্ষুণ্ন ও কালিমালিপ্ত করতেই কেবল সহায়ক হবে, যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়, যদিও একই সঙ্গে মতপ্রকাশে স্বাধীনতার যথেচ্ছ অপপ্রয়োগও কাম্য নয়, যেটা চার্লি কার্কের হত্যায় দু-চারজনের বক্তব্যে প্রকাশ পেতে দেখা যায়। বিভিন্ন ইস্যুতে চার্লি কার্কের অবস্থান ও বক্তব্যে কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করতেই পারেন; কিন্তু সে কারণে তার জীবনহরণ করা হবে এবং তার বক্তব্যের জন্য He deserves to die বলা অন্যায় ও অসংগত হবে। অপরদিকে কিছু রক্ষণশীল ব্যক্তি ও মহল যে ভাষায় এই হত্যাকে কেন্দ্র করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটাও অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য। উদাহরণস্বরূপ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এককালীন উপদেষ্টা ইলন মাস্ক তার এক পোস্টে উল্লেখ করেন, চরম বামধারার কর্মীরা যদি আমাদের (রক্ষণশীল) শান্তিতে থাকতে না দেয়, আমাদের উচিত হবে লড়াই করা বা মৃত্যুবরণ করা। অন্য একজন জানান, সব ডেমোক্র্যাটিক রাজনীতিককে অবশ্যই গ্রেফতার করা উচিত।
এটা সবার উপলব্ধি করা উচিত, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়, বরং তা বন্ধ করার উদ্যোগ এবং ভায়োলেন্সই ভায়োলেন্সের জন্ম দেয় এবং নিরাপদ মতপ্রকাশ (clashes of ideas safely) বরং গণতন্ত্রকে প্রাণবন্ত ও মজবুত করতেই সহায়ক হয়।
মার্কিন রাজনৈতিক ইতিহাসে অবশ্য রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা নতুন কোনো বিষয়ে নয়। যুক্তরাষ্ট্রে এ-যাবৎকাল পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত বহু রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় অন্তত চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিহত হন। তারা হলেন জেমস গারফিল্ড, উইলিয়াম ম্যাকিনলে, আব্রাহাম লিংকন এবং জন এফ কেনেডি। খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুবার হামলার মুখে পড়ে সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান।
পরিশেষে ফরাসি দার্শনিক ভল্টেয়ারের একটি বহুল উচ্চারিত উক্তি উল্লেখ করে লেখার ইতি টানছি। তিনি বলেন, ‘I may not agree with what you have to say, but I will defend to the death your night to say it.’ যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায়, ‘তোমার কথার সঙ্গে আমি একমত না হতে পারি; কিন্তু কথাটা বলার তোমার অধিকারকে আমি জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব।’
লেখক : কলামিস্ট